Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দলের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চান রাঙ্গাঁ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:২১

মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ, ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দলটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেছেন, তাকে যদি বাদ দিতেই হয় তবে নিয়ম অনুসারে দিতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়েছি। যদি উনি তা না করেন তাতেও আমার কোনো আপত্তি নেই। এমনকি সংসদ সদস্য পদটি চলে গেলেও আমার কোনো দুঃখ নেই। বরং আমি প্রাণ খুলে ঘোরাফেরা করতে পারব।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘জিএম কাদের আমাকে বহিষ্কার করতে পারেন, এটা আমি আগেই জানতাম। জাতীয় পার্টিতে গণতন্ত্র নেই। পার্টি গণতান্ত্রিক ধারায় না চললে আমি থাকব না। এমনকি কোনো দলেও যোগ দেবো না।’

রাঙ্গাঁ বলেন, ‘আমি কাউন্সিলের সময় বলেছিলাম, দলের গঠনতন্ত্রের বেশ কিছু ধারা গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। ওই ধারাগুলো বদলানো প্রয়োজন। গঠনতন্ত্রের ওই ধারাগুলো জিএম কাদেরও বদলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কিছু চামচার কারণে উনি এই ধারা বহাল রেখেছেন। ধারাটি পরিবর্তন করা না হলে দল করব না। অন্য দলেও যাব না। আগামীতে দু’টি দল ছাড়া আর কোনো দল থাকবে না। আমি থাকি বা না থাকি তাতে কিছু যায় আসে না। দলটা যেন ভালোভাবে চলতে পারে সেটাই চাই। আমি খরা-বন্যায় মানুষের পাশে দাঁড়াব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুধু বলেছি, রওশন এরশাদকে সরানোর প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি। এতেই ক্ষেপেছেন জিএম কাদের। আকস্মিকভাবে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমি যদিও এখনো চিঠি পাইনি, মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি। ১৮ বছর ধরে প্রেসিডিয়াম সদস্য। আমাকে কোনো শোকজ করা হয়নি। পান দোকানের কর্মচারীকেও বাদ দিতে গেলে শোকজ করা হয়। আমাদের গঠনতন্ত্রে ধারা ১৩ অনুযায়ী চেয়ারম্যান যা খুশি তাই করতে পারেন।’

বিজ্ঞাপন

‘সম্প্রতি রওশন এরশাদ কাউন্সিলের জন্য চিঠি দেন। সেই চিঠির পর পার্টির চেয়ারম্যান আমাকে সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকতে বলেন। আমি এজেন্ডার কথা বললে উনি (চেয়ারম্যান) প্রয়োজন নেই বলে জানান। আমরা ৩১ আগস্ট সভা করি, চিঠিতে সই করা হয় ১ সেপ্টেম্বর। রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে সরানোর চিঠি দিতে গেলে স্পিকার বললেন, কী দিলেন! এই কয়টা দিন উনি থাকলে কী হতো?— বলেন জাতীয় পার্টির এই সাবেক নেতা।

রাঙ্গাঁ বলেন, ‘এরশাদ সাহেব মারা গেলে দল ভাঙার উপক্রম হয়েছিল। একদিকে জিএম কাদের, অন্যদিকে রওশন এরশাদ। আমি দু’জনকেই বুঝিয়েছি। রওশন এরশাদ বার বার ডাকলেও আমি তার কাছে যাইনি। দলটি যদি এবার ভাঙে আট ভাগ হবে।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল আমার ছবিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমার সামনে দিক আপত্তি করব না, এটি গণতান্ত্রিক অধিকার, আমাকে তারা পছন্দ নাও করতে পারেন। গতকাল মারামারি করে লোকজন আহত হয়ে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারত। তাতে কি দলের ভালো হবে? আমি বলে দিচ্ছি রংপুরে আর কোনো সংঘাত হবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর বক্তব্য শেষ হলে প্রশ্ন উত্তর পর্বে একজন সাংবাদিক জানতে চান- জাতীয় পার্টি অগণতান্ত্রিক ধারায় পরিচালিত হচ্ছে? জিএম কাদের কি বর্তমানে স্বৈরাচারী কায়দায় দল পরিচালনা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘উনি স্বৈরাচারী কায়দায় দল চালাচ্ছেন কি না তা বলব না। তবে দলের গঠনতন্ত্রে প্রশ্নবিদ্ধ কোনো ধারা থাকা উচিৎ নয়।’

জিএম কাদেরের সকল অপকর্মের ডকুমেন্ট আপনার কাছে আছে। অপকর্মের ওই ডকুমেন্টগুলো আজ সাংবাদিকদের দিবেন? এ প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, ‘আজকে দেবো না। আমার কাছে অনেক ডকুমেন্ট আছে। সময় হলে সব ফাঁস করে দেবো।’

জাতীয় পার্টিও প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের চিফ হুইপের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি গত সরকারের সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দলটির গত কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। কয়েক মাসের মাথায় তাকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে জাপার তৎকালীন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে রাঙ্গাঁকে মহাসচিব করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদের মৃত্যুর পর জিএম কাদের দলটির চেয়ারম্যানের পদে আসেন। ওই সময় দলটি ভাঙনের মুখে পড়ে। এ সময় শক্তহাতেই ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন রাঙ্গাঁ।

কিন্তু বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কোনো রকম শোকজ কিংবা নোটিশ ছাড়াই মশিউর রহমান রাঙ্গাঁকে অব্যাহতি দেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস/পিটিএম

জাতীয় পার্টি মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর