স্কুলের ১০০ গজের মধ্যে যেতে পারবে না ব্যক্তিগত গাড়ি: মেয়র আতিক
৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:৩৪
ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, উত্তর সিটির আওতাধীন স্কুলগুলোর একশ গজের মধ্যে কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি যেতে পারবে না। তবে ঠিক কবে থেকে এই নিয়ম চালু হবে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি তিনি। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএনসিসির কার্যালয়ে উত্তর সিটির আওতাধীন স্কুলগুলোর জন্য বিশেষ স্কুল বাস সার্ভিস চালু সংক্রান্ত প্রাথমিক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকা শহরকে আরও সুন্দর ও বাসযোগ্য করতে অভিনব একটি স্কুল বাস সার্ভিস চালুর পরিকল্পনার কথা জানান মেয়র আতিক।
প্রাথমিকভাবে চারটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের জন্য এই স্কুল বাস চালু করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে সেসব স্কুলের প্রিন্সিপাল ও অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন। যদিও কোনো কোনো অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় স্কুলের প্রিন্সিপাল ও মেয়র তাদেরকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা শহরের স্কুলগুলোতে, বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সামনে শত শত গাড়ির কারণে যানজট বাড়ে। পরিবেশ রক্ষায় ও যানজট কমাতে তাই পর্যায়ক্রমে সব স্কুলের জন্য স্কুলবাস চালু করতে হবে।’
প্রথম ধাপে পাইলট প্রকল্প হিসেবে যে চারটি স্কুলে স্কুলবাস চালু করতে যাচ্ছে সেগুলো হচ্ছে চিটাগং গ্রামার স্কুল-ঢাকা, স্কলাস্টিকা স্কুল, স্যার জন উইলসন স্কুল এবং বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল।
মেয়র বলেন, ‘ঢাকা শহরে স্কুলবাস চালু হলে ব্যাপকহারে যানজট কমে যাবে। এর ফলে দূষণ কমবে, কার্বন নিঃসরণও অনেকাংশে কমবে। আমরা অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলছি। অনেক শিক্ষকরা একমত পোষণ করেছে। এটি বাস্তবায়নে অভিভাবকদের সদিচ্ছাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবার আন্তরিক সহযোগিতায় প্রথম ধাপে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আওতাধীন এলাকার ৪টি স্কুলে পাইলট প্রকল্প হিসেবে স্কুল বাস চালু করা হবে।’
সভায় আলোচনায় অংশ নিয়ে মতামত তুলে ধরেন কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
সভাপতির বক্তৃতায় ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘অনেক স্কুলে দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীর জন্য একটি গাড়ি ব্যবহার করা হয়। এর ফলে অসংখ্য প্রাইভেট গাড়ি রাস্তায় চলাচল করছে। স্কুলগুলোতে বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলবাস চালু হলে প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার ব্যাপকহারে কমে যাবে। ছেলে-মেয়েরা অনেকে একসঙ্গে বাসে যাওয়া আসা করলে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি হবে, সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে। ছেলে-মেয়েরা আত্মবিশ্বাসী হবে। তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।’
ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা বিষয়ে অভিভাবকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘সন্তানরাই বাবা মায়ের সবচেয়ে মূলবান সম্পদ। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। স্কুল বাসগুলোতে সিসি ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাচ্চাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। অ্যাপসের মাধ্যমে ট্র্যাকিং ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বাসের চালক ও স্টাফদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। একটি হটলাইন নাম্বার থাকবে যেটির মাধ্যমে অভিভাবকরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করতে পারবেন।’
এসময় তিনি বলেন, ‘অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনেই চাকরিজীবী। তাদের যেন ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়া আসা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করতে হয় সেক্ষেত্রে নিরাপদ স্কুলবাসই চমৎকার সমাধান হবে। সময়, নিরাপত্তা ও খরচ সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই বাস সার্ভিসটি চালু করা হবে। আমরা চাই একটি টেকসই সমাধান।’
বাসরুট নির্ধারণের বিষয়ে অভিভাকের আরেক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বাসার ঠিকানা অনুযায়ী বাস রুট নির্ধারণ করা হবে। রাইড শেয়ারিং এর মাধ্যমে একটি বাসে নির্দিষ্ট রুটের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করবে। এর ফলে খরচ অনেক কমে আসবে।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র জানান শুরুতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চালু হলেও পর্যায়ক্রমে সব স্কুলেই বাস সার্ভিস চালু করা হবে।
এটির সফল বাস্তবায়নে মাইন্ডসেট খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অভিভাবকদের। স্কুলবাস সার্ভিস বাধ্যতামূলক করা হলে স্কুলের একশ গজের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বহন করা ব্যক্তিগত গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।
সভায় অন্যান্যের সঙ্গে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শরীফ উদ্দীন, চিটাগং গ্রামার স্কুল-ঢাকা’র প্রিন্সিপাল আছিয়া আলম চৌধুরী, স্কলাস্টিকা স্কুল, মিরপুর শাখার প্রিন্সিপাল নুরুন নাহার মজুমদার, স্যার জন উইলসন স্কুলের প্রিন্সিপাল সাবরিনা শাহেদ ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটরিয়ালের প্রিন্সিপাল লুবনা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরএফ/একে