‘অপরাধ করলে পুলিশকেও ছাড় নয়— তার প্রমাণ এএসআই জাহিদুল’
২১ জুলাই ২০২২ ১৮:৩৬
ঢাকা: রাজধানীর দারুসসালাম থানা এলাকা থেকে সোনার অলংকার ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের সোর্সসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রূপনগর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাহিদুল ইসলামকে গত ১৯ জুলাই গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃ অন্যরা হলো- মো. সোহেল আহম্মেদ পল্লব (৪৮), পুলিশের সোর্স পলাশ শেখ (৩৪), মো. মাসুদ রানা (৪৬) ও রবিন হালদার পরেশ (৫০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ২০ ভরি সোনার অলংকার এবং পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। বাংলাদেশ পুলিশে দুই লাখের বেশি সদস্য। পুলিশ সদস্যের ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না। জড়িত পুলিশ সদস্যদের অপরাধ অনুযায়ী তারা শাস্তি পাবেন।’
ঘটনা সম্পর্কে ডিবি পুলিশ জানায়, ভুক্তভোগী টিটু প্রধানীয়া রাজধানীর তাঁতি বাজারের ধানসিঁড়ি চেইন অ্যান্ড বল হাউজ নামক সোনার দোকানের একজন কর্মচারী। তিনি সেখানে তৈরি করা গহনা দেশের বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে ডেলিভারি দিয়ে থাকেন। তিনি গত ১৭ জুলাই সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তাঁতি বাজারের দোকান থেকে গহনা নিয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর ও সখীপুরের উদ্দেশে রওনা হন।
টিটু প্রথমে মোটরসাইকেলে করে গাবতলী বাস টার্মিনালে পৌঁছান। সেখানে পৌঁছে তিনি টাঙ্গাইলের বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তার কাছে এসে নিজেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ভিকটিমের নাম ঠিকানা ও পেশা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তখন টিটু নাম-ঠিকানা বলার পর ব্যাগের মধ্যে কী আছে জানতে চায়। তখন ভিকটিম আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জানায়, ব্যাগের মধ্যে ৩৮ ভরি ১৪ আনা সোনার তৈরি বল চেইন, চেইন ঝুমকা, বল জুমকা, লকেট, আংটি ও রিস্টলেট আছে। বিশেষ কায়দায় মোড়ানো ২টি প্যাকেটে করে একটি স্কুল ব্যাগে করে তিনি সোনার অলংকারগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন।
ডিবি পুলিশ জানায় আরও জানায়, কিছুক্ষণ পর অজ্ঞাতনামা আরও চার/পাঁচ জন লোক এসে যোগ দেয়। তারা ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক ভিকটিমের কাছে থাকা সোনার অলংকারের ব্যাগ, ভাউচার, দোকানের ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট ও তার ব্যবহৃত স্মার্টফোন ও ৮ হাজার ৮০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর টিটুকে থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে গাবতলী বেড়িবাঁধ এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে টিটুকে কিছুক্ষণ আটকে রাখার পর একটি সিএনজিতে উঠিয়ে বিজয় সরণি মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে সেটি থামিয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
ডিবি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতাররা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্য। আসামিরা ভুক্তভোগী টিটুর পথরোধ করে অলংকার ছিনিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে দারুসসালাম থানায় একটি মামলা হয়েছে। আমরা আরও বেশ কয়েকজনের নাম জেনেছি। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। লুণ্ঠন করা বাকি সোনা উদ্ধারেও চেষ্টা চলছে।’
ডাকাতির ওই ঘটনায় রূপনগর থানার এএসআই পুলিশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে বলা যাবে। তবে পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় পুলিশ নেবে না। আগেও নেয়নি, ভবিষ্যতের নেবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলার আসামি রূপনগর থানার এএসআই জাহিদুল জেলে আছেন। ডাকাতির ঘটনায় এএসআই জাহিদুলের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলেই তো তিনি জেলে আছেন। পলাশ শেখ ছিল পুলিশের সোর্স। তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। অপরাধী যেই হোক তাকে গ্রেফতার করা হবে।’
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম