বাসচাপায় মৃত্যু, পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ আদেশ
১৭ আগস্ট ২০২২ ১৯:২৭
ঢাকা: বাসচাপায় বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীকে হত্যার ঘটনায় তার পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এ,এইচএম হাবিবু রহমান ভূঁইয়া এ রায় ঘোষণা করেন। বুধবার (১৭ আগস্ট) আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ হওয়া বিবাদীরা হলেন মালিক মো. নুরুল ইসলাম এবং মো. সোহাগ মিয়া।
রায়ে উল্লেখ করা হয়, এ কথা সত্য যে, মানুষ মরণশীল, যে কোনো সময় যে কোনো মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। তবে প্রতিটি মানুষ তার স্বাভাবিক মৃত্যু কামনা করে। এ দেশের মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুসহ গড় মৃত্যুর বয়স অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ৬৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার দাবি কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। বরং তা স্বাভাবিক ও সাধারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।
মৃত পিন্টু শেখ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। সে ক্ষেত্রে তার ৬৫ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সম্ভাবনাকে যথাযথ ও স্বাভাবিক ছিল মর্মে বিবেচিত হয়। ফলে তার আরও ৩৭ বছর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ ছিল। কিন্তু মামলার ৬ নং প্রতিপক্ষ ড্রাইভার সোহাগ দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে তাকে চাপা দিয়ে তার অকাল মৃত্যু ঘটান।
এ ক্ষেত্রে মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১২৮, ১২৯ এবং ১৩০ ধারার বিধানমতে পিন্টু শেখ এর ওয়ারিশগণ ক্ষতিপূরণ লাভের অধিকারী হবেন। এ আদালতের বিবেচনায় নিহত পিন্টু আরও ৩৭ বছর তথা ৪৪৪ মাস চাকরি করলে মাসিক গড়ে ২০ হাজার টাকা বেতন প্রাপ্তির মাধ্যমে মোট ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রাপ্ত হতেন। তা ছাড়া তিনি এবং তার আত্মীয়-স্বজন পরস্পর তাদের ভালোবাসা ও আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তা বাবদ ক্ষতিপূরণ লাভের অধিকারী হন।
এ আদালত উক্ত বিষয়টি বিবেচনায় তারা ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা উক্তরুপ ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত হওয়ার অধিকারী হবেন। এভাবে মৃত পিন্টু শেখের ওয়ারিশগণ ৮৮ লাখ ৮০ হাজার ও ১১ লাখ ২০ হাজার মিলে মোট ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ লাভের অধিকারী।
মামলার ৬ নং প্রতিপক্ষ ওই গাড়ির চালক হিসেবে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পিন্টু শেখের মৃত্যু ঘটান এবং ৫ নং প্রতিপক্ষ গাড়ির মালিক। ফলে তারা উভয়ে যৌথভাবে ও পৃথকভাবে টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হন। তাই ৬০ দিনের মধ্যে ৫-৬ নং প্রতিপক্ষকে নিহতের স্ত্রী ও কন্যা এবং ইসলামী শরিয়া আইন অনুযায়ী নিহতের আর যারা ওয়ারিশ রয়েছে তাদের এক কোটি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হলো।
মামলায় অভিযোগে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিন্টু শেখ দুপুরে রাজধানীর রামপুরা থানাধীন এলাকা থেকে বাংলামটরস্থ বাসা হতে ‘বাইসাইকেল যোগে আসার পথে রামপুরা থানাধীন ডিআইটি রোডস্থ মালিবাগ চৌধুরীপাড়া সিএনজি পাম্পের নিকট পৌঁছামাত্র রামপুরা ব্রিজের দিক থেকে মালিবাগগামী সু-প্রভাত বাস যার রেজি: নং ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৯০১৬ এর ড্রাইভার মো. সোহাগ মিয়া বেপরোয়াভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে পিন্টু শেখকে (২৮) পেছন দিক হতে চাপা দেন। ফলে সাইকেলসহ বাসের নিচে পড়ে গুরুতর জখম হন। স্থানীয় লোকজন তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সারাবাংলা/এআই/একে