Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মামলা-হামলা বন্ধ করুন, পরিণাম ভালো হবে না’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৩০

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বর্ধিত পৌরকরের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদের’ মুখপাত্র হাসান মারুফ রুমী বলেছেন, ‘গণআন্দোলন করতে গেলে, জনগণের পক্ষে আওয়াজ তুললে আঘাত আসবে স্বাভাবিক। আমরা মামলা-হামলায় ভীত নই, কারণ আমাদের সঙ্গে পুরো চাটগাঁবাসী আছেন। আমাদের ওপর ৬০ লাখ মানুষের দোয়া আছে।

শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর কদমতলীতে পরিষদের গণমিছিল কর্মসূচি শুরুর আগে সমবেত জনতার উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার চৌধুরীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের প্রতিবাদ জানিয়ে হাসান মারুফ রুমী বলেন, ‘অতীতেও আমাদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহম্মদ আমির উদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। চাকুরিচ্যুত করেও বিরত করা যায়নি, এবারও যাবে না। গতকাল উনার রহমানবাগ এলাকার ভাড়াঘরে হামলা চালানো হয়েছে।’

‘মাননীয় মেয়র এসব বন্ধ করুন, এর পরিণাম ভালো হবে না। সুরক্ষার মতো ক্ষুদ্র সংগঠনের সভাপতির বিরুদ্ধে জনগণের ট্যাক্সের লাখ লাখ টাকা খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচ্ছেন। মেয়র সাহেব দৃশ্যপট থেকে সরে গিয়ে নির্দেশনার মাধ্যমে চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার জন্য যে ছক সাজিয়েছেন তা অত্যন্ত কাঁচা বুদ্ধির, জনগন এটা বুঝে গেছে’— বলেন হাসান মারুফ রুমী।

উল্লেখ্য, চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে তার ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল গত ২০ সেপ্টেম্বর নুরুল আবছার চৌধুরীর বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করেন। এরপর নুরুল আবছার ও হাসান মারুফ রুমীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় একই অভিযোগে সাধারণ ডায়েরিও দায়ের হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গণমিছিল শুরুর আগে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মুহম্মদ আমির উদ্দিন মেয়রের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমাদের সভাপতির বক্তব্যের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। মাননীয় মেয়র যদি আমাদের সাথে আলোচনায় বসেন, সেখানেও দুঃখ প্রকাশ করবো। কিন্তু চট্টগ্রামের স্বার্থে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। সুরক্ষা পরিষদ কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়, এটি সামাজিক সংগঠন যা চট্টগ্রামের মানুষের দুঃসময়ের বন্ধু। মেয়রের পক্ষে যারা সংক্ষুদ্ধ হয়ে সভা-মিছিল করছেন তাদের মধ্যে আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধব আছেন, যারা সত্যিকার অর্থে নিবেদিত রাজনীতিবিদ-ভালো মানুষ। কিন্তু তাদের সঙ্গে মিশে আছে পদ-পদবি আর করপোরেশনের দুর্নীতির হালুয়া রুটির ভাগ নেয়ার প্রত্যাশা। অতি উৎসাহী ধান্ধাবাজ চক্র এসব করে মেয়র তথা সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে, জনবিচ্ছিন্ন করছে।’

পরিষদের পক্ষ থেকে ১ অক্টোবর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত ‘ওয়ার্ড অভিযাত্রা’এবং ২১ অক্টোবর বিকেল ৩টায় কদমতলীতে গণশুনানির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। মামলার আসামি সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছারের স্ত্রীও গণমিছিলের আগে বক্তব্য রাখেন।

সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদৌস পপি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন আজ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। মানুষ ন্যুনতম সেবা পাচ্ছে না। আমাদের আন্দোলন কিছু কাউন্সিলর অফিস আর মেয়রের অফিসকে জনতার অফিসে রূপান্তর করার আন্দোলন। আমাদের সংগ্রাম আপিলের নামে জনগণের কাছ থেকে যে ঘুষ গ্রহণ করা হয়েছে, সেটি জনগণকে ফেরত দিতে বাধ্য করার সংগ্রাম। আমাদের আন্দোলন গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স আইন বাতিলের আন্দোলন।’

পরিষদের জ্যেষ্ঠ্য নেতা মুজিবুল হকের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন চসিকের সাবেক কাউন্সিলর এম এ মালেক, সৈয়দ হোসেন, শ্রমিক নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম, মফিজুর রহমান, হাজী হারুনুর রশীদ, ইসমাইল হোসেন মনু, খেলাঘরের এরশাদ হোসেন, অ্যাডভোকেট বিশুময় দেব।

উল্লেখ্য, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের আমলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনঃমূল্যায়ন করে বর্ধিত হারে গৃহকর আদায়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ২০১৭ সালে এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’ গঠন করে আন্দোলনে নামেন সাবেক মেয়র (বর্তমানে প্রয়াত) এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলনের মুখে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে কর আদায় স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে গৃহকর আদায়ের ওপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে দুই দফা চিঠি দেয় চসিক। এর ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মন্ত্রণালয়। তখন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছিলেন, ‘গণহারে গৃহকর বাড়ানো হবে না, শুধুমাত্র করের আওতা বাড়ানো হবে।’

কিন্তু সম্প্রতি পুনঃমূল্যায়নের ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু হলে নগরবাসীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর ফলে পাঁচ বছর পর একই দাবিতে আন্দোলনে নামে ‘চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ’। ‘গলাকাটা হোল্ডিং ট্যাক্স আইন বাতিল করো/দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুণ করো তার ওপর কর ধরো।’- এই স্লোগান নিয়ে সংগঠনটি গত একমাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

সারাবাংলা/আরডি/একে

গণমিছিল মামলা হামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর