‘পাজেরোর ভেতরেও নারী অনিরাপদ’
১০ আগস্ট ২০২২ ২২:৩৯
ঢাকা: গণপরিবহনে অব্যহত নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনার আঁচ সবার গায়েই লাগবে। এভাবে চলতে থাকলে কোটি টাকার পাজেরো গাড়িতে চড়া কোনো নারীও নিরাপদ থাকবে না।— গণপরিবহনে অব্যাহতভাবে ধর্ষণের ঘটনা ও নারীর নিরাপত্তাহীনতার প্রতিবাদ ও প্রতিকারের দাবিতে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন।
বুধবার (১০ আগস্ট) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির উদ্যোগে ৬৬টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম এই মানববন্ধন আয়োজন করে।
মানববন্ধনে রাবেয়া খতুন বলেন, ‘গণপরিবহনে অব্যহত নারী ধর্ষণ ও হয়রানির ঘটনাগুলোর প্রতি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। গাজীপুরের রাস্তায় কীভাবে নারীর নির্মম পরিণতি হলো, তা আপনারা দেখেছেন। নিজের স্বামীকে নিয়ে এসেও তিনি শক্তিহীন ছিলেন। তারা ডাকাতের বেশে প্রবেশ করল। ডাকাতি শেষে নারীর প্রতি আগ্রাসন চালাল। এ ঘটনা নিছক নারীর ঘটনা নয়। এই কলঙ্ক কেবল নারীর গায়ে লাগেনি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গায়ে লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘জানতে চাই, কয়টা বাসের রেজিস্ট্রেশন এখনো পর্যন্ত ক্যানসেল করা হয়েছে? মন্ত্রিপরিষদের উদ্দেশে বলি— আপনাদের কারোর গায়ে কি আঁচ লাগেনি? গণপরিবহনে একজন নারীও যদি ধর্ষণের শিকার হয়ে যায়, তবে আপনার কোটি টাকার পাজেরোর ভেতরেও নারী অনিরাপদ।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘সাম্প্রতিক নারী নির্যাতনের নানা নতুন ধরণ যুক্ত হচ্ছে। এমতাবস্থায় পুরনো আইন দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় বিচারের কাজ পরিচালনা করা যাবে কি-না তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। যখন নির্যাতনের শিকার হয়, তখন নির্যাতনের শিকার নারীর ওপরই দোষ দেওয়া হয়। আমরা চাই না, কোনো ধর্ষণের শিকার নারীকে হেনস্তা করা হোক। এই প্রথা বন্ধ করতে হবে। অভিযুক্তকে প্রমাণ করতে হবে, সে দোষী নয়!
এ সময় তিনি গণপরিবহনে ধর্ষণের ঘটনা প্রতিহত করতে গণপরিবহন মালিক, গণপরিবহন শ্রমিক ও গণপরিবহনমন্ত্রীসহ সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সকলকে নিজ নিজ দায়বদ্ধতা থেকে জোরালোভাবে কাজ করতে হবে। নারী কোথাও নিরাপদ নয়, নারীকে কেউ নিরাপত্তা দেবে না। তার নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই আদায় করতে হবে। সবধরনের ধর্ষণের ঘটনা প্রতিহত করতে সামাজিক আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।’
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অ্যাডভোকেট রুমা সুলতানা বলেন, ‘ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে মামলাই নেওয়া হয় না। কিছু ক্ষেত্রে মামলা নেওয়া হলেও এর পরবর্তী প্রক্রিয়া ঠিকঠাক এগোয় না। এখানে অনেকগুলো সেক্টর সংযুক্ত। যথেষ্ট শাস্তির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বিচারই তো শেষ হয় না। পুরনো আইনে যেহেতু সমাধান হচ্ছে না। আমাদের এখন নতুন আইন লাগবে কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে।’
গণপরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যেমস্ত শ্রমিকরা ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত, কেন তাদের বিষয়ে সক্রিয় হচ্ছেন না? তাদের গণপরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর কাছে দাবি থাকবে, আপনারা এসব ব্যাপারে সোচ্চার হোন।’
মানববন্ধনে বক্তারা প্রতিনিয়ত গণপরিবহনে নারীর প্রতি সংগঠিত ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, বিষয়টি খুবই পুরনো এবং প্রায়ই ঘটছে। এসব ঘটনার বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ করা যাচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিরোধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতির কথা বলা হলেও এর বাস্তবিক প্রয়োগ নেই। ফলে একটি ঘটনার রেশ না কাটতেই পুনরায় আরও অসংখ্য ঘটনা ঘটছে।
বক্তারা এ সময় গণপরিবহনে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। তারা বলেন, প্রতিটি ঘটনার মামলার বিচারকাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। টহলরত পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। যারা সড়কপথে আছে তাদের আচরণগত পরিবর্তনের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রকৃত অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং ঘটনা প্রতিহত করতে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে পুলিশ প্রশাসনের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- গণস্বাক্ষরতা অভিযানের শামসুন্নাহার পলি, ওয়াইডব্লিউসিএ অব বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেটর বিনা অধিকারী, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ’র নুরুন্নাহার, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির অন্যতম সদস্য দিলশাত আরা, ব্লাস্টের শাহরিয়ার হোসেন, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের উপপরিচালক শাহনাজ সুমী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের আইনজীবী রুমা সুলতানা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেকুলাল ঘোষ কমল।
এছাড়াও মানবন্ধনে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোবারক হোসেন। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক জনা গোস্বামী।
সারাবাংলা/আরএফ/আরআইআর/পিটিএম