Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অনলাইনে নাগরিকত্ব সনদ পাচ্ছে না ডিএসসিসি’র বাসিন্দারা

রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:২৭

ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বাসিন্দা সেতু পোদ্দার (৩০)। তিনি ডিএসসিসি’র ৩৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বিদেশে যাওয়ার জন্য নাগরিকত্ব সনদের প্রয়োজন পড়ায় কাউন্সিলর অফিসে সেটি আনতে যান। এসময় তাকে হাতে লেখা একটি নাগরিকত্ব সনদ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসময় সেতু বলেন, তার অনলাইন সনদ প্রয়োজন, হাতে লেখা সনদ নয়। কাউন্সিলর জানান, তারা জানেন না অনলাইন সনদ কেমন আর কীভাবে দেয়। সেসময় সেতু তার পরিচিত অন্য একজনের সনদ দেখান যেটি ‘প্রত্যয়ন’ থেকে ডাউনলোড করা। এটি দেখে কাউন্সিলর বলেন যে, এই সুবিধা তাদের কাছে নাই।

এদিকে ‘প্রত্যয়ন ডট গভ ডট বিডি’ থেকে ডাউনলোড করা সনদে একটি স্ক্যানকোড রয়েছে যেটি দিয়ে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ওই ব্যক্তির নাগরিকত্ব ভেরিফাই করা যাবে। ফলে বিদেশগামী যাত্রীদের জন্য এটিই গ্রহণযোগ্য নাগরিকত্ব সনদ। ভিসা আবেদনের জন্য এক সপ্তাহের মধ্যেই সেতুর এই নাগরিকত্ব সনদ প্রয়োজন। কিন্তু অনলাইন সনদ না পাওয়ায় তার ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিদেশে যাওয়ার জন্য নাগরিকত্ব সনদ তোলা আরেক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ তুলেছেন। নাগরিকত্ব সনদের জন্য আবেদন করলে প্রত্যয়ন ডট গভ ডট বিডি থেকে ডাউনলোড দিয়ে পরিষদের চেয়ারম্যান সিল ও স্বাক্ষর দিয়ে দিয়েছেন। যেদিন আবেদন করেছেন সেদিনই সনদ পেয়েছেন। এর জন্য সরকারি ফি পঁচিশ টাকা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি স্ক্যান করে দিয়েছিলেন।

একইভাবে ঢাকা বিভাগের জেলা ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভা থেকেও এই নাগরিকত্ব সনদ বিতরণ করছে বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ এবং কাউন্সিল অফিস থেকে এটি পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলদের প্রত্যয়ন ডট গভ ডট বিডি ওয়েবসাইটে নিজস্ব নামে একটি আইডি খুলতে হবে। সেই আইডির মাধ্যমে নিজ এলাকার নাগরিকদের সনদ ডাউনলোড দিয়ে সিল ও স্বাক্ষর দিয়ে সরবরাহ করতে পারবেন।

প্রত্যয়ন ডট গভ ডট বিডির ওয়েবসাইটের তথ্যকেন্দ্রে ১৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এই সুবিধা নাই। ঢাকা দক্ষিণের জনগণ কবে এই সুবিধা পাবে জানতে চাওয়া ওই প্রশ্নের উত্তরে লেখা আছে, ‘আমরা ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয়ের কাছে সিস্টেমটি চালু করার জন্য আবেদন করেছি। মেয়র মহোদয় অনুমোদন করলে আশা করছি খুব দ্রুতই সিস্টেমটি আপনাকে জানাতে পারব।’

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ডিএনসিসি’তে যোগাযোগ করলে জানা যায়, সেখানে এই সিস্টেম ইতোমধ্যে চালু হয়েছে।

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দু’জন কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের কার্যালয় থেকে প্রত্যয়ন পত্র দেওয়া হয়। ওয়েবসাইটে উল্লেখিত পদ্ধতি মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আবেদন করলে তারা এই প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করেন। কাউন্সিলের ফর্মে টাইপ করে স্বাক্ষর দেওয়া হয়। এতে স্ক্যান করার কোনো সুবিধা নাই। কাউন্সিল অফিসে কম্পিউটার না থাকায় তারা প্রত্যয়ন ডট গভ ডট বিডি’র নাগরিকত্ব সনদ দিতে পারছেন না।

ডিএসসিসি’র আওতাধীন ৩৬ ও ৩৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের অফিসে কম্পিউটার বা আইটি সেবার ব্যবস্থা নাই। আবেদন করলেও সেটি এখনও করা হয়নি।

৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘অনেকেই আসছেন নাগরিকত্ব সনদের জন্য। গ্রাম থেকে তোলা সনদ দেখাচ্ছেন কিন্তু আমাদের এখানে কম্পিটার সুবিধা না থাকায় আমরা এটি দিতে পারছি না। আমরা সাধারণত টাইপ করা সনদ দেই। নগরভবনে বারবার বলেও কম্পিউটার পাচ্ছি না। জনগণের সুবিধার জন্য দ্রুত এর সমাধান চাই।’

৩৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকন উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমরা হাতে লিখে টাইপ করা প্রত্যয়নপত্র দেই। কাউন্সিল অফিসে কম্পিটার না থাকায় আমরা অনলাইন সনদ দিতে পারছি না। কাউন্সিলর হিসেবে চাই যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান হোক।’

প্রত্যয়ন ডট গভ ডট বিডি ওয়েবসাইটে করা প্রশ্নের উত্তর থেকে জানা যায়, দেশের অনেক অঞ্চলে এই সেবা চালু থাকলেও খুলনা, কুমিল্লা, শরিয়তপুর জেলায় এই সুবিধা এখনও চালু হয়নি। তবে অচিরেই দেশের সব প্রান্তে এই সেবা চালু হবে বলে লেখা হয়েছে সেখানে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘এই বিষয়ে সরকার থেকে কোনো স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট দেওয়া হয়নি এখনও। শুধুমাত্র কী কী তথ্য দেওয়া যাবে সেটি বলে দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে কীভাবে এই নাগরিকত্ব সনদ দেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সেটি নিশ্চিত করে বলে দেওয়া হয়নি। তাই কমিশনাররা যার যার সুবিধামত এই সনদ দিয়ে থাকেন।’

সারাবাংলা/আরএফ/এমও


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর