‘এ ইলিশ আমাদের কারও জন্য না’
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৪৪
বরিশাল: আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই চার মাস ইলিশ ধরার উপযুক্ত মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টির পর জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। তবে ইলিশে বাজার ভরপুর হলেও দাম চড়া। সাধ থাকলেও ইলিশ কেনার সাধ্য নেই সাধারণ আয়ের মানুষের। মাছের চড়া দামে ক্ষুব্ধ মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত ক্রেতারা হতাশ হয়ে বলছেন, ‘এ ইলিশ আমাদের কারও জন্য না’।
জেলে ও আড়তদারদের দাবি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্রলারে মাছ শিকারে আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে। এজন্য ইলিশের দামও বেড়েছে।
তবে ট্রলারে করে নদীতে মাছ শিকারের খরচ হিসাব করে দেখা যায়, ছোট একটি ট্রলারে আগে প্রতি কেজি ইলিশ শিকারে জ্বালানি খরচ হতো ১৬ টাকার মতো। এখন সেখানে খরচ হচ্ছে ২২ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি কেজি ইলিশ শিকারে ৬ টাকা ৫০ পয়সা খরচ বেড়েছে। অথচ জ্বালানি তেলের বৃদ্ধির অজুহাতে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি ইলিশের দাম বেড়েছে ২০০-২৫০ টাকা।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইলিশের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়েছেন। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের কাছে এত দাম দিয়ে ইলিশ কেনা বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৭০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের (এলসি সাইজ) কেজি ৯০০-১০০০ টাকা। এক কেজির ওপরের ইলিশ দেড় হাজার টাকা, এক কেজির নিচের ইলিশ ১ হাজার ২০০ টাকা, আর জাটকা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। তাই দাম শুনে ইলিশ কেনা থেকে পিছিয়ে আসেন অনেকেই। ইচ্ছা থাকলেও দামের কারণে সাধারণ মানুষ ইলিশ কিনতে পারছেন না।
ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘ছোট সাইজের ইলিশের কেজিও ১ হাজার ১০০ টাকা। সাধারণ আয়ের মানুষ হিসেবে ইলিশ কেনা সম্ভব নয়। নিত্যপণ্যের যে পরিমাণ দাম, ইলিশ কিনলে আর পকেটে টাকা থাকবে না। ইলিশ সাধের মাছ হলেও আমাদের কেনার সাধ্য নেই।’
আনিসুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘আমার বাসায় রাজশাহী থেকে মেহমান এসেছে। বরিশালের ইলিশ ভালো তাই তারা ইলিশ খেতে চাচ্ছেন। কিন্তু বাজারে এসে দেখি ইলিশের দাম অনেক বেশি।’
নগরীর চৌমাথা বাজারে ইলিশ কিনতে আসা রিকশাচালক হোসেন মুন্সী বলেন, ‘ছেলে-মেয়ের আবদার পূরণে বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু অতিরিক্ত দাম হওয়ায় কিনতে পারলাম না। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের মতো গরিবদের জন্য ইলিশ না।’
ইলিশের আড়তদাররা বলছেন, ‘অন্যবারের মতো এ বছর সাগরেও ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। নদীতেও কম ধরা পড়ছে ইলিশ। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ট্রলারে করে মাছ শিকারে আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে। তেলের দাম বাড়ার পর অনেক জেলেই সাগরে যেতে চাচ্ছেন না। এজন্য ইলিশের দামও বেড়েছে।’
বরিশালের মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘গত সপ্তাহে নিম্নচাপের পর সাগর থেকে নদীতে ইলিশ প্রবেশ বেড়েছে। যে কারণে কয়েক দিন স্থানীয় নদ-নদীতে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। নিম্নচাপের পর সাগরমুখী জেলেরা ফিরে আসার পর বাজারে সরবরাহ আরও বাড়বে। এতে মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসে ইলিশের দাম কিছুটা কমতে পারে।’
সারাবাংলা/এমও