আ.লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা: ডিসির প্রত্যাহার চেয়ে নোটিশ
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৩০
ঢাকা: আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে মোনাজাত ও বক্তৃতা করায় এবং দলের পক্ষে ভোট চাওয়ায় চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা (চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক-ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহার করে নিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সংস্থাপন সচিব (জন প্রশাসন সচিব), নির্বাচন কমিশন সচিব, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবং চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী (জেলা প্রশাসক) মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান খান এ নোটিশ পাঠান। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে নিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী।
নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসম্পাদক মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান খান বলেন, ‘জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী একজন কর্মকর্তার (রিটার্নিং কর্মকর্তা) কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার সুযোগ নেই। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ওই কর্মকর্তা একটি দলের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এই কারণে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা হারিয়েছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করব।’
এর আগে ‘আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার মোনাজাত ও বক্তৃতা’ শিরোনামে সারাবাংলায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। একই বিষয়ে দেশের অন্যান্য গণমাধ্যমও সংবাদ প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন:
নোটিশে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে ‘আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার মোনাজাত ও বক্তৃতা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, মোনাজাত পরবর্তী বক্তব্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভোট চেয়েছেন এবং অন্যদের ওই রাজনৈতিক দলের জন্য দোয়া করতে অনুরোধ করেছেন। জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে ওই ডিসির নিরপেক্ষ ভূমিকা থাকা উচিত ছিল।
একজন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর জয় কামনা করে, জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার (ডিসি) নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে এবং অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা ও সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। আসন্ন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ওই বক্তব্য থেকে একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রভাব বিস্তারের সমূহ সম্ভবনা তৈরি হয়েছে এবং সবার মাঝে এটা বিশ্বাস করারও যথেষ্ট কারণ উদ্ভব হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, এসব কারণে সকল ভোটার ও প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা আস্থাহীনতায় ভুগছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যকলাপে নির্বাচনি ফলাফল প্রভাবিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। আর রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার ৭৯, ৮০ এবং ৮১ নং বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘণ করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সংস্থাপন সচিব (জনপ্রশাসন সচিব), নির্বাচন কমিশন সচিব এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। যা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তৃব্যের সুস্পষ্ট লঙ্ঘণ।
এ কারণে নোটিশ গ্রহীতাদের অত্র নোটিশপ্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার (চট্টগ্রামের ডিসি) বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হবো বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামের মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে তার বিজয় কামনা করে দলীয় নেতাদের সঙ্গে মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ সময় তিনি প্রার্থীকে পাশে বসিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতাও করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও যেন আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করা হয়, সে জন্য বিএনপি-জামায়াতেরও দোয়া কামনা করেন। পরে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তার হাত তুলে মোনাজাতে অংশ নেওয়ার ওই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম