কত আসনে ইভিএম, সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে
২১ আগস্ট ২০২২ ২১:২৭
ঢাকা: নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশন তার সক্ষমতা ও যৌক্তিকতা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করবে। তবে কতগুলো আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর রোববার (২১ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
ইভিএমে ভোট কম পড়া ও কারচুপির অভিযোগ ‘অপপ্রচার’ দাবি করে মো. আলমগীর বলেন, আপনি আমাকে বলবেন, আমি খারাপ। এর তো প্রমাণ দিতে হবে। না হলে আমি খারাপ হিসেবে গণ্য হবো কেন? তার মানে এটা অপপ্রচার। যতক্ষণ না আপনি প্রমাণ দেবেন ইভিএমে ভোট কারচুপি করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি এটা বিশ্বাস করব না। কারচুপির বিষয়টি হচ্ছে অভিযোগ, কিন্তু প্রমাণিত নয়। যারা অভিযোগ দিয়েছেন সেগুলো আমরা যাচাই করছি। কিন্তু যারা আমাদের কাছে এসে অভিযোগ দেননি, সেটা তো আমরা আমলে নিইনি।
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের মধ্যে যারা টকশোতে অংশ নিয়েছেন তারা ইভিএমের পক্ষে বলেছেন। ইভিএমে ভোট হলে জাল-জালিয়াতি করা যায় না। ভোট ভালো হয়। অর্থাৎ ইভিএমের পক্ষে তারা বলেছেন। আবার কেউ বলেছেন ইভিএমের প্রতি আস্থা নেই। এটা আমরা এখনো বুঝি না।
ইভিএমের অসুবিধার চেয়ে সুবিধা বেশি দাবি করে তিনি বলেন, ইভিএমে কারচুপি নিয়ে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন তা প্রমাণে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেও কেউ সেটা প্রমাণ করতে আসেনি। বিএনপি ইভিএম নিয়ে অভিযোগ তুললেও তারা সংলাপে এসে বা অন্য কোনোভাবে ইসির কাছে লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ না দেওয়ায়, তা আমলে নেওয়া হয়নি। অন্য দলের মধ্যে যারা ইসিতে গিয়ে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ দিয়েছে, তা যাচাই করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা শুধু বাইরে থেকে বলেন। তার ভিত্তিতে তো একটি দেশ বা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। একটি প্রতিষ্ঠান চলে তার প্রমাণের ভিত্তিতে, তার দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে। এজন্য ইভিএমের পক্ষ যেমন আছে, তেমনি বিপক্ষও আছে। আবার ইভিএমের অনেকগুলো সুবিধাও আছে। যেমন- এতে একজনের ভোট অন্যজন দিয়ে দিতে পারে না। ব্যালটে যেমন একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারে। ইভিএমে সেই সুযোগ নেই।
তিনি জানান, অনেকগুলো রাজনৈতিক দল ৩০০ আসনে ইভিএম চায়। আবার কোনো কোনো দল একটি আসনেও চায় না। আমরা সবার কথা সমানভাবে গুরুত্ব দিতে পারব না। আমরা সক্ষমতা ও ইভিএমের যৌক্তিকতার ওপর গুরুত্ব দেবো।
যেসব দল ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের দাবি করেছে, সেটার প্রতি গুরুত্ব দেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, প্রশ্নই ওঠে না। আমরা কারও মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেব না। আমরা একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট করার জন্য সক্ষমতা ও ইভিএমের সুবিধা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বড় ধরনের অনিয়মে ইসির হাতে ভোট বাতিলের বিধান যুক্ত করে সংশোধনী প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আরপিও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যথেষ্ঠ। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় একটু অস্পষ্টতা আছে। আমাদের মনে হয়েছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কিছু কিছু জায়গায় যদি সংশোধন করা হয়, বিষয়টি আরও ভালো হবে। কমিশন মনে করেছে অল্প কয়েকটি জায়গায় পরিবর্তন বা সংশোধন করতে পারলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখি, সহজে সেটা মোকাবিলা করা সম্ভব।
জনশুমারির চূড়ান্ত রিপোর্ট পেলে সীমানা পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে উল্লেখ করে আলমগীর বলেন, আমরা শুমারির প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছি চূড়ান্ত রিপোর্ট পাইনি। আমাদের হোমওয়ার্ক চলছে। তথ্য সংগ্রহ চলছে। শুমারির চূড়ান্ত রিপোর্ট পেলেই সীমানা পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর বেশিরভাগই ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিরোধিতা করেছেন। তবে এর বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগসহ কয়েকটি সমমনা দল। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোট করার দাবি জানিয়েছেন। এবারের সংলাপে অংশ নেওয়া ২৬ দলের মধ্যে ১৯টিই নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এদের কেউ কেউ ইভিএম বিপক্ষে, কেউ কেউ আবার আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যবহার, কেউবা আবার শুধুমাত্র স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইভিএম চায় না বলে জানিয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/এএম