হিমাগার ভরা আলু, বাজার চড়া হলেও দাম পাচ্ছেন না চাষিরা
২৩ আগস্ট ২০২২ ০৮:১০
জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের হিমাগারগুলোতে প্রকার ভেদে প্রতি কেজি আলু ১৬ থেকে ১৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। আর ভোক্তাদের বেশি দামে আলু কিনতে হলেও বিপাকে পড়েছেন আলু ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক ও চাষিরা। খুচরা বাজারে আলুর দাম বেশি হলেও পাইকারি বাজারে দাম ও চাহিদা না থাকায় লোকসান গুণতে হচ্ছে তাদের।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর আলুর ভালো দাম পেয়ে চাষিরা আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন। শুধু চাষিরাই নয় ব্যবসায়ীরাও এবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আলুর চাষ করেন। ব্যবসায়ীরা মৌসুমের শুরুতে হিমাগার মালিকদের কাছ থেকে গত বছরের মত লাভের আশায় ঋণ নিয়ে জেলার ২০টি হিমাগারে আলু রাখেন।
মৌসুমের শুরুতে এসব হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয় (৬৫ কেজি ওজনে) ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৩ বস্তা। সংরক্ষিত আলু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৫ নভেম্বর। এসব হিমাগারে ১৭ লাখ ৫১ হাজার ১৫৩ বস্তা আলু এখনও মজুত রয়েছে। গত বছর এই সময়ে মজুতের প্রায় বেশিরভাগ আলু বিক্রি হয়েছিল।
চাষী, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মৌসুমে আবওহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার সবখানে আলুর উৎপাদন ভালো হয়েছিল। গত বছর দাম ভালো পাওয়ার কারণে মৌসুমের শুরুতে বিক্রি না করে এবার হিমাগারে আলু মজুত বেশি করেছে। তাতে হিমাগারের খরচসহ প্রতি বস্তা (৬৫ কেজি) প্রকার ভেদে আলুর খরচ পড়েছে ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে আলু প্রতি বস্তা ১০২০ থেকে ১০৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গড়ে বস্তা প্রতি চাষি বা ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হচ্ছে ২৫০ টাকা।
বাজারে আলুর যে দাম তাতে আরও মোটা অংকের লোকসান গুণতে হবে চাষি ও ব্যবসায়ীদের। সঙ্গে আলু কিনতে ব্যবসায়ীদের দেওয়া ঋণের টাকা এবং আলু রাখার ভাড়ার টাকা ওঠাতে বড় বেকায়দায় পড়েছেন হিমাগার মালিকরা। লোকসান ঠেকাতে আলু রফতানির দাবি জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।
হাট-বাজার ও হিমাগারগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৬৫ কেজি ওজনের কার্ডিনাল (লাল) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১০১০ টাকায়, ডাইমন্ড (সাদা) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১০৬০ টাকায়, দেশি পাকরি (লাল) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১ হাজার ১৫০ টাকায় এবং রুমানা (পাকরি) জাতের আলু প্রতি বস্তা ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, গত বছরের এই সময়ে দাম ভালো থাকায় প্রতিটি হিমাগারে ব্যস্ততা ছিলো শ্রমিক ও কর্মচারিদের। অথচ এ বছরের চিত্র উল্টো। আলু সংরক্ষণকারীদের উপস্থিতি এবার নেই বললেই চলে। এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত আলুর তিন ভাগের এক ভাগ পরিমাণও বের হয়নি।
এবারে এম ইসরাত কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা ১ লাখ ৪৪ হাজার বস্তা আলুর মধ্যে গত রোববার (১৪ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত বের হয়েছে মাত্র ৩৪ হাজার বস্তা। একই চিত্র পুনট কোল্ড স্টোরেজ, আর. বি স্পেশালাইস্ট, নরওয়েস্ট, নর্থপোল, সাউথপোল, পল্লী হিমাগার, সালামিন ফুড্স, মোল্লা, হিমাদ্রী, মান্নান অ্যান্ড সন্সসহ জেলার ২০টি হিমাগারে।
এম ইসরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার জানান, ডিজেলের দাম বাড়ার ফলে সারা দেশে সবকিছুর দাম হু হু করে বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ আলুর দাম কমেই যাচ্ছে। এ কারণে চাষি ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি লোকসান গুনতে হচ্ছে হিমাগার মালিকদেরও। বর্তমানে হিমাগারে থাকা লাখ লাখ বস্তা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। আর আলু মজুদের সময় হিমাগার মালিকরাও কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীদের।
গুণীমঙ্গল বাজারের ব্যবসায়ী মোজাফর হোসেন জানান, গত বছর আলুর দাম বেশি পাওয়ায় লাভের মুখ দেখেছিলাম। তাই এ বছর ঋণ নিয়ে দেশি পাকড়ি লাল জাতের সাড়ে ৩ হাজার বস্তা, স্টিক লাল জাতের ১১ হাজার বস্তা এলাকার কয়েকটি হিমাগারে রেখেছি। বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা তাতে এই মুহূর্তে আলুগুলো বিক্রি প্রায় ৩৮ লাখ টাকা লোকসান হবে। এবার আলু রেখে বড় ভুল হয়েছে।
সড়াইল গ্রামের কৃষক সুজাউল ইসলাম বলেন, ‘এবার আলু নিয়ে বড় বিপদে আছি। মৌসুমের শুরুতে আলু বিক্রি না করে কেন হিমাগারে রাখার খেসারত বড় করেই গুণতে হচ্ছে। লাভের আশায় আলু রাখলাম, এখন লাভ তো দূরের কথা উল্টো মূলধন খুঁইয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আলুর দরপতন নিয়ে এবার সবাই চিন্তিত। যেসব কোম্পানি আলু বিদেশে রফতানি করে তাদের সঙ্গে আমরা দফায় দফায় আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। দেখা যাক কি হয়। তবে খুচরা বাজারে আলুর দাম বেশি নিয়ে আমরা বাজারে মনিটরিং অব্যাহত রেখেছি।’
সারাবাংলা/এমও