Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজশাহীতে ‘অঘোষিত ধর্মঘট’ প্রত্যাহার, চললো বাস-অটোরিকশা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ আগস্ট ২০২২ ২২:১০

রাজশাহী: গত দুই দিনে দুর্ভোগের নগরী পরিণত হয়েছিল রাজশাহী। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে অটোরিকশা বন্ধ রেখে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনে নেমেছিলেন চালক-মালিকরা। প্রথম দিন রিকশা চললেও দ্বিতীয় দিন সড়কে কমেছে রিকশা। তবে জনদুর্ভোগ কমাতে সোমবার (২৯ আগস্ট) সকাল থেকে সড়কে নেমেছিল বাস। বিভিন্ন রুটের চলাচল করা বাসগুলো এদিন সিটি সার্ভিস হিসেবে চলে।

সিটিবাস চালানোর ঘোষণার পর আন্দোলন থেকে সরে আসে অটোরিকশা চালক ও মালিকরা। বিকাল পাঁচটায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করে আবারও অটোরিকশা চালানো শুরু করে। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে অঘোষিত এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল ইজিবাইক শ্রমিক চালক সমিতি। তারা কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা ছাড়া ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়।

বিজ্ঞাপন

গতকাল রোববার (২৮ আগস্ট) ভোর থেকে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করে দেন মালিক ও চালকরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এমন কাণ্ডে বিপাকে পড়েন নগরবাসী। দ্বিতীয়দিনেও এমন ভোগান্তি ছিল। অফিসগামী লোকজন এবং স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদেরও পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। বাদ যাননি রোগীরাও। অটোরিকশা থেকে নামিয়ে চালকদের হেনস্থা করতেও দেখা যায় আন্দোলনকারীদের। বেশ কিছু অটোরিকশা ও রিকশা ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারীরা।

পরিবহন সংকটে যাত্রীদের পকেট কেটেছেন রিকশাচালকরাও। গন্তব্যে পাড়ি দিতে বাড়তি ভাড়াও গুণেতে হয়েছে। ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে গতকাল রোববার নগরভবনে গিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন না থাকায় তাৎক্ষণিক ঘোষণা আসেনি। সোমবারও তারা মেয়রের সাক্ষাৎ পাননি। তবে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন।

সোমবার (২৯ আগস্ট) সন্ধ্যায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইজিবাইক শ্রমিক চালক সমিতির সভাপতি মফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ভাই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমরা কোনো আশ্বাস পাইনি তাই ধর্মঘট তুলে নিলাম। বিকেল থেকেই অটোরিকশা চলাচল শুরু করেছে। আমরা অটোরিকশা চালাবো। কার ইন্ধনে অঘোষিত ধর্মঘট, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।’

বিজ্ঞাপন

রাজশাহীতে অটোরিকশার চালক ও মালিকদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে দু’টি সংগঠন। তাদের মধ্যস্থতায় গত বছরের জানুয়ারিতে অটোরিকশার ভাড়া বাড়ানো হয়। এখন আবার ভাড়া বাড়ানোর জন্য রোববার থেকে চালকদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে। সে বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানতো না চালক-মালিকদের সংগঠন দু’টি।

গতকাল রোববার চালকরা নগর ভবন ঘেরাও করতে এসে দাবি করেন, তাদের কোন ‘নেতা’ নেই। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তারা নিজেরাই ভাড়া বৃদ্ধির দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে গোপনে গোপনে এই সংগঠন করে সংঘবদ্ধ হয়েই আন্দোলন শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

অটোরিকশা চালকদের নতুন একটি সংগঠন ‘ইজিবাইক শ্রমিক চালক সমিতি’ নামের এই সংগঠনের একটি কমিটির তালিকাও পাওয়া গেছে। ২২ সদস্যের এই কমিটিতে উপদেষ্টা হিসেবে এক নম্বরে রয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনারের নাম ও মোবাইল নম্বর। এ ছাড়া সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটির সবার নাম ও মোবাইল নম্বর এতে আছে। এই কমিটি উপদেষ্টা হিসেবে নাম থাকার বিষয়ে কথা বলতে কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেনকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

এদিকে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে সিটিবাস চলাচলের ঘোষণা দেয় বাস মালিক সমিতি। রাজশাহীর দুই রুটে সোমবার সকাল থেকে অল্প কিছু বাস দিয়ে চলাচল করে। রাজশাহী নগরী উপকণ্ঠ নওহাটা থেকে রেলগেট হয়ে কোর্ট পর্যন্ত চলাচল করে। আরেকটি কাটাখালী থেকে কোর্ট পর্যন্ত চলেছে। অটোরিকশার ভাড়ায় গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন যাত্রীরা। এতে প্রথম দিনের চেয়ে পথের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমেছে।

তবে এই সিটিবাস চালানো সাময়িক বলছেন বাস মালিক সমিতির নেতারা। তারা বলছেন, ‘রাজশাহী নগরীতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সাময়িক ভাবে এই বাস চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অটোরিকশা চলাচল করলে আবারও বাস বন্ধ হয়ে যাবে।’ নগর কর্তৃপক্ষ যদি চাই তাহলে তারা সিটি সার্ভিস চালাবে বলে জানান মালিক সমিতির নেতারা।

রাজশাহী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেন, ‘অটোরিকশা বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তির মুখে পড়েছে। তাদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করেই শহরে ৩০টির মতো বাস নামানো হয়েছে। তবে এটা সাময়িক সিদ্ধান্ত। অটোরিকশা যদি আবার আসে তাহলে তো বাস চালানোর জায়গা পাওয়া যাবে না।’

৯৬.৭২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রাজশাহী নগরীতে প্রায় ১৬ লাখ লোকের বাস। গণপরিবহন বলতে ভরসা কেবল ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা। সিটি কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০ হাজার অটোরিকশা এবং ৫ হাজার রিকশা চলাচল করে নগরীতে। কিন্তু চলাচলকারী রিকশা ও অটোরিকশার সংখ্যা এর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি।

রিকশা-অটোরিকশার নিবন্ধনের পাশাপাশি চালকদেরও নিবন্ধন দেয় সিটি কর্পোরেশন। তবে এসব যানবাহনে নিয়ন্ত্রণ নেই রাসিকের। ভাড়া নির্ধারণ করা থাকলেও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলে সর্বত্র।

এরমধ্যেই ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে নগরবাসীকে জিম্মি করে বসেন অটোরিকশা মালিক ও চালকরা। এই পরিস্থিতিতে নগরীতে সিটি সার্ভিস বাস নামানোর দাবি জানিয়েছেন নগরীর বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ। বাস নামানোর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসাও করা হয়েছে। ব্যবহারকারীরা জানিয়েছে, অন্য বিভাগীয় শহরের মত এই শহরেও সিটিবাস চলুক। এসে করে অটোচালকদের নৈরাজ্য কমবে। মানুষের সময়ও বাঁচবে।

তবে নগরীতে এখনই সিটি বাস সার্ভিস চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব। তিনি বলেন, ‘জনদুর্ভোগ লাঘবে আপাতত নগরীর দুটি রুটে ৩০টি যাত্রীবাহী বাস নামানো হয়েছিল। এগুলো অটোরিকশার ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করবে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন, নগর পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেই এসব বাস নামানো হয়েছে। সিটি সার্ভিস হিসেবে বাস নামানো গেলে নগরীর যানজট অনেকাংশে কমে যাবে।’

নগরীতে সিটি সাার্ভিস চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে এই পরিবহন মালিক নেতা বলেন, ‘রাজশাহী ছোট নগরী। এখানে সিটি সার্ভিস হিসেবে বাস চালু করা লাভজনক হবে না। তবে প্রতিদিন আমাদের অন্তত কয়েকশ বাস বসে থাকে। এগুলো সিটি সার্ভিস হিসেবে নামানো যেতে পারে। তবে এর জন্য নগর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত লাগবে।’

সারাবাংলা/এমও

অঘোষিত ধর্মঘট নগর কর্তৃপক্ষ বাস-অটোরিকশা রাজশাহী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর