ডেঙ্গু ঠেকাতে মশা নিধনে চসিকের ৭ দিনের কর্মসূচি
২৬ জুলাই ২০২২ ২০:১৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে মশা নিধনে বিশেষ কর্মসূচি শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের প্রতিটিকে ১০টি সাব-জোনে ভাগ করা হয়েছে। নগরজুড়ে সাত দিন ধরে চলবে মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোর এই বিশেষ কর্মসূচি। এর মধ্য দিয়ে ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে চট্টগ্রাম নগরবাসী রেহাই পাবেন বলে আশা করছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) সকালে নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মশা নিধনে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র।
অনুষ্ঠানে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নালা-নর্দমায় জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা, পানিতে শুধু এডিস মশার উৎপত্তি হয় তা নয়, স্বচ্ছ পানিতেও এডিস মশা হয়। ছাদবাগানে, পরিত্যক্ত বাড়িতে, ঘরের আঙিনায়, নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানিতেও এডিস মশা হয়। এজন্য শুধু ওষুধ ছিটিয়ে মশা পুরোপুরি নিধন করা যাবে না। নগরবাসীকেও সচেহন হতে হবে। ছাদবাগান পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরের আঙ্গিনা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, পানি জমলে এডিস মশার উৎপত্তি হবেই। এতে ডেঙ্গু-চিনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব হবে।’
‘চট্টগ্রামে এরই মধ্যে কয়েকজন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। এজন্য আমরা চট্টগ্রাম শহরের ৪১টি ওয়ার্ডে গত বছরের মতো ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। সাত দিন এই প্রোগ্রাম চলবে। এরপর নিয়মিত মশা নিধনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আশা করছি, এই প্রক্রিয়ায় আমরা মশা নিধনে সক্ষম হব। নগরবাসী ডেঙ্গু-চিকনগুনিয়ার প্রভাব থেকে মুক্তি পাবেন,’— বলেন চসিক মেয়র।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে ডেঙ্গু নিয়ে সবশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার আরও চার জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১ জনে। এর মধ্যে ২৩ জন পুরুষ ও ১৬ জন নারী ছাড়াও রয়েছে ২২টি শিশু।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের সুপারিশ করা ওষুধ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ওষুধ আমরা ব্যবহার করছি। ঢাকা সিটি করপোরেশন মশা নিধনে যেসব ওষুধ ব্যবহার করছে, সেগুলোর নমুনা আমরা সংগ্রহ করেছি। যাচাই-বাছাই করে সেই ওষুধ চট্টগ্রামেও ব্যবহার করা যায় কি না সেটা আমরা দেখছি। তবে যেসব ওষুধ আমরা ব্যবহার করছি সেগুলো শতভাগ কার্যকর হবে— এমনটা আমরা মনে করি না। যেসব ওষুধ অনুমোদিত সেগুলো আমরা ব্যবহার করছি।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম সাংবাদিকদের বলেন, নালা-নর্দমায় আমরা লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইডের সঙ্গে লাইট ডিজেল অয়েল (এলডিও) মিশিয়ে প্রয়োগ করছি। ফগার, স্প্রে, ডিজেলচালিত টু স্ট্রোক স্প্রেসহ ৪৫টি মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হবে। ফগার দিয়ে লার্ভিসাইড ও স্প্রে দিয়ে অ্যাডাল্টিসাইড, আবার লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড মিশিয়ে টু স্ট্রোক স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে ছিটানো হবে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের প্রতিটিকে ১০টি করে সাব জোনে ভাগ করে ১০টি টিমের মাধ্যমে চলবে এই ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। কার্যক্রম তদারকির জন্য গঠন করা হয়েছে ১২টি টিম।
চসিকের প্রশিক্ষিত ১৬৪ জন কর্মী মশা নিধনে রাসায়ানিক ছিটাবেন। এছাড়া দেড় হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যারা এলাকায়-এলাকায় গিয়ে লোকজনকে সচেতন করবেন এবং কোথাও জমে থাকা পানি, ময়লা-আবর্জনা পেলে পরিষ্কার করবেন। শহরজুড়ে এক লাখ সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে।
আবুল হাশেম বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত লার্ভিসাইড ও অ্যাডাল্টিসাইড আছে। ২৫ হাজার লিটার এলডিও মজুদ আছে। সেগুলো দিয়ে ৩০-৩৫ দিন চলবে। আরও ৮০ হাজার লিটার এলডিও কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হচ্ছে। কাল (বুধবার) থেকে পুরোদমে আমাদের কর্মসূচি চলবে।’
অনুষ্ঠানে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী, মোরশেদ আলম, হাসান মুরাদ বিপ্লব ও জেসমিন পারভীন এবং বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর