কলেজ অধ্যক্ষকে এমপির মারধর, প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি
২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:৪৬
রাজশাহী: রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে কলেজের অধ্যক্ষকে পেটানোর প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। গোদাগাড়ীর রাজবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের ঘটনায় গত ১৪ জুলাই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
মারধরের প্রমাণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মোল্লা মাহফুজ আল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। তাতে কলেজ শিক্ষককে পেটানোর বিষয়টি উঠে এসেছে। আমরা সেটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।’
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল হোসেন। কমিটির প্রতিবেদন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩২তম সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পেটানোর প্রমাণ তুলে ধরে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে সজাগ থাকতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বিধান না থাকায় অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে পিটিয়ে আহত করা সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ করেনি তদন্ত কমিটি।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অধ্যক্ষ সেলিম রেজা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীকে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি।
আরও পড়ুন-
- এমপি কর্তৃক অধ্যক্ষকে মারধর নিয়ে অডিও ফাঁস!
- সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ বললেন ‘এমপি আমাকে মারেননি’
- এমপি পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন ওমর ফারুক: বাকবিশিস
- কলেজ অধ্যক্ষকে হকিস্টিক দিয়ে পেটানোর অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে
- অধ্যক্ষকে মারধরের অডিওর কথোপকথন ছিল ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে
এর আগে, গত ৭ জুলাই রাতে রাজশাহী মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকায় রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন শপিংমলে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের ঘটনা ঘটে। ওইদিন কার্যালয়ে ডেকে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে সাতজন শিক্ষকের সামনেই হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। এমপির বেপরোয়া লাথি, কিল-ঘুসি ও হকিস্টিকের আঘাতে অধ্যক্ষ সেলিম রেজার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালচে দাগ হয় এবং রক্ত জমাট বাঁধে। পরে অধ্যক্ষ স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।
ঘটনাটি তিনি ফাঁস করে পরিবারসহ উধাও হয়ে যান। পরে এমপি ওমর ফারুককে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে দাবি করেন, এমপি তাকে পেটাননি। এগুলো সবই মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্র। ওই দিন এমপির চেম্বারে অধ্যক্ষরা একটি বিষয় নিয়ে নিজেরাই মারামারি করেছেন। পরে এমপি তাদের থামিয়েছেন। সেখানে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিতে পারছিলেন না। তার উত্তর দিয়েছিলেন মাটিকাটা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল আউয়াল রাজু।
এর একদিন পরই মাারধরের স্বীকারোক্তির কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস হয়। সেখানে অধ্যক্ষ মারধরের বর্ণনাও করেছিলেন। সে সময় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দাবি করেছিলেন অডিও ক্লিপটি ফাঁস হয়েছে তা সুপার এডিট করা। সে সময় কথোপকথন নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি অধ্যক্ষ সেলিম রেজা।
অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে মারধরের ঘটনায় সারাদেশে নিন্দা আর প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল হোসেনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।
সারাবাংলা/পিটিএম