আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা ৪ বার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবে
৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:২৮
ঢাকা: আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ঋণ/লিজ/বিনিয়োগ পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিলের শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) অতিমারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এবং বহিঃবিশ্বে যুদ্ধাবস্থাসহ বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় ঋণ পুনঃতফসিলের শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুসারে, যেসব গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করছেন না, তাদেরকে ৪ বার ঋণ পুনঃতফসিল বা ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই খেলাপিরা ঋণ পরিশোধে ২১ বছর সময় পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে প্রথম দফা মোট বকেয়ার ৪ শতাংশ অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির কমপক্ষে ৭ শতাংশ, এই দুইয়ের মধ্যে যা কম, সে পরিমাণ অর্থ ডাউনপেমেন্ট দিতে হবে। দ্বিতীয় দফা ডাউন পেমেন্টের পরিমাণ হবে মোট বকেয়ার ৫ শতাংশ অথবা, মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির অন্যূন ৮ শতাংশ এই দুইয়ের মধ্যে যা কম। তৃতীয় দফা মোট বকেয়ার ৬% অথবা, মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির অন্যূন ৯%, এই দুইয়ের মধ্যে যা কম- সে পরিমাণ অর্থ ডাউন পেমেন্ট দিতে হবে। চতুর্থ দফা পুনঃতফসিল/পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তৃতীয় দফা পুনঃতফসিল/পুনর্গঠনের অনুরূপ ডাউনপেমেন্ট ও মেয়াদ প্রযোজ্য হবে।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি মাস্টার সার্কুলার জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকের পর্ষদের অনুমতি নিয়ে ব্যাংক তার গ্রাহককে ঋণ পুনঃতফসিল বা ঋণ পুনর্গঠন করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন নীতিমালার আওতায় ঋণ/লিজ/বিনিয়োগ পুনঃতফসিল/পুনর্গঠন সংক্রান্ত যে কোনো আবেদন বিধি-বিধান মেনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ নিষ্পত্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন বা অনাপত্তির কোনো আবশ্যকতা নেই।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চতুর্থ দফায় পুনঃতফসিলিকরণের পরও ঋণ/লিজ/বিনিয়োগ গ্রহীতা গৃহীত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিনি স্বভাবজাত ঋণ খেলাপি হিসেবে গণ্য হবেন। এ বিবেচনায় কোনো ঋণ/লিজ/বিনিয়োগ হিসাব সম্মিলিতভাবে ৪ বারের বেশি পুনঃতফসিলবা পুনর্গঠন করা যাবে না। সর্বমোট ৪ বার পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করার পরও ঋণ আদায় না হলে পাওনা আদায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং যথাযথ সংস্থান সংরক্ষণ করবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব, বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থাসহ নানাবিধ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ক্ষুদ্র, বৃহৎ, মাঝারি ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহ বিরূপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। এরূপ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের ঋণ পরিশোধ সহজ করার মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রেণিকৃত ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বিদ্যমান নীতিমালায় বর্ণিত ডাউনপেমেন্ট ও মেয়াদ যৌক্তিক করে এ নীতিমালা জারি করা হলো।
এতে বলা হয়েছে, কেবলমাত্র বিরূপমানে (নিম্নমান, সন্দেহজনক, মন্দ বা ক্ষতি) শ্রেণিকৃত ঋণ/লিজ/বিনিয়োগ পুনঃতফসিল করা যাবে এবং স্ট্যান্ডার্ড মানে রয়েছে— এরূপ ঋণ/লিজ/বিনিয়োগ হিসাব পুনর্গঠন করা যাবে।
উল্লেখ্য সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের চলতি বছরের গত ৩০ জুন শেষে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। এটি মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
সারাবাংলা/জিএস/একে