ধর্ষণের স্বীকারোক্তির পর ডিএনএ টেস্টে অমিল: জামিন পেলেন যুবক
৯ আগস্ট ২০২২ ১৫:২১
ঢাকা: কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বিনাইপাড় গ্রামে ধর্ষণের ঘটনায় এক শিশু জন্ম হলেও ডিএনএ টেস্টে অমিল পাওয়ায় অভিযুক্ত যুবককে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অভিযুক্ত যুবকের জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে সোমবার (৮ আগস্ট) বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি কে. এম. ইমরুল কায়েশের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. একরামুল হক বাকি আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।
আদেশের বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চত করে আইনজীবী একরামুল হক বাকি বলেন, ‘আদালত ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার যুবককে (২১) কেন জামিন প্রদান করা হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল আদালতে (আমলি আদালত-৪) ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা বিচারাধীন মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই যুবক (আসামি) জামিনে থাকবে। আসামি বর্তমানে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। আমরা আশা করি কুমিল্লার আদালতেও আসামি ন্যায়বিচার পাবেন।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসামির জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে আসামি স্থায়ী জামিন পেলেন। এখন কুমিল্লার আদালতে বিচারধীন মামলাটি সেখানেই নিষ্পত্তি হবে।’
এর আগে, গত বছরের ৩ নভেম্বর হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করে ওই যুবক। এরপর ১২ ডিসেম্বর আসামিকে কেন জামিন দেওয়া হবে তা, জানতে চেয়ে দুই সপ্তাহের জন্য রুল জারি করে হাইকোর্ট। পাশাপাশি আসামি ওই কিশোরীকে বিয়ে করতে ইচ্ছা পোষণ করায় কুমিল্লা জেল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেন।
শিশুটির বাবা কে? ধর্ষকের স্বীকারোক্তির পরও ডিএনএ টেস্টে অমিল
পরবর্তীতে বিয়ে নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সমাঝোতা না হওয়ায় সেই বিয়ে আর হয়নি। এরপর কুমিল্লার আদালতে ওই যুবকের পক্ষে শিশুর ডিএনএ টেস্টের আবেদন করলে আদালত পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) ডিএনএন টেস্ট করে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন।
গত ৪ জুলাই কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (আমলী আদালত-৪) ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট দাখিল করা হয়। আদালতে দাখিল করা সিআইডির ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টে দেখা যায়, যুবকের সঙ্গে শিশুটির ডিএনএ টেস্টের ফলাফলে মিল নেই।
এরপর গত ২৬ জুলাই হাইকোর্টে ডিএনএ রিপোর্ট তুলে ধরে ওই যুবকের পক্ষে সম্পূরক আবেদন করা হয়। গত ২৮ জুলাই শুনানি নিয়ে আদালত ৪ আগস্ট এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। পাশাপাশি ওই কিশোরীকে ডেকে শিশুর জৈবিক পিতা কে সে বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন। এরপর ওই বেঞ্চের জুনিয়র বিচারপতির বদলি হয়ে যান এবং নতুন করে বেঞ্চ গঠিত হওয়ার পর সোমবার (৮ আগস্ট) হাইকোর্ট জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন।
তবে এদিন শিশুর জৈবিক পিতা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে কিছু জানায়নি। আসামিপক্ষও বিষয়টি আর আদালতে উপস্থাপন করেনি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বিনাইপাড় গ্রামের ২০২১ সালের ২ জুলাই রাত ১১টায় ১৬ বছর বয়সী কিশোরী একই বাড়ির পাশাপাশি ঘরের ‘অভিযুক্ত’ যুবকের (২১) সন্তান সম্ভবা বোনকে দেখাশুনার জন্য রাত্রিযাপন করেন। সেই সুযোগে ওই যুবক কৌশলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ করে। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি না জানানোর জন্য ওই যুবক কিশোরীকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ায় সে কাউকে কিছু জানায়নি। ওই ঘটনার পরও ভয় দেখিয়ে পরবর্তী সময়ে কিশোরীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ওই যুবক। এক পর্যায়ে কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি তার পরিবারকে জানায়। তখন জানা যায়, কিশোরী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এরপর কিশোরীর মা বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় ওই যুবককে একমাত্র আসামি করে ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর এজাহার দায়ের করে। এরপর ওই যুবককে একই দিন ভোর পৌনে ৩টায় গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ওইদিন দুপুর ১টায় ‘অভিযুক্ত’ যুবক ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় কুমিল্লার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা সুলতানার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দি শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও