Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্যবহার হচ্ছে না লাইফ জ্যাকেট, ঝুঁকি নিয়েই সমুদ্রে পর্যটকরা

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুলাই ২০২২ ০৯:৫৪

কক্সবাজার: দ্বীপ এলাকা মহেশখালী ভ্রমণ শেষে স্পিডবেটে শহরের ৬ নম্বর ঘাটে এসে পৌঁছেছে ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা ৫ বন্ধু। স্পিডবোট থেকে নামার সময় তাদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ। পর্যটকদের অভিযোগ, স্পিডবোটে এই সমুদ্র যাত্রা ছিল শ্বাসরুদ্ধকর। যাত্রাপথে নিশ্চিত করা হয়নি তাদের নিরাপত্তা, বোটে থাকার পরও দেওয়া হয়নি লাইফ জ্যাকেট।

ভুক্তভোগী বাপ্পী চৌধুরী জানান, ইউনিভার্সিটির বন্ধুরা মিলে ভ্রমণে এসেছেন। তারা সকালে কাঠের বোটে মহেশখালী যান। ভ্রমণ শেষে বিকালে স্পিডবোটে ফেরার পথে উত্তাল সমুদ্র পার হওয়ার সময় তাদের কোনো নিরাপত্তাসামগ্রী দেওয়া হয়নি। বোটে লাইফ জ্যাকেট থাকার পরও তাদের বিষয়টি জানানো হয়নি।

বিজ্ঞাপন

আরেক পর্যটক রবিউল হাসান বলেন, ‘সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বুক ধড়ফড় করছিল। মনে হচ্ছিল এই বুঝি পড়ে যাব। লাইফ জ্যাকেট ছাড়া যাত্রা অনিরাপদ ছিল। যদি দুর্ঘটনায় কেউ পানিতে ভেসে যেত, এই দায় কে নিত?’

কামরুল ইসলাম নামে আরেক যুবক জানান, স্পিডবোট চালকদের ব্যবহার ছিল খুবই খারাপ। বেড়াতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় তা তারা জানে না।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীতে যাতায়াতের জন্য বিভিন্ন বোট ছাড়াও রয়েছে ১৩০টির বেশি স্পিডবোট। বোটগুলো শহরের ৬ নম্বর ঘাট এবং মহেশখালী ঘাটে যাত্রী আনা নেওয়া করে। পর্যটন মৌসুমে ঘাটগুলো থাকে খুবই ব্যস্ত। এছাড়া প্রতিনিয়ত দৈনন্দিন কাজে লোকজন আসা-যাওয়া করে। মহেশখালীতে যাতায়তের সহজ মাধ্যম স্পিডবোট। কিন্তু এই বোটের যাত্রা দিনদিন অনিরাপদ হয়ে পড়ছে অব্যবস্থাপনার কারণে।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রত্যেকটা স্পিডবোটের বক্সের ভিতর লাইফ জ্যাকেট থাকলেও তা যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে না। জ্যাকেট ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পাড় হয়ে মহেশখালী যাওয়া-আসা করছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।

বিজ্ঞাপন

পর্যটক এবং সচেতন স্থানীয়দের অভিযোগ, যাত্রাকালে স্পিডবোট চালকরা তাদের লাইফ জ্যাকেট দেয় না। তবে পাল্টা অভিযোগ করেন বোট চালক ও মালিকেরা। তারা বলছেন, ‘লোকজন লাইফ জ্যাকেট পড়তে চায় না।’

স্পিডবোট চালক লিয়াকত হোসেন জানান, বেশিরভাগ স্থানীয় লোকজন লাইফ জ্যাকেট নিতে চায় না। তাদের লাইফ জ্যাকেট দিলে গরমের কথা বলে তা ফিরিয়ে দেয়। এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে ঝগড়াও হয়েছে। একইভাবে পর্যকটদেরও অনেকে জ্যাকেট নিতে চায় না। আবার অনেকে চেয়ে নেন।

কক্সবাজার স্পিডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রত্যেক চালক এবং মালিককে নির্দেশ দেওয়া আছে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করতে হবে। সেই অনুযায়ী প্রতিটি স্পিডবোটে লাইফ জ্যাকেট রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় লোকজন তা পরতে চায় না। অনেক পর্যটকের মাঝেও একই সমস্যা। তবে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দায়িত্বে থাকা মো. ছৈয়দ করিম জানান, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে স্পিডবোটের যাত্রীদের অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পড়তে হবে। যেসব বোটে লাইফ জ্যাকেট থাকবে না তাদের সিরিয়াল বন্ধ রাখা হবে।

সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক (কক্সবাজার-২ মহেশখালী-কুতুবদিয়া) জানান, স্থানীয় দ্বীপ এলাকার লোকজন লাইফ জ্যাকেট পড়তে না চাওয়ার বিষয়টি সঠিক। কিন্তু এটি কোনভাবেই উচিৎ নয়। এ ব্যাপারে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নয়ত পর্যটন নগরীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে।

সারাবাংলা/এমও

কক্সবাজার ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে পর্যটক লাইফ জ্যাকেট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর