রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান ছিল না— বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
২৯ জুলাই ২০২২ ১৭:৫৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান অনুপস্থিত ছিলেন এবং গেটে কোনো প্রতিবন্ধক ছিল না বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। তবে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নাকচ করে বলেছে, গেটম্যান বাঁশ ফেলে লাল পতাকা উঁচিয়ে ট্রেন আসার সংকেত দিলেও মাইক্রোবাসের চালক তা না মেনে রেললাইনে গাড়ি তুলে দেয়। এতে দুর্ঘটনা ঘটে।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুর সোয়া ১টার দিকে উপজেলার বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের কাছে রেলক্রসিংয়ে রেললাইনে উঠে পড়া একটি মাইক্রোবাসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসের আরোহী ১১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।
মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেসের যাত্রী জুয়েল সারাবাংলাকে বলেন, ‘হঠাৎ ট্রেন প্রচণ্ড ঝাঁকি দেয়। জানালা খুলে দেখলাম, একটি সাদা মাইক্রোবাস দুমড়ে-মুচড়ে আছে। ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের দরজা ভেঙে একজনকে ছিটকে পড়তে দেখা যায়। চলন্ত ট্রেন মাইক্রোবাসকে প্রায় সোয়া এক কিলোমিটার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।’
দুর্ঘটনাস্থলে থাকা বড়তাকিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রেলগেটের লাইনম্যান দুর্ঘটনার সময় ছিলেন না। গেটে বাঁশ ফেলা হয়নি। মাইক্রোবাসটি রেললাইনে উঠে যায়। তখন ট্রেন ধাক্কা দেয়। যদি বাঁশ ফেলা হত তাহলে মাইক্রোবাসটি রেললাইনে উঠতে পারত না।’
মফিজুল হক নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের এ সব বক্তব্য নাকচ করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আব্দুল আহাদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে একটি আপ ট্রেন যাচ্ছিল। চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী রেলক্রসিং অতিক্রম করার আগে গেটম্যান বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধক দেন। আপ ট্রেন বড়তাকিয়া অতিক্রম করার পর মাইক্রোবাসের চালক বাঁশ উল্টে গাড়ি নিয়ে রেললাইনের ওপর উঠে পড়েন। এর আগে গেটম্যান লাল পতাকা উড়িয়ে সংকেত দেন। কিন্তু মাইক্রোবাসের চালক ভেবেছিলেন মহানগর প্রভাতী আসার আগেই রেললাইন পার হয়ে যেতে পারবেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দু’টি তদন্ত কমিটি করেছি। কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, কারও গাফেলতি আছে কি না সেটা তদন্তে বের হয়ে আসবে।’
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে।
রেলওয়ে পুলিশের চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার হাসান চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রীর মৃত্যুর বিষয় আমরা নিশ্চিত হয়েছি। প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছি, রেলক্রসিংয়ে সিগন্যাল অমান্য করে মাইক্রোবাসটি রেললাইনে উঠে যায়। এরপর ট্রেন ধাক্কা দেয়। তবে আরও বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন আছে।’
আরও পড়ুন
মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ১১
মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা: রেলের ২ তদন্ত কমিটি
সারাবাংলা/আরডি/একে