Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাঙালি জাতি মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:১০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাকালে প্রয়াত দেশের চার গুণীজনকে স্মরণ করেছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। গুণীজনদের লেখা থেকে পাঠ ও স্মৃতিচারণ, সমবেত সঙ্গীত, কবিতার মধ্য দিয়ে তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রয়াত গুণীজনদের মধ্যে আছেন- জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, গবেষক ও সাহিত্যিক ড. ভূঁইয়া ইকবাল, চট্টল গবেষক ও সংস্কৃতি সংগঠক ড. শামসুল হোসাইন এবং আধুনিক চিত্রকলার মান্যশিল্পী মুর্তজা বশীর।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘নাগরিক স্মরণসভা কমিটি, চট্টগ্রাম’ আয়োজিত এ স্মরণানুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন।

ড. অনুপম সেন চার গুণীজনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, ‘আজ আমরা দেশবরেণ্য যেসব গুণীজনদের স্মরণ করছি, তারা একটি জাতির ক্রমবিকাশ ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন। জাতির দায়িত্ব তাদের যথাযথভাবে স্মরণ করা। করোনার দুঃসময়ে আমরা অনেক স্বজন-প্রিয়জনকে হারিয়েছি। সেই হারানোর দুঃসহ স্মৃতি আমাদের সকলকেই বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তবে জাতির মেধাবী মানুষগুলোকে যে আমরা হারিয়েছি, এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। যারা সমাজ-রাষ্ট্রকে এগিয়ে রাখতে তাদের জীবনের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে গেছেন। মহামারি করোনা আমাদের কাছ থেকে তাদের কেড়ে নিয়েছে। জাতি আজ মনীষীশূন্য হয়ে পড়ছে। একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার পর জাতি যেভাবে মেধাশূন্যতায় পতিত হয়েছিল, আবারও আমরা একই পরিণতির দিকে যাচ্ছি।’

সভায় শামসুল হোসাইনের স্মৃতিচারণ করে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘তিনি (শামসুল হোসাইন) আমার দুই বছরের বড় ছিলেন। এরপরও যেহেতু একই আদর্শের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতাটা সেই ছাত্রজীবন থেকেই শুরু হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়ে পড়াশোনার সুবাদে তিনি তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ইতিহাস বিভাগে শিক্ষকতাও করেন। একটি জাদুঘর গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে ছাত্রজীবন শেষ হওয়ার পর থেকে তিনি ধাপে দাপে একজন প্রত্নসম্পদ সংগ্রাহক, সংরক্ষক এসবের প্রদর্শক ও প্রচারক হয়ে উঠেছিলেন। পাশাপাশি আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলাম। জিয়া-এরশাদের আমলে হাতে হাত মিলিয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। আমরা আমাদের কাছের মানুষদের হারাচ্ছি, এটাই অনেক কষ্টের।’

বিজ্ঞাপন

গবেষক ও সাহিত্যসাধক ড. ভূইয়া ইকবালের স্মৃতিচারণ করে ভাষাবিজ্ঞানী ড. মাহবুবুল হক বলেন, ‘ড .ভূইয়া ইকবাল ছিলেন একজন মনেপ্রাণে গবেষক। তিনি কেবল একজন শিক্ষাবিদ বা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক ছিলেন না। তার সংকলিত ও সম্পাদিত গ্রন্থে সমকালীন বাঙ্গালি মুসলমান সম্প্রদায়, সমকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হিন্দু মুসলমান সম্পর্ক, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও শিক্ষা ব্যবস্থা, সাহিত্যে সাম্প্রদায়িকতা, বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি ও উপভাষায় ব্যবহার ইত্যাদি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ও মনোভাবের স্পষ্ট প্রতিফলন হয়েছে। একজন মানুষ যিনি সাধারণ মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, সম্পাদনা ও লেখালেখির জন্য নিবেদিত প্রাণ তার মৃত্যুতে আসলেই দেশ ও জাতি একজন মনীষীকে হারিয়েছে।’

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের স্মৃতিচারণ করে অধ্যাপক গোলাম মুস্তফা বলেন, ‘অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে আমাদের জ্ঞানচর্চা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, জাতি একদিন সেটা পদে পদে অনুভব করবে। কৈশোরে ছবি বিশ্বাসের অভিনয় দেখে তার ইচ্ছা হয়েছিল আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত হলেন শিক্ষক। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন ১৬ বছর। চট্টগ্রাম থেকে তার বিদায়ের দিন রেলস্টেশনে এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল। পুষ্পস্তবকে তার কম্পার্টমেন্ট ভরে গিয়েছিল। শিক্ষকতায় আনিসুজ্জামানের অঙ্গীকার কতটা দৃঢ় ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় একটি ঘটনায়। বঙ্গবন্ধু তাকে বাংলাদেশের শিক্ষা সচিব করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাননি, শিক্ষকই থাকতে চেয়েছেন। তিনি গবেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও সমাদৃত ছিলেন। বাঙালি মুসলমানদের সাহিত্য চর্চায় আধুনিক জীবনবোধের অনুপস্থিতির কারণগুলো তিনি শনাক্ত করতে পেরেছিলেন। তার জীবনের আদর্শ,সংগ্রাম ও স্বপ্ন ছিল একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের।’

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্ত ও আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, ড. ভূইয়া ইকবালের বড় ছেলে অনিন্দ্য ইকবাল, শিল্পী মুর্তজা বশিরের বড় মেয়ে মনিরা বশির এবং নাগরিক শোকসভার সমন্বয়কারী ও জেলা উদীচীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চন্দন দাশ।

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ ও রক্তকরবীর শিল্পীদের সমবেত সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। গুণীজনদের স্মৃতিচারণ করে নাগরিক শোকসভা কমিটির প্রকাশিত পুস্তিকা থেকে পাঠ করে শোনান নাট্যজন শুভ্রা বিশ্বাস, আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরী ও মিলি চৌধুরী এবং সেলিম রেজা সাগর।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

বাঙালি জাতি মেধাশূন্য

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩

আরো

সম্পর্কিত খবর