Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খোলাবাজারে ডলারের দাম ছাড়াল ১১৫ টাকা

গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ আগস্ট ২০২২ ১৯:৫৫

ঢাকা: আজ ডলার কিনলে কাল বেশি দামে বিক্রি করা যাবে— এমন গুজবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেটে) ডলারের দাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা উদ্যোগেও নিয়ন্ত্রণ আসছে না ডলারের বাজার। সর্বশেষ সোমবার (৮ আগস্ট) কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ ডলারের দাম। এর আগে, গত ২৭ জুলাই কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছিল ১১৩ টাকা। সোমবার তা ১১৫ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

ডলারের কারসা‌জি রো‌ধে খোলাবাজার ও এক্স‌চেঞ্জ হাউজগু‌লো‌তে ধারাবা‌হিক অভিযান পরিচালনা ক‌রছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহ পর্যন্ত কারসা‌জির অপরা‌ধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপা‌শি ৪২টি‌কে শোকজ করা হ‌য়ে‌ছে। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় নয়টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নি‌তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হ‌য়েছে। তারপরেও ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

এদিকে, সোমবার কার্ব মার্কেটের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতেও প্রতি ডলার ১০৮ থেকে ১০৯ টাকায বিক্রি হচ্ছে। তারপরেও গ্রাহকরা ডলার কিনতে পারছেন না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। রেমিট্যান্সের জন্যও ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। সোমবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর মতিঝিল, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ডলারের দাম বাড়া প্রসঙ্গে রেইনবো মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারের মতো লাভের আশায় অনেকেই ডলার মজুদ করছেন। কেউ আবার শেয়ার বিক্রি করে বেশি লাভের আশায় ডলার কিনছেন। এসব কারণে খোলাবাজারে ডলারের চা‌হিদা অনেক বে‌শি, সরবরাহ নেই বললেই চলে। ডলার কিনে রেখে দিলেই লাভ, এমন আশায় অনেকেই ডলার কিনছেন। ফলে ডলারের দাম বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ‌ সকালে প্রতি ডলার ১১৩ টাকা বিক্রি করলেও বিকেলে তা বিক্রি করতে হয়েছে ১১৫ টাকা ৫০ পয়সা। তারপরেও ডলার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে ডলার নেই। ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান না চালিয়ে যারা ডলার মজুদ করছেন সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যাতে শেয়ারের ব্যবসার মতো ডলার ব্যবসায় নেমে না পড়ে।’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড.আহসান এইচ মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেভাবে ডলারের দাম বাড়ছে এটা স্বাভাবিক। তবে কার্ব মার্কেটের সাথে আন্তঃব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত দামের যে ব্যবধান এটা একেবারেই অস্বাভাবিক। এই অবস্থায়ই ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ এখন অনেকেই ডলার কিনে ধরে রাখছে। ফলে ডলারের দাম য়েভাবে বাড়ছে এটা যদি আরও বাড়ে তাহলে আশ্চর্শ হওয়ার কিছু নেই।’

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রির কারণে রোববার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা দরে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। চলতি বছরের মে মা‌সের শুরুর দিকে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায়।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায়। এ সময় মুদ্রাবাজার অনেকটা স্থিতিশীল ছিল। ২০২১ সালের শেষের দিকে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা পরিশোধ করতে গিয়ে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে কমতে শুরু করে টাকার মান। ২০২১ সালের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো এক ডলার ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ৮৬ টাকা, গত ২৭ এপ্রিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা, গত ১০ মে ৮৬ ডাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই প্রতি ডলার ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

সারাবাংলা/জিএস/পিটিএম

১১৫ টাকা ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর