জাপার বহিষ্কৃতদের দলে অন্তর্ভুক্ত করতে কাদেরকে রওশনের চিঠি
২১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৩০
ঢাকা: জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি, বহিষ্কার ও কমিটি থেকে বাদ দেওয়া সব নেতাকর্মীদের পার্টিতে অর্ন্তভুক্ত করার জন্য জিএম কাদেরর প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাটিয়েছেন পার্টির প্রধানপৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে অনুমোদিত পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০ এর উপধারা-১ এর সব বিধানের অপব্যবহার হয়, যা গণতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থী।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের প্যাডে রওশন এরশাদের সই করা নির্দেশনামূলক চিঠিটি পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
জাপা চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির সর্বময় ক্ষমতার সংরক্ষক হিসেবে পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০ এর উপধারা-১- প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতাবলে গঠনতন্ত্রের বিশেষ ক্ষমতা এবং মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ধারা-২০ এর উপধারা-২ এর সব বিধান স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এতে রওশন এরশাদ বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে অনুমোদিত পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০ এর উপধারা-১ এর সব বিধানের অপব্যবহার হয়, যা গণতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থী। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের বিধি বিধান মেনেই তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেখানে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র লঙ্ঘনের সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, দেশজুড়ে পার্টির সব তৃণমূল নেতাকর্মীরাও এসব ধারার বিপক্ষে। এটা বাতিল চায় লাখ লাখ পল্লিবন্ধুপ্রেমী কর্মী-সমর্থক।’
জাপা প্রধানকে পাঠানো চিঠিতে প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলেন, ‘আপনার মন্তব্য অনুযায়ী সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ ও সরকার পরিচালনা ব্যবস্থা যেমন এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে, ঠিক তেমনই নবম সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় গঠনতন্ত্রে ২০ ধারার উপধারা ১ এর সব উপধারা ও অনুচ্ছেদ। এর মাধ্যমে যখন তখন তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যন্ত কোনো ধরনের শোকজ বা বিনা নোটিশে বহিষ্কার ও অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। যা একজন রাজনৈতিক কর্মীর গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ গৃহীত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার ১(১), উপধারা-২ ও উপধারা-৩ বর্ণিত বিধানাবলীর সঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ন্যূনতম কোনো মিল নেই।’
জাপার লাখ লাখ নেতাকর্মীর দাবি মেনে দলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব ক্ষমতা স্থগিত করা হলো উল্লেখ করে তা কার্যকরের নির্দেশনা দেন পল্লিবন্ধুপত্নী রওশন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে দলীয় কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, বিগত দিনে দলের বহু জ্যেষ্ঠ, অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে, পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। এতে করে পার্টিকে দিনে দিনে দুর্বল করা হয়েছে, করা হয়েছে খণ্ডিত। পার্টির মধ্যে অগণতান্ত্রিক আবহ থাকায় নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং পদ হারানোর ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে ফের পার্টি খণ্ডিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা অবসানের লক্ষ্যে এবং পার্টি শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ এমপি, সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গাফফার বিশ্বাসকে আগের পদ-পদবিতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয় চিঠিতে।
রওশন এরশাদ আরও বলেন, নবম সম্মেলনের পর পদ-পদবিতে না রাখা সাবেকমন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ সাত্তার, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, কাজী মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, সাবেক উপদেষ্টা অ্যাড. মাহবুবুল আলম বাচ্চু, সাবেক সংসদ সদস্য ও দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নুরুসহ দেশজুড়ে অব্যাহতি, বহিষ্কার ও নিষ্ক্রিয় করে রাখা সব নেতাকর্মীদের এই আদেশ জারির পর থেকে যার যার আগের পদ পদবিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম