‘যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে ৯ মাসের খাবার কেনা যাবে’
২৭ জুলাই ২০২২ ১৫:১২
ঢাকা: এখনও যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে নয় মাসের খাবার কেনা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার অনেক চক্রান্ত চলছে। কিন্তু কেউ আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে ঠেকাতে পারবে না।
বুধবার (২৭ জুলাই) দুপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সরকার প্রধান এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন প্রান্তে যুক্ত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের কাছে আমাদের কথা বার বার বলতে হবে। তারা ঘেউ ঘেউ করতে থাকুক। আমরা যা করেছি সেই কথা মানুষের কাছে আমাদের নিয়ে যাবে। সেটাই হবে সমালোচনার জবাব। বুদ্ধিজীবী আছেন কিছু। দেশের বিষয়ে জানেন কি তারা? দক্ষিণাঞ্চলে কখনও গেছেন কি? আমরা তাদের মতো এত জ্ঞানী না। কিন্তু মানুষের পাশে থাকি। মানুষের ভালোমন্দ অনুধাবন করি। প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান থেকে দেশ পরিচালনা করি। যখন জ্ঞানীরা ছিল, তখন তো এত উন্নতি করেনি দেশ! আমরা মানুষকে ভালোবেসে কাজ করি। সে জন্যই উন্নতি সম্ভব হয়েছে।’
রিজার্ভ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ’রিজার্ভ থাকে কেন? কোনো আপদকালীন সময়ে তিন মাসের খাদ্যশস্য কেনার জন্য। আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তাতে তিন মাস কেন, ছয় মাস বা নয় মাসের খাবারও কিনে আনতে পারব। তবে আমাদের সেই পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে খাদ্যশস্য আমাদের কিনতে না হয়। আমরা নিজেরা যেন উৎপাদন করতে পারি। তাহলে তো আর আমাদের রিজার্ভ খরচই হবে না। আপদকালীন সময়ের জন্য রাখতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘জিডিপি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। সেগুলো কেন তাদের চোখে পড়ে না সেটা আমি জানি না। যারা আমাদের বুদ্ধিজীবী তারা অনেকে অনেক কথা লেখেন। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে একজন অর্থনীতিবিদ লিখে ফেললেন যে, সেখান থেকে কোনো আয়ই হবে না। বরং এটা অযথা নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে কে চড়বে? কে ব্যবহার করবে? পদ্মা সেতুতে রেললাইন হচ্ছে সেটা নিয়েও আপত্তি! এই রেলে কে চড়বে? দক্ষিণের মানুষ তো লঞ্চেই আসা যাওয়া করে। কেউ রেলে চড়বে না। এই হচ্ছে কোনো কোনো অর্থনীতিবিদের চিন্তা ধারা। তারা আবার আর্টিকেল লেখেন! এরা কি খেয়ে লেখেন সেটা আমার কাছে সন্দেহ!’
অর্থনীতিবিদদের নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশটাকে কতটুকু চেনে সেটা নিয়েও আমার সন্দেহ। দক্ষিণাঞ্চলে গিয়েছে কি না আমি জানি না। এই অঞ্চলের মানুষের সমস্যাগুলো তারা জানে কি না। সেটা নিয়েও আমার প্রশ্ন আছে। তাহলে তারা কেমন অর্থনীতিবিদ? একটা প্রতিষ্ঠান আছে তারা সবকিছুতেই খারাপ দিক দেখে। তাদের ভালো কিছু চোখে পড়ে না। মনে হয় যেন ওদের দৃষ্টিশক্তিই কমে গেছে। ওদের মাথার ভেতর শুধু কেয়ারটেকার গভর্মেন্ট। ২০০৭ সালে যারা ক্ষমতা নিয়েছিল তারা হয়তো ওদের মাথায় এমন কিছু একটা দিয়ে গেছে। যার জন্য তাদের মাথার মধ্যে শুধু এটাই ঘোরে। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেশ চলুক এটা তাদের পছন্দ না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পর পর তিন বার ক্ষমতায় এসেছে বলেই করোনা মোকাবিলা করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছি। আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। জ্ঞানীরা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তো উন্নয়নশীল দেশে যেতে পারেনি। আমরা যারা লেখাপড়া জানি না তারা যখনই ক্ষমতায় যাই তখনই বাংলাদেশের উন্নতি হয়। সেজন্যই আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আমরা দেশের মানুষকে ভালোবেসে মাটি-মানুষের জন্য কাজ করি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা ব্যহত করতে অনেক চক্রান্ত করছে। আমি বিশ্বাস করি, যত চক্রান্তই হোক বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ বন্ধ করতে পারবে না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি অপ্রতিরোধ্য গতিতে। আমরা এগিয়ে যাব। আন্তর্জাতিক পরিবেশের কারণে হয়তো কিছু ঝড়ঝাপটা মোকাবিলা করতে হবে। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে যেমন চলি, সেরকমভাবেই এই বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।’
স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের মানুষের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সংগঠনকে সুসংগঠিত করে একটি ডিসিপ্লিন ফোর্স হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান।
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম