Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘শিশুটি হাত-পা নাড়াচ্ছিল, বাঁচাতে পারলাম না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৫ আগস্ট ২০২২ ২৩:২০

ঢাকা: ‘দুপুর পর্যন্ত কাজ শেষ করে ভাত খেয়ে আরাম করছিলাম বিল্ডিংয়েই। হঠাৎ করে শুনি একটা বিশাল আওয়াজ। রাস্তার দিকে তাকাতেই দেখি একটা বাস বামদিকে সাইড করতেছে। তার পাশে একটা প্রাইভেটকারের উপরে গার্ডার পড়েছে। দৌড়ে ছুটে যাই আরও কয়েকজন মিলে। গাড়ির কাছে যেতেই ভেতরে থাকা মানুষের আওয়াজ শুনছিলাম। রড-শাবল যা পেয়েছি হাতের কাছে তা দিয়েই গার্ডার সরানোর চেষ্টা করছিলাম। গাড়ির সামনের দিক থেকে একজন বের হয়ে আসে। মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছিল তার। দরজা ভেঙে এক মহিলাকেও উদ্ধার করি। তখন ভেতরে দেখি একটা শিশুও হাত-পা নাড়াচ্ছিল। কিন্তু তারে বের করাটা আমাদের সামর্থ্যে কুলায় নাই। গার্ডার সরাতে পারলে হয়তো বাঁচাতে পারতাম। কিন্তু রড-শাবল দিয়ে তো আর গার্ডার সরে না। বাচ্চাটাকেও তাই বাঁচাতে পারি নাই।‘

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় সারাবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে এভাবেই কথা বলছিলেন ইমরান হোসেন। উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ফ্লাইওভারের গার্ডার চাপায় প্রাইভেট কারের ভেতরে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দ্রুত ছুটে যাওয়ার পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়দের সঙ্গে গাড়ির যাত্রীদের উদ্ধারের চেষ্টা করেন তিনিও।

পেশায় রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করা ইমরান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গার্ডার যখন উপরে তোলা হচ্ছিল তখন দেখেছিলাম। শুনলাম ওটাকে নাকি গাড়িতে তুলে নেবে। ভাত খেয়ে তখন একটু বিশ্রাম করছিলাম। হঠাৎ শুনি বিকট শব্দ। রাস্তায় গাড়ি চলায় প্রথমে ভেবেছিলাম সম্ভবত এক গাড়ি আরেকটাকে মেরে দিয়েছে। আমি যে বিল্ডিংয়ে কাজ করি তার সামনের দিকে তাকাতেই দেখি প্রাইভেটকারের উপরে গার্ডার। তার পেছনে একটা বাস ব্রেক চেপে বাম দিকে নিচ্ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আশেপাশের লোকজন সবাই ছুটে আসলেও গার্ডার সরানোর মতো কিছু ছিল না। আমরা কয়েকজন রড-শাবল হাতের সামনে যাই পেয়েছি তা নিয়ে গার্ডার সরানোর চেষ্টা করছিলাম। তখন আর অন্য কেউ ছিল না। গাড়ির পাশে গিয়ে দেখি গার্ডার না সরালে কাউকে বের করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাও আমরা চেষ্টা করি ভেতর থেকে মানুষদের বের করতে। তাদের আওয়াজ আমরা শুনছিলাম। এমন সময় মাথা ফাটা অবস্থায় একজন বের হয়ে আসে। কিন্তু সেদিক দিয়ে পেছনের সিটে থাকা যাত্রীদের বের করা সম্ভব না।’

ইমরান বলেন, ‘এরপরে আমরা দরজা ভেঙে ফেলি। সেখান থেকে এক নারীকে বের করার পরে ভেতরের দিকে তাকাই। তখন সেখানে একটা শিশু হাত-পা নাড়াচ্ছিল। কিন্তু গার্ডার এমনভাবে পড়েছে যে সেখান থেকে তাকে আর আমরা বের করতে পারছিলাম না। কিন্তু রড, লাঠি আর শাবল দিয়ে তো আর গার্ডার সরানো সম্ভব না।’ গার্ডার দ্রুত সরানো সম্ভব হলে হয়তোবা শিশুটাকে বাঁচাতে পারতাম বলে মন্তব্য করেন ইমরান।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘গাড়ি থেকে যে মহিলাকে বের করেছিলাম তিনি কান্না করছিলেন জোরে জোরে। আমরা ওই সময় অনেকভাবেই চেষ্টা করি তাকে বের করার জন্য। কিন্তু সম্ভব হয় নাই আর। তার খানিক পরে উদ্ধারে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা। ততক্ষণ আর বেঁচে ছিল না শিশুটা।’

এর আগে, সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় জসিমউদ্দিন মোড় সংলগ্ন সড়কে থাকা আড়ংয়ের সামনে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) স্থাপনা প্রকল্পের একটি গার্ডার প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে। এতে পাঁচ আরোহী নিহত হন। আহত হন আরও দুই আরোহী। গার্ডারের নিচে প্রাইভেটকার চাপা থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব হয়নি স্থানীয়দের পক্ষে। পরে এক্সেভেটর দিয়ে গার্ডার সরিয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

দুর্ঘটনার শিকার প্রাইভেটকারে ছিলেন একই পরিবারের সাত সদস্য। এর মাঝে নিহতরা হলেন- রুবেল (৬০), ফাহিমা (৪০), ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শনিবার হৃদয় ও রিয়ার বিয়ে হয়। তাঁরা আজ ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। হৃদয়ের পরিবার দক্ষিণখান থানার কাওলা আফিল মেম্বারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। আর কনে রিয়া মনির বাড়ি আশুলিয়ার খেজুরবাগানে আসরাফউদ্দিন চেয়ারম্যান বাড়ি এলাকায়। হৃদয় ও রিয়া মনি গাড়িতে থাকলেও সেখান থেকে উদ্ধার করে তাদের গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

উত্তরা গার্ডার নিহত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর