Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কেয়ার মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:১৭

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপরে অবস্থিত বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সেই কলেজে অধ্যয়নরত বিভিন্ন শিক্ষা বর্ষের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে ওই কলেজে অধ্যয়নরতদের অন্যত্র মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কেয়ার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা এ দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলন থেকে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতিতে জর্জরিত কেয়ার মেডিকেল কলেজে আর যেন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি না হয় এবং অবিলম্বে কেয়ার মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে বর্তমানে অধ্যয়নরতদের অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি দাবি জানানো হয়।

কেয়ার মেডিকেল কলেজের ২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯,২০১৯-২০, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত এবং ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের অনিয়মিত ১৪১ জন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকেরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আজকে এখানে আমরা কেয়ার মেডিকেল কলেজের নিয়মিত ২০১৭-২০১৮, ২০১৮-২০১৯, ২০১৯-২০২০, ২০২০-২০২১ এবং অনিয়মিত ২০১৪-২০১৫, ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এবং আমাদের অভিভাবকবৃন্দ উপস্থিত হয়েছি। মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারের যে সকল নীতিমালা রয়েছে তার সব নীতিমালা মেনে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মেডিকেলে ভর্তির জন্য উপযুক্ত হয়ে আমরা কেয়ার মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই। কলেজের ভর্তি বিজ্ঞাপন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদনের কাগজপত্র দেখে আমাদের অভিভাবকেরা আমাদের এখানে ভর্তি করান। ভর্তি হওয়ার আগে কোনো অভিভাবকের পক্ষে কলেজের প্রতিটি কাগজপত্র ভেরিফাই (যাচাই-বাছাই) করার সুযোগ থাকে না। সে কারণে ভর্তির সময়ে কেয়ার মেডিকেল কলেজের কতটুকু সরকারি বৈধতা আছে সেটা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়নি এবং এই সুযোগটাই কেয়ার মেডিকেল কলেজের মতো বিভিন্ন অসাধু মেডিকেল কলেজগুলো নেয়। যার ফলে বিভিন্ন সময় আমরা অনেকগুলো মেডিকেল কলেজ থেকে এ রকম রিপোর্ট শুনতে পাই।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুঃখজনক হলেও কিছু মেডিকেল কলেজে বিদেশি স্টুডেন্টরাও একই ধরনের বিপদে পড়েছিল। ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত ছিলাম কলেজটির বৈধতা আছে। তবে ভর্তির পরে জানতে পারি এই মেডিকেল কলেজটি স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক অনুমোদন এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন (অনুমোদন) নেই। এ বিষয়টি জানার পরে আমরা স্বাভাবিকভাবেই অথরিটিকে (কলেজ কর্তৃপক্ষ) তাগাদা দেই সমস্যা সমাধানের জন্য। কলেজ কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধান না করে আমাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। যেহেতু তারা বুঝতে পারে এটি আমাদের জীবন-মরণ সমস্যা এবং আমাদের মেডিকেল ছেড়ে অন্য কোনো পেশায় যাওয়া সম্ভব না, যা তাদের জন্য একটি বড় অস্ত্র হিসেবে কাজ করে এবং আমাদের পুঁজি করে তারা কলেজে বারংবার ভর্তি বাণিজ্য চালিয়ে যায়। তবে গত শিক্ষাবর্ষ থেকে কেয়ার মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই কারণ যে সব মেডিকেল কলেজ: বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনা ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১১ (সংশোধিত) অনুযায়ী শর্তসমূহ পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং আমরাও সরকারের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে। একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীকে ডাক্তার হতে গেলে অবশ্যই নিয়মনীতি মেনেই হতে হবে। বর্তমানে কলেজের উদ্ভূত এই সকল সমস্যা এবং শিক্ষার্থীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া একটি মেডিকেল কলেজে আমাদের পরবর্তী পড়াশোনা চলমান রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এমনাবস্থায় নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অনুমোদিত অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। যেহেতু আমরা পড়াশোনার এমন একটি পর্যায়ে চলে এসেছি যে আমাদের পক্ষে মেডিকেল কলেজ ব্যতিত অন্য কোথাও ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। দুঃখজনক হলেও সত্যি সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধির কাছ থেকে আমরা প্রতিনিয়ত আশ্বস্ত হয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ আজ আমাদের শাস্তির সম্মুখীন করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে আজ রোগী শূন্য একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীরা কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছি। সর্বোপরি কেয়ার মেডিকেল কলেজে শিক্ষার কোনো উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় আমাদের অন্য কোনো অনুমোদিত মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশন (স্থানান্তর) করে দেওয়া ছাড়া বিকল্প পথ আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এ জন্য আমাদের দ্রুত মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা দাবি আদায় করতে বাধ্য হবো।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা কেয়ার মেডিকেল কলেজের অন্যায়ের অবসান চাই, পাশাপাশি অন্যত্র আমাদের মাইগ্রেশন চাই। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আর শান্তিপূর্ণ থাকবে না। আমরা কঠোর আন্দোলনে যাব। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘেরাও করব। আমরা সবাইকে বলতে চাই, কোনো শিক্ষার্থী যখন বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে চাইবেন তখন সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে ভর্তি হবেন। আমরা চাই এ ধরনের অসাধু মেডিকেল কলেজ আর পরিচালিত না হোক। কেয়ার মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানাই। এ ধরনের ভুয়া মেডিকেল কলেজে আর যেন কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি না হয়। কেয়ার মেডিকেল কলেজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হোক। আমাদের অন্য মেডিকেল কলেজে মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য দাবি জানাই।’

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

কেয়ার মেডিকেল মাইগ্রেশন মেডিকেল কলেজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর