মোরেলগঞ্জে জোয়ারের পানিতে পৌরসভাসহ প্লাবিত ৫০০ মাছের ঘের
১৩ আগস্ট ২০২২ ২১:২৮
বাগেরহাট: জেলার মোরেলগঞ্জে পূর্ণিমার জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে প্লাবিত হয়ে দিনে-রাতে দু’বার পানির নিচে তলিয়ে যায় এক সময়ের ছোট ক্যালকাটা খ্যাত মোরেলগঞ্জ পৌর বাজারসহ নিম্নাঞ্চলের ২০টি গ্রাম। বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ শতাধিক মাছের ঘেরে প্রবেশ করছে অতিরিক্ত পানি। পানির তোরে ভেঙে গেছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও কাঁচা-পাকা রাস্তা। ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় জোয়ারের সময় যানবাহন ও মানুষ চলাচলে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে স্থবির হয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি ও শিক্ষা কার্যক্রম।
শনিবার (১৩ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের কাপুডিয়াপট্টি সড়ক, কাঁচা বাজার, কেজি স্কুল সড়ক, ফেরিঘাট সংলগ্ন কালাচাঁদ মাজার এলাকা, সানকিভাঙ্গা, বারইখালী, গ্রাম প্লাবিত হয়ে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩/৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দুপুরের রান্না হচ্ছে না বারইখালী ফেরিঘাট এলাকা ও খাউলিয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়ীয়া গ্রামে। পানিতে তলিয়ে গেছে ওই সব এলাকার রান্নাঘর। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পূর্ণিমার জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে ২০ গ্রাম।
মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের অনেক পরিবার ঘরে তালা দিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা জানান, গাবতলা গ্রামটি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় পানির প্রবাহ সেখানে বেশি। ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার নিয়মিত পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করে আসছে। দিনে ও রাতে দুইবার পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে অনেক পরিবার নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। ওই গ্রামের কোনো বাড়িতে রান্না করার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাড়িঘর সব তলিয়ে গেছে।
অপর দিকে খাউলিয়া ইউনিয়নে দেখা গেছে, সন্ন্যাসী হয়ে কেয়ার বাজার পাকা রাস্তাটি পানির চাপে ভেঙে সেখানে একটি খাল হয়ে গেছে। খাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে ৬টি রাস্তা পানির তোরে ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
নদীর তীরবর্তী বহরবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান টি এম রিপন জানান, তার ইউনিয়নের পশ্চিম বহরবুনিয়া, উত্তর ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী গ্রামের ২ শতাধিক মৎস্য ঘের পানির নিচে। জিউধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাদশা জানান, তার ইউনিয়নে পালেরখণ্ড, কাকড়াতলী, শনিরজোড়, সোনাতলা, চন্দনতলা গ্রামে ৫০টির মতো মাছের ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বেশ কিছু কাঁচা ঘর ভেঙে গেছে।
হোগলাবুনিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান বলেন, তার ইউনিয়নের বদনীভাঙ্গা, পাঠামারার শতাধিক মাছের ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানির চাপে এসব ঘেরের বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে বেড়িয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে শতাধিক ঘের ব্যবসায়ী। বদনীভাঙ্গার বিএস রতমতিয়া দাখিল মাদরাসা হয়ে সেকেন্দার আলীর দোকান পর্যন্ত ১ কিলোমিটার ইটের রাস্তা ও মুসলিম ইট ভাটা হয়ে পাঠামারা হাজ্বিগঞ্জের ২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার বিনয় কুমার রায় বলেন, ‘এ পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়নের ৫ শতাধিক মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্নিট এলাকায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, কৃষি ও মাছের ঘেররগুলোর খোঁজ খবর নিয়ে একটা তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য (বাগেরহাট-৪ আসন) অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন বলেন, ‘খাউলিয়া ইউনিয়নের কুমারখালী হয়ে বহরবুনীয়া ইউনিয়নের খষিয়াখালী পর্যন্ত নদী প্রটেকশস ওয়াল করার প্রস্তাবটি একনেক সভায় পাস হয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। নদী প্রটেকশন ওয়াল হলে এভাবে আর সাধারণ মানুষকে পানিতে ডুবতে হবে না।’
সারাবাংলা/এনএস