ভরা মৌসুমে সাগরে মিলছে না মাছ, বাড়তি ভোগান্তি জ্বালানির দাম
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৮:১৯
কক্সবাজার: এখন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ভরা মৌসুম। এই সময় জেলেদের জালে প্রচুর মাছ পড়ার কথা থাকলেও এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন। প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ না পেয়ে নিরাশ মাঝি-মাল্লারা। এরইমধ্যে জ্বালানি তেলসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৩ দিনে পল্টনে ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ উঠেছে ১১১ টন। জেলেরা বলছেন, অন্য সময় একদিনেও এর চেয়ে বেশি মাছ উঠে পল্টনে। তাই এই রেকর্ড খুবই হতাশজনক।
জেলেরা বলছেন, গত ৬৫ দিন সাগর বন্ধ থাকায় এমনিতে ক্ষতিগ্রস্ত মাছধরা ও বেঁচাকেনা সংশ্লিষ্টরা। তার মধ্যে ভরা মৌসুমে সাগরে মাছ না পাওয়া, বৈরি আবহাওয়া ও জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মাঝি-মাল্লা, বোট মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
ফিশারিঘাটে ‘মা-বাবার দোয়া’ নামে এক ট্রলারের জেলে রুস্তম মিয়া জানান, তার দীর্ঘ ২০ বছরের অভিজ্ঞতায় সাগরের এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। তাদের ট্রলার ৩ লাখ টাকার বাজার করে সাগরে ৭ দিন থেকে ফিরেছে মাত্র ৮৪টি মাছ নিয়ে। এর চেয়ে কষ্টের আর কিছুই হতে পারে না।
আরেক ট্রলারের মাঝি জাফর আলম জানান, এমনিতে সমুদ্রে মাছ কম, এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় একেকবার বাড়তি খরচ হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। এছাড়া জেলেরাও শ্রমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
খুচরা মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল গফুর বলেন, ‘ব্যবসা নিয়ে খুবই কষ্টে আছি, আগের মতো ব্যবসা হয় না। তেলসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম বেশি। জেলেদের দামও বেশি। এছাড়া ৩-৪ লাখ টাকা খরচ করে ১৫-২০ জন জেলে দিয়ে সাগরে ট্রলার পাঠিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নাই।’
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় যন্ত্রচালিত ছোট-বড় মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে ৫ হাজার ৫৪৯টি। অযান্ত্রিক ট্রলার ১ হাজার ২৩৫টি। নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৬ হাজার ১৯৩। এছাড়া অনিবন্ধিত জেলের সংখ্যা অর্ধলক্ষাধিক। তাদের প্রত্যাশা সাগরে মাছ ধরে লাভের মুখ দেখা।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. আহসানুল হক জানান, জেলেরা যেভাবে ব্যবসার আশা করেছিল সেই অনুপাতে মাছ ধরা পড়ছে না। একেকটা বোট ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করে সাগরে যায় কিন্তু সেই অনুযায়ী মাছ পাচ্ছে না। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে অনেক বোট মালিক সাগরে ট্রলার পাঠাতে পারছে না। তবে আশা করা যায় সাগরে মাছ পড়লে ক্ষতি পুষিয়ে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
সারাবাংলা/এমও