Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নতুন গর্ভনর দায়িত্ব নেওয়ার ৫ দিনের মাথায় ঋণখেলাপিদের জন্য বড় ছাড়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৮ জুলাই ২০২২ ২২:৫৬

ঢাকা: নতুন গভর্নর হিসেবে আব্দুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার ৫ কার্যদিবসের মধ্যে ঋণখেলাপিদের জন্য ‘বড় ছাড়’ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, মাত্র আড়াই থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ পাচ্ছেন ঋণখেলাপিরা, যা আগে ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসব ঋণ ৫ থেকে ৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করা হলেও খেলাপি হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ সীমা ছিল দুই বছর।

সোমবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নতুন প্রজ্ঞাপনের তথ্য বলছে, ঋণ পরিশোধের এসব সুবিধা ছাড়াও এসব খেলাপিরা নতুন করে ঋণও নিতে পারবেন। আর ঋণখেলাপিদের এসব সুবিধা দেওয়ার পেছনে কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবকে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব, বহিঃবিশ্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধাবস্থা প্রলম্বিত হওয়ার কারণে উদ্ভূত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নতুনভাবে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ সংক্রান্ত নতুন নীতিমালা জারি করা হলো।

আরও পড়ুন- নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের দায়িত্ব গ্রহণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এ নীতিমালা ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনর্গঠনের ন্যূনতম মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকগুলো ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করবে, যা তাদের পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদিত হতে হবে। নীতিমালায় এ সার্কুলারে বর্ণিত শর্তের তুলনায় নমনীয় কোনো শর্ত যুক্ত করা যাবে না। যেসব গ্রাহক আর্থিকভাবে দুরবস্থায় রয়েছে অথবা গৃহীত ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ আদায়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে, এরকম ক্ষেত্রে যেন নিয়মমাফিক পুনঃতফসিলিকরণ বা পুনঃপুনঃ পুনঃতফসিল পরিহার করা যায়, সে লক্ষ্যেও নীতিমালায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে।

বিশেষ করে নীতিমালায় অনুৎপাদনশীল খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা উৎপাদনশীল খাতের অলাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ রাখতে বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ঋণগ্রহীতার দাখিল করা পুনঃতফসিলিকরণের আবেদনপত্র ব্যাংক কর্মকর্তাদের অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে ঋণ শ্রেণিকৃত হওয়ার কারণ উদ্ঘাটন করতে হবে। ঋণগ্রহীতা তহবিল অন্য কোথাও স্থানান্তর করলে বা তিনি অভ্যাসগত ঋণখেলাপি হলে তার পুনঃতফসিলিকরণের আবেদনপত্র বিবেচনা করতে না করা হয়েছে। বরং ওই ঋণ আদায়ে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও পড়ুন- নতুন গভর্নরের অগ্রাধিকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রিজার্ভ বাড়ানো

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোনো ঋণগ্রহীতা প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট নগদে পরিশোধ করে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের আবেদন করলে ব্যাংককে অবশ্যই আবেদনপত্র গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে তা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো গ্রাহক চেক, পে অর্ডার বা অন্য কোনো মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অর্থ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে পরিশোধ করলে ব্যাংক ওই মাধ্যম নগদায়নের পর পুনঃতফসিলিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করবে। ঋণগ্রহীতার ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের আবেদনপত্র দাখিলের আগের সময়ে নিয়মিত কিস্তি হিসেবে দেওয়া কোনো অর্থ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। তবে পুনঃতফসিলিকরণের উদ্দেশ্যে ঋণগ্রহীতার ব্যাংককে আগাম অবহিতকরণের অব্যবহিত তিন মাস তথা ৯০ দিন পর্যন্ত সময়ে জমা করা একীভূত অর্থ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে দেওয়া ছাড় উঠে যাওয়ার পর ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। নতুন করে অনেকে যুক্ত হয়েছেন ঋণখেলাপির তালিকায়। পাশাপাশি করোনার প্রভাব কাটাতে অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে যে এক লাখ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, তারও বড় একটা অংশ অনাদায়ী হয়ে পড়েছে। এ কারণেই এখন ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে চাইছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সারাবাংলা/জিএস/টিআর

ঋণখেলাপি ঋণখেলাপিদের জন্য ছাড় কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ টপ নিউজ নতুন গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর