মনে হয় না ভারত থেকে শূন্য হাতে এসেছি: প্রধানমন্ত্রী
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:০০
ঢাকা: ভারত সফরে দেশের অনেকগুলো অর্জন রয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত থেকে শূন্য হাতে আসিনি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণভবনে ভারত সফর বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্নোত্তর পর্বে এই কথা বলেন।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ভারত থেকে আমরা কী পেলাম?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কী পেলাম এটি তো আপেক্ষিক বিষয়। দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়, দেখার বিষয়। এগুলো আত্ম-বিশ্বাসের ব্যাপার। আমাদের দেশে এত উন্নয়ন হয়েছে তারপরও বিএনপি বলে আমরা নাকি কিছুই করিনি। এ বিষয়ে আমার আসলে কিছুই বলার থাকে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশের চারদিকে কিন্তু ভারত। সেই বন্ধুপ্রতীম দেশ থেকে সবদিক দিয়ে যে সহযোগিতা করে। আমরা পাইপ লাইনের মাধ্যমে কিন্তু তেল নিয়ে আসছি। রিফাইন করা তেল সহজেই পাবে। উত্তরাঞ্চলের তেল সহজেই পাওয়া যাবে। পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। সব জায়গায় অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়, সেটি নিয়েও কথা হয়েছে। ভারতের কাছ থেকে যাতে এলএনজি আনতে পারি..এরকমভাবে যদি চিন্তা করেন, বাংলাদেশ অনেক কিছু পেয়েছে। মনে হয় না আমরা ভারত থেকে শূন্য হাতে ফিরে এসেছি।’
চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক শাইখ সিরাজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ভারত থেকে কুশিয়ারার পানি আসার কথা। এর মাধ্যমে পাঁচটি উপজেলায় সেচ সুবিধা পাবো। কবে নাগাদ আমরা এই সেচ সুবিধা পেতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জবাবে বলেন, ‘স্বাধীনতার পরপর জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। সেগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের অনেক কল্যাণ বয়ে আসত। এরইমধ্যে আমরা অনেকগুলো কার্যকর করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক জায়গায় সেচ ব্যবস্থা আগের মতো নেই। তবে আমরা এগুলোর ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের জলাভূমির নাব্যতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছি। সেচের খালগুলো নতুন করে মেরামত করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কুশিয়ারার পানির বিষয়ে আমাদের যৌথ নদী কমিশনের মিটিং হয়েছে। দ্রুতই সেগুলো পেয়ে যাব।’
সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল জানতে চান, ভারতের কাছ থেকে আমরা উদারতা কতটুকু পেয়েছি? এ বিষয়ে আপনার উপলব্ধি কী?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের কাছ থেকে যথেষ্ট আন্তরিকতা পেয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের আন্তরিকতা সবসময়ই ছিল। বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দলমত এক থাকে। একাত্তরে যেমন এক হয়ে সমর্থন দিয়েছিল। আবার ছিটমহল যখন বিনিময় করি ভারতের সংসদে যখন এটা পাস হয়, তখন সেখানকার সব দল কিন্তু সমর্থন দিয়েছিল। একটা দেশের সঙ্গে নানা সমস্যা থাকতে পারে। তবে সেসব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে ভারতের সঙ্গে আমাদের রেল যোগাযোগ, সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সেগুলো আমরা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু ভারতের আন্তরিকতার কোনো অভাব দেখিনি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অন্তত পরিষ্কার- কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। ৯৬ সালের পর আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা নিয়ে কেউ কথা-ই বলেনি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। তবে এতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো ফাটল ধরেনি।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ভারতীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে, সংবাদ মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আমি বাংলাদেশের জন্য যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ্য করেছি তা সত্যিই অসাধারণ। এই প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। এই সফরে সহযোগিতার যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।’
সব মিলিয়ে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের একসঙ্গে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া শিগগিরই একটি সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে জানান। ভারত সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে
১। সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে কুশিয়ার নদী থেকে বাংলাদেশের ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।
২। বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বিষয়ে ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সিএসআইআর) সঙ্গে বাংলাদেশের সিএসআইআরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
৩। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ভারতের ভূপালে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমির মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
৪। ভারতের রেলওয়ের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে বাংলাদেশের রেলকর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
৫। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
৬। ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম ‘প্রসার ভারতীর’ সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সমঝোতা স্মারক।
৭। মহাশূন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বিষয়ে বিটিসিএল এবং এনএসআইএল-এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি ব্যবস্থাপনা, রেলপথ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
সারাবাংলা/এনআর/একে