Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দল-মতের ভিন্নতা থাকলেও সকল নাগরিকের দায়িত্ব আমার’

লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে, নৃপেন রায়
২১ জুলাই ২০২২ ১৪:৩৮

ফাইল ছবি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

লক্ষ্মীপুর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে দল-মতের হয়তো ভিন্নতা থাকতে পারে, তাতে কিছু আসে যায় না। দেশটা তো আমাদের। আর আমি যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, তার মানে প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব আমার। মতের ভিন্নতা থাকতে পারে, পথের ভিন্নতা থাকতে পারে, আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে— তারপরও মানুষ মানুষই। মানুষকে আমি মানুষ হিসেবে দেখি। আর প্রত্যেকটা মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে সেটাই আমি চাই। আমার বাবার সেটাই শিক্ষা। এদেশের মানুষকে সুন্দর জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতে চাই।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকালে ভূমিহীন ও গৃহহীন ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও পাঁচটি গৃহ নির্মাণস্থল প্রান্তে যুক্ত ছিলেন। স্থানগুলো হলো লক্ষ্মীপুরের রামগতি, বাগেরহাটের রামপাল, ময়মনসিংহের নান্দাইল, পঞ্চগড় এবং মাগুরার মহম্মদপুর। উদ্বোধন ঘোষণা করে এসব প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ভূমি ও গৃহহীনদের জমির দলিল, ঘরের চাবিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বুঝিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসকসহ স্থানীয় নেতারা।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা একেবারে অবহেলিত তাদের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। কুষ্ঠ রোগীর প্রতি আমার আলাদা একটা টান আছে বোধহয়। আমি যখন যেখানে থাকি ওরা হাজির হলে প্রত্যেককে খাবার দিই, সহযোগিতা করি। ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকারে এসে আমি গাজীপুরে তাদের জন্য ঘর করে দিই, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিই, বিনা পয়সায় খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিই। তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিই।

সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে তারা খুব ভালো আছে। কুষ্ঠ রোগ কোনো ছোঁয়াছে রোগ নয়। তারাও মানুষ। রাস্তায় গড়াগড়ি করে তারা ভিক্ষা করে খাবে, একজন মানুষ হিসাবে এটা আমার পক্ষে কখনোই গ্রহণযোগ্য ছিল না। কাজেই তাদেরকেও আমরা আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্যই কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’

গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে সবাইকে বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ব্যবহারে অবশ্যই আপনারা সাশ্রয়ী হবেন। পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হবেন। ঘর বাড়ি যা দিয়েছি, তা রক্ষা করা, উন্নত করার আপনাদেরই দায়িত্ব। ঘরের পাশাপাশি ঋণ দেওয়া হচ্ছে, ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। ট্রেনিংয়ের সঙ্গে আপনারা নিজেদের কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করতে পারছেন। সেটা করে নিজের জীবনকে আরও উন্নত করবেন সেটাই আমরা চাই।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের জীবন আরও উন্নত হোক। নিজেরাই ভূমি কিনে ঘর-বাড়ি করার সামর্থ্য অর্জন করুন- সেটাও আমরা চাই। কারণ কারও কাছে হাত পেতে নয়, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মর্যাদার সাথে বাঁচতে হবে- সেটাই আমরা চিন্তা করি। সমাজটাকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তোলা এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রত্যেকটা মানুষ যেন নাগরিক সুবিধাটা পায় সেই ব্যবস্থাটাই আমরা করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা আরও আনন্দিত, আমাদের উদ্যোগের ফলে তার একটা প্রাথমিক সফলতা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। এবং সেটা হলো পঞ্চগড় এবং মাগুরা জেলার সকল উপজেলাসহ সারাদেশে ৫২টি উপজেলা সম্পূর্ণভাবে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হলো- এটাই হচ্ছে বড় কথা। এই দুটি জেলায় এখন আর কেউ ভূমিহীন নেই। ৫২টা উপজেলায় কোনো ভূমিহীন ও গৃহহীন নাই।’

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেন, ‘ঠিক এইভাবে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জেলা-উপজেলাকে আমরা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত করতে পারব। মানুষের একটি করে ঘর থাকবে, তাদের একটা স্থায়ী ঠিকানা থাকবে, তাদের একটা সুন্দর বাসস্থান থাকবে, তারা সুন্দরভাবে বাঁচবে ইনশাল্লাহ এবং আমরা তা করে ফেলতে পারব এটা আমি বিশ্বাস করি।’

প্রশাসনসহ সরকারের শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার লোকজন, সরকারের বিভিন্ন কর্মকতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা আপনাদের কর্মস্থলেও খুঁজে দেখেন একটি মানুষও গৃহহীন ও ভূমিহীন আছে কি না। যদি থাকে আমরা ব্যবস্থা করে দেব। আমাদের আওয়ামী লীগের এবং সহযোগীদের নেতাকর্মীদেরও বলব- রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বা অন্যান্য দলের যারা তাদের কারও কাছে যদি খবর থাকে, বাংলাদেশের একটি মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন আছে- অবশ্যই আমাদের খবর দেবেন। দল-মত নির্বিশেষে কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। যারাই গৃহহীন থাকবে আমরা তাদেরকেই ঘর করে দেব, তাদের ঠিকানা দিব, তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব।’

যারা ঘর পেল তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা শুধু একটা ঘর নয়- আপনার পরিবার, আগামী প্রজন্ম, আপনার ছেলে-মেয়ে-নাতি সবার জন্যই একটা ভবিষ্যতের আশ্রয় এবং ঠিকানা হয়ে যাচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশ যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, সেটা পূরণ করাই আমার লক্ষ্য। সেজন্যই বোধহয় আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন; নইলে বার বার মৃত্যুকে আমি সামনে দেখেছি। কিন্তু কখনো আমি ঘাবড়ে যাইনি বা ভয় ভয় পাইনি। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে আমার সংগ্রাম চালিয়ে গেছি। দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে বাঁচার মতো সুন্দর সমাজ যাতে দিয়ে যেতে পারি, সেটাই আমার লক্ষ্য।’

এদিন গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ডিজিটাল উপস্থাপনা করেন আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান প্রমুখ। প্রকল্পএলাকাতে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা। লক্ষ্মীপুরের রামগতি চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ। সেখানে স্থানীয় নেতা এমপিসহ প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব-১ এম এম ইমরুল কায়েস রানা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, মুজিববর্ষে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আরও ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবার আজ নতুন স্থায়ী ঠিকানা পেল। বাড়িগুলো হস্তান্তরের মধ্যে দিয়ে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলার সব উপজেলাসহ দেশের মোট ৫২টি উপজেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হওয়ার ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। উপজেলাগুলো হলো- ঢাকার নবাবগঞ্জ, মাদারীপুরের মাদারীপুর সদর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মানিকগঞ্জের ঘিওর, সাটুরিয়া, রাজবাড়ীর কালুখালী। ফরিদপুরের নগরকান্দা, নেত্রকোণার মদন, ময়মনসিংহের ভালুকা, নান্দাইল, ফুলপুর, ফুলবাড়িয়া, জামালপুর বক্সীগঞ্জ। চট্টগ্রামের পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর, রামগঞ্জ, ফেনীর ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, তেঁতুলিয়া, বোদা। দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও’র বালিয়াডাঙ্গী। নীলফামারীর ডিমলা, নওগাঁ’র রাণীনগর, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি, রাজশাহীর মোহনপুর, চারঘাট, বাঘা, বগুড়ার নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া নাটোরের বাগাতিপাড়া। পাবনা ঈশ্বরদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জ, ঝিনাইদহ হরিণাকুন্ডু, সাতক্ষীরার তালা, মাগুরার মাগুরা সদর, শ্রীপুর, মহম্মদপুর, শালিখা, ঝালকাঠির কাঠালিয়া, পটুয়াখালী দশমিনা।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর