বিআরটিএ ভাড়া বাড়াতে চায় ১৫ শতাংশ, বাস মালিকদের আবদার দ্বিগুণ
৬ আগস্ট ২০২২ ১৬:৪৭
ঢাকা: দেশের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ার ফলে বাড়তে যাচ্ছে গণপরিবহনের ভাড়া। শনিবার বিকেলে এ নিয়ে বৈঠকও রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর টার্গেট নিয়ে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় ওই বৈঠকে। তবে পরিবহন মালিকরা চাইছেন বাসের ভাড়া যেন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়।
বিআরটিএ ও বাস মালিক সূত্রের একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বিআরটিএ সূত্র সারাবাংলাকে বলছে, তারা ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা এগুবেন। তবে বিআরটিএ ও বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনা শেষে ভাড়া সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে বলে আশাবাদী বিআরটিএ।
এদিকে পরিবহন মালিক সূত্র সারাবাংলাকে বলছে, শুধু যে তেলের দাম বাড়ানোর কারণে ভাড়া বাড়বে— বিষয়টি এ রকম নয়। কেননা পরিবহন পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়েছে। এ ছাড়া পরিবহন যন্ত্রাংশের দামও বেড়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি যৌক্তিক মনে করছেন বাস মালিকরা। তবে বিআরটিএ ও বাস মালিকদের দরকষাকষিতে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি ২৫ শতাংশে স্থির হতে পারে বলে আভাস মিলেছে।
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ নিজ কার্যালয়ে দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আয় কম না। সুতরাং বাসভাড়া বাড়লেও তা সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। আজকে বিকেলে আমরা সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসব। সেখানে বাস ভাড়া সমন্বয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কত শতাংশ বাস ভাড়া বাড়ানো হবে, কীভাবে বাড়ানো যাবে তা ওই বৈঠকে পর্যালোচনা করা যাবে। শুধু পরিবহন মালিকরা তো একা নন, সেখানে সরকারি প্রতিনিধি থাকবে, ক্যাবের নেতারা থাকবেন। সুতরাং আলোচনা করেই একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে বিআরটিএর সঙ্গে দেনদরবার করার জন্য বিভিন্ন বাস মালিকদের সমন্বয়ে ‘সমন্বয় কমিটি’ করেছে পরিবহন মালিক সমিতি। তারা শনিবার ভাড়া বাড়ানো বিষয়ক বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে নিজেদের যুক্তি ও দাবি তুলে ধরবেন।
বর্তমানে দূরপাল্লার বাসে (৫২ আসনের) প্রতি কিলোমিটারে প্রত্যেক যাত্রীর ভাড়া ১ টাকা ৮০ পয়সা। বর্তমানে সিটি এলাকায় (৫২ আসনের) বাসে প্রতি কিলোমিটারের প্রত্যেক যাত্রীর ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সা। ভাড়া বাড়ানো হলে তা কিলোমিটার প্রতি কত গিয়ে দাঁড়ায় তা এখন অপেক্ষার বিষয়।
শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। যা মূল্যবৃদ্ধির হারের দিক থেকে এ পর্যন্ত রেকর্ড। ডিজেল ও কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ৩৪ টাকা। পেট্রলে ৪৪ টাকা এবং অকটেনে বেড়েছে ৪৬ টাকা। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে তেলের বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়— এখন থেকে ডিজেলের দাম হবে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, যা এত দিন ৮০ টাকা ছিল। কেরোসিনের দামও একই হারে বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম ডিজেলের সমান, অর্থাৎ ১১৪ টাকা। পেট্রলের নতুন দাম প্রতি লিটার ১৩০ টাকা, যা এত দিন ৮৬ টাকা ছিল। অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা করা হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, তেলের দাম নির্ধারণের আগে পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসা হয়েছিল। সে বৈঠকে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তেলের মূল্য সমন্বয়ের পর পরিবহন মালিকদের কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
কিন্তু শুক্রবার রাতে মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পরে সকালে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন সংকটের কথা জানিয়েছে ভুক্তভোগী যাত্রীরা। একইভাবে পরিবহন সংকটের কথা স্বীকার করেছেন শ্রমিক ও মালিকরাও। তাই পরিবহন মালিকদের দাবি শুধু জ্বালানি নয়, অন্য খরচগুলো সমন্বয় করে যেন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়।
তাদের দাবি— সম্প্রতি যানবাহনের স্পেয়ার পার্টসের দাম বেড়েছে অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। যার ফলে শুধু তেলের দাম নয়, এই সব কিছু মিলিয়ে সমন্বয় করে ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। না হলে কোনো বাস মালিকরা বাস চালাতে পারবে না।
মহাখালী বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, ‘বর্তমানে একজোড়া টায়ারে ২০ হাজার টাকা বেড়েছে। ২০ শতাংশ স্পেয়ার পার্টসের দাম বেড়েছে। এই মুহূর্তে তেলের দাম সমন্বয় করে আমাদের ভাড়া নির্ধারণ করলে হবে না। স্পেয়ার পার্টসের দামও এর সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। সবদিক বিবেচনা করে সরকার একটা সমন্বয় করে দিলে আমরা খুশি। আমরা শুধু সমন্বয়টা চাচ্ছি, কোনো পারসেন্টেজ চাচ্ছি না। আমাদের বেশি বেনিফিটের প্রয়োজন নেই, শুধু সমন্বয় দরকার যেন আমরা রোডে বাস চালাতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা সমন্বয়ের জন্য একটি বোর্ড গঠন করেছেন। তারা এটার হিসাব-নিকাশ করছে। এটা নিয়েই আমাদের বিআরটিএ’র সঙ্গে বিকেলে মিটিং হবে।’
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় ভাড়া সমন্বয়ের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে অঘোষিতভাবে বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। কোথাও কোথাও সীমিত পরিসরে যান চলাচল করলেও ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের অভিযোগও উঠেছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অ্যাপে পরিচালিত মোটরসাইকেলের ভাড়াও বেড়েছে। কিছু এলাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পেট্রলপাম্প। তেল না পেয়ে বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে কোথাও কোথাও।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এর আগে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর দেশে দূরপাল্লার বাস-মিনিবাসের ভাড়া গড়ে ২৭ শতাংশ বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভাড়া নির্ধারণী কমিটি। একইভাবে মহানগর এলাকার বাসভাড়া ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়।
ভাড়া বাড়ানোর দাবি বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘আজকে বৈঠক রয়েছে। বৈঠকের আগে এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন কিছুই বলতে পারব না। বৈঠক আগে শেষ হোক। তারপর আমরা গণমাধ্যমে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাব।’
সারাবাংলা/এসবি/একে
জ্বালানি তেল তেলের দাম পরিবহন মালিক সমিতি বাস মালিক বাসের ভাড়া