Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়তি দামেই বিক্রি সয়াবিন তেল, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দাবি

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ জুলাই ২০২২ ০০:৪৪

ফাইল ফটো

ঢাকা: তিন সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটারের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করলেও রাজধানীর দোকানগুলোতে আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে সয়াবিন তেল। নতুন দাম ১৮ জুলাই থেকে কার্যকর করার কথা থাকলেও খুচরা পর্যায়ে তা মানছেন না ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, তাদের আগের দামেই (প্রতি লিটার ১৯৩ টাকা) পাইকারি বাজার থেকে বোতলজাত তেল কিনতে হচ্ছে। তাই কোনোভাবেই সরকারের বেঁধে দেওয়া ১৮৫ টাকা লিটার দরে তেল বিক্রি করতে পারছেন না তারা।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলে রাতারাতি দোকানগুলো থেকে আগের দামে কেনা তেল উধাও হয়ে যায়। ফলে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন দামে বিক্রি হয় সয়াবিন তেল। কিন্তু দাম কমানোর ঘোষণা দিলে সে খবর সাত-দশ দিনেও ব্যবসায়ীদের কানে পৌঁছায় না। তাদের পুরনো বেশি দামে কেনা তেলের মজুতও শেষ হয় না। শেষ পর্যন্ত পকেট থেকে বাড়তি টাকা যায় ভোক্তাদেরই।

গত ১৭ জুলাই বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ করে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। আগের দাম থেকে ১৪ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮৫ টাকা, খোলা তেল প্রতি লিটার ১৬৬ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। লিটারে ৬ টাকা কমানো হয় পামতেলের দামও। ১৫৪ টাকা থেকে কমিয়ে এর নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১৪৮ টাকা।

নতুন দাম নির্ধারণের দুই দিন পর বুধবার (২০ জুলাই) রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ও মহল্লা ঘুরে সয়াবিন তেল বিক্রির চিত্র দেখা হয় সারাবাংলার পক্ষ থেকে। সকাল ১০টায় গেন্ডারিয়া সতিশ সরকার রোডের সালমান স্টোরে দেখা যায়, কয়েকজন ক্রেতা দোকানির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়েছেন। ক্রেতা নাজমুল বলেন, এক লিটার বোতলজাত তেলের দাম ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ দোকানদার এখনো ২০০ টাকাই নিচ্ছে। পাশে থাকা আরেক নারী ক্রেতা দোকানির উদ্দেশে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত আপনারা কেন মানছেন না? আগের দাম নিচ্ছেন কেন?

জানতে চাইলে সালমান স্টোর নামের ওই দোকানের স্বত্বাধিকারী জোবায়ের হাসান সারাবাংলাকে বলেন, বোতলজাত তেলগুলো আমার আগের কেনা। তাই আগের দামই নিচ্ছি। নতুন করে কম দামে আনতে পারলে কমেই বিক্রি করব। আজ খোলা তেল এনেছি, সেটিও আগের দাম রেখেছে। কীভাবে কম দামে বিক্রি করব, বলেন? আমরা কমে কিনতে পারলেই না কমেই বিক্রি করব।

বিজ্ঞাপন

দুপুরে শান্তিনগর বাজারে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। সেখানেও ক্রেতাদের সঙ্গে বিক্রেতাদের কথা কাটাকাটি চলছিল। ক্রেতাদের অভিযোগ, তেলের দাম কমলেও দোকানদার তা মানছেন না। আগের ২০০ টাকা লিটারেই তারা তেল বিক্রি করছেন। অথচ ঘোষণা দিয়ে তেলের দাম কমানো হয়েছে।

কারওয়ান বাজারেও আগের নির্ধারিত ২০০ টাকা দরেই এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রি হতে দেখা গেল। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছিল ১৮০ টাকা লিটার দরে। বিক্রেতারা বলছেন, নতুন দাম ১৮ জুলাই কার্যকর করা হলেও নতুন করে তেলের চালান না আসায় নতুন দামে তেল বিক্রি করতে পারছেন না। দুই-চার দিনের মধ্যে নতুন দামের তেল পেলে তখন নতুন দামে বিক্রি করবেন তারা।

কারওয়ান বাজারে তেল কিনতে আসা হাসিবুল ইসলাম শান্ত সারাবাংলার কাছে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, তেল সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে কোনোদিন এর সুফল সাধারণ ভোক্তারা পাবে না। এরা সিন্ডিকেট করে চলে ও চালায়। এরা জনগণের পকেট মারে। এদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের অনেকেও জড়িত থাকতে পারে। তা না হলে তেল নিয়ে এত কিছু হচ্ছে, তবুও মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারছে না কেন?

‘তেলের দাম বাড়ার পর তেল দিয়ে তৈরি হয়— এমন সবকিছুর দাম বেড়েছে। সব ধরনের বিস্কুট, চানাচুর, কেকসহ সব ধরনের প্যাকেটজাত ও খোলা খাবারের দামও বেড়েছে। এখন যখন সয়াবিনের দাম কমছে, তাহলে এসব জিনিসের দাম কি কমবে?’— প্রশ্ন রাখেন শান্ত।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ছিল ১৩৮৫ ডলার। এ বছরের মার্চে তা বেড়ে ১৯৫৬ ডলারে পৌঁছে। তবে ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য বলছে, ১৮ জুলাই সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি টন ১৩২৪ ডলার ৫৪ সেন্ট দরে। সে হিসেবে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ৩২ শতাংশ।

বুধবার (২০ জুলাই) চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত ২০ দিনের ব্যবধানে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম অনেকটাই কমে গেছে। তবে এর পরিমাণ আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের পরিমাণে নয়। আগামীতে অবশ্য তেলের দাম আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ক্রেতাদের দাবি, পাইকারি পর্যায়ে যেভাবে তেলের দাম কমছে, খুচরা পর্যায়ে ভোক্তারা তার সুফল পাচ্ছে না। এর সুফল পেতে হলে প্রশাসনের নজরদারি জরুরি। আগে যেভাবে প্রশাসন নজরদারিসহ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে, তেমনি আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাতেই এখনো আগের দামে সয়াবিন তেল কিনতে বাধ্য হওয়া ক্রেতারা বলছেন, সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কি না, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তা নিয়মিত মনিটরিং করলে এবং বাড়তি দামে বিক্রি করলে দোকানিদের নিয়মিত জরিমানা করা হলেই কেবল বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা নিয়ে অবশ্য ক্রেতাদের কোনো ‘সুখবর’ দিতে পারলেন না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক বাবলু কুমার সাহা। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, অধিদফতরের প্রতিটি অভিযান বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে আসা। নতুন করে সয়াবিনের বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কোনো নির্দেশনা নেই।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

বাড়তি দাম ভ্রাম্যমাণ আদালত সয়াবিন তেল সয়াবিন তেলের দাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর