আন্দোলনের রোডম্যাপ প্রস্তুত, শিগগিরই মাঠে নামছে বিরোধীদলগুলো
৩ আগস্ট ২০২২ ১৯:২৪
ঢাকা: অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করেছে। দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণফোরাম, জাসদ (রব) এবং অনিবন্ধিত আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল এই রোডম্যাপ অনুযায়ী যুগপৎ আন্দোলন করবে। এদিকে সাতটি রাজনৈতিক দল নিয়ে গঠিত গণতন্ত্র মঞ্চ আগামী ৮ আগস্ট আত্মপ্রকাশ করবে বলে জানা গেছে।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এই দলগুলো একই দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে নামবে। আন্দোলনের রোডম্যাপ অনুসারে, দলগুলো রাজধানী ঢাকা থেকে এই আন্দোলন শুরু করে পর্যায়ক্রমে তা বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে দেবে। এ সব রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনগুলো এরইমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় তাদের কর্মীদের তৎপর করতে কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া ইসলামী দলগুলো কারাবন্দি আলেমদের মুক্তির দাবি নিয়ে পৃথকভাবে মাঠে থাকবে। পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ নিয়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং মুক্তির দাবি করবে। গণফোরামসহ অন্যান্য দলগুলোও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তির দাবি জানাবে।
গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিএনপির সঙ্গে সংলাপ শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মুক্তির দাবিতে তারা ঐক্যমত হয়েছেন। তবে গণতন্ত্র মঞ্চ বিএনপির এই দুই নেতার মুক্তির দাবি প্রকাশ্যে না করলেও নির্বাচনের আগে কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবি জানাবে। রোডম্যাপ অনুসারে, আন্দোলন-সংগ্রাম শান্তভাবেই করার চিন্তা-ভাবনা দলগুলোর। তবে কয়েকটি দল হরতালসহ অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাবও দিয়েছে। তাদের মতে, শান্তভাবে আন্দোলন করে দাবি আদায় করা যাবে না। সে জন্য ঘেরাও কর্মসূচিসহ হরতাল দিতে হবে।
সূত্রগুলো বলেছে, যুগপৎ আন্দোলন শুরুর আগে এসব দলকে নিয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে কারা থাকবে তা নিয়ে শিগগিরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন দলীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
সূত্র আরও জানায়, সরকার পতনের এক দফা দাবির আন্দোলন বিএনপি শুরু করে দিয়েছে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইস্যু সৃষ্টি করা হবে। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২ আগস্ট গণফোরামের সঙ্গে সংলাপের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘সরকার পতনের এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।’
এদিকে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সারাবাংলাকে জানান, নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা ও বর্তমান সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের জন্য সবদল ঐক্যমত হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ আগামী ৮ আগস্ট রাজনৈতিক একটি রূপরেখা প্রকাশ করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছে, যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জাতীয় ঐক্য গঠিত হবে। এরপরই নির্বাচনকালীন সরকার অথবা জাতীয় সরকার গঠনের একটি রূপরেখা প্রকাশ করা হবে। তবে জাতীয় সরকারের প্রধান কে হবেন- সে সম্পর্কে এখনও পরিষ্কারভাবে কোনো দলই মুখ খোলেনি। গণফোরামের সঙ্গে বিএনপির সংলাপের সময় এই জাতীয় সরকারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে জাতীয় সরকারের প্রধান কে হবেন সেগুলো নিয়েও আলোচনা হয়।
সেখানে বিচারপতি ও অবসরপ্রাপ্ত আমলাদের নিয়ে আলোচনা হলেও বলা হয়েছে যে, প্রায়ত বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের মতো এখন আর এমন কেউ নেই যিনি দেশ পরিচালনা করতে পারবেন। আর আমলা দিয়ে তো হবেই না। তবে কে জাতীয় সরকারের প্রধান হবেন- এই বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত এবং জনসম্মুখে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নাম প্রকাশ করতে হবে। আলোচনায় জাতীয় সরকারের প্রধান হিসেবে ড. কামাল এবং ড. ইউনূসের নাম উঠে আসে। তবে এ বিষয়ে সবদল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, আন্দোলনের বিষয়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি তো আন্দোলনে আছেই। আমাদের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে। আমরাও আন্দোলনে যোগ দেব। তখন সেটি অন্যমাত্রা পাবে। এর বাইরেও অনেক দল এই আন্দোলনে যুক্ত হবে। তখন স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলন বেগবান হবে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম