স্বপ্না-সোহাগীদের দৃষ্টি এখন বিদেশি ক্লাবের দিকে
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২৩:৩৯
রংপুর: জাতীয় নারী ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড় সিরাত জাহান স্বপ্না বলেছেন, বিদেশি ক্লাবে খেলার জন্য মৌখিকভাবে সাতজনকে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে আমার নামও রয়েছে। আমিও বিদেশি ক্লাবে খেলব ইনশাল্লাহ।
সাফ জয়ের ১০ দিন পর বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুরে ফিরে বিদেশি ক্লাবে খেলার সম্ভাবনার কথা জানালেন স্বপ্না। তিনি বলেন, ‘রংপুরের মানুষ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে দেখে আমি খুবই আনন্দিত হয়েছি। এভাবে বরণ করে নেওয়া আমাকে সামনে ভালো খেলার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।’
আগামী দিনে ফুটবলের জন্য আরও ভালো কিছু করে দেখানোর প্রত্যয় জানিয়েছেন সাফজয়ী ফুটবলার সিরাত জাহান স্বপ্না বলেন, ‘এবার দেখিয়ে দিয়েছি আমরাও ভালো ফুটবল খেলতে পারি। দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারি। আমাদের দেখে মেয়েরা নতুন করে ফুটবলে আগ্রহী হবে। জন্মস্থানের মানুষের ভালোবাসা ও সংবর্ধনা পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ।’
এর আগে, ঢাকা থেকে বিমানযোগে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান সাফজয়ী ফুটবলার সিরাত জাহান স্বপ্না, সোহাগী কিসকো ও স্বপ্না রানী রায়। সেখানে তাদের ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
পরে বিমানবন্দর থেকে রংপুর নগরী পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার পথ ছাদ খোলা সংবর্ধনা দিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে আসেন তারা। পুরো পথে সড়কের দুই ধার থেকে ফুল ছিটিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে সংবর্ধনা মঞ্চে তিন জনকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এ সময় সিরাত জাহান স্বপ্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন আমি প্রথম ফুটবল খেলা শুরু করেছিলাম, তখন এলাকার অনেকে বাধা দিয়েছেল। আমাদের সমাজের পুরুষেরা চায় মেয়েরা একটু পিছিয়ে থাক। এখন আমার সাফল্যে তারাও আনন্দ প্রকাশ করছে। পরিবর্তন শুরু হয়েছে। সামনে আমাদের আরও ভালো করতে হবে।’
অপর সাফজয়ী খেলোয়াড় স্বপ্না রানী রায় বলেন, ‘শিরোপা ঘরে আনতে পেরে আমরা গর্ববোধ করছি। দেশের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আরও ভালো কিছু করতে সবার সাপোর্ট চাই।’
ঠাকুরগাঁওয়ের এই ফুটবলকন্যা আরও বলেন, ‘ফুটবল খেলার শুরুতে অনেক বাধা এসেছে। হাফ প্যান্ট পরে মেয়েরা ফুটবল খেলছে বলে গ্রামের মানুষেরা কটূক্তি করেছে। এতেও আমরা থেমে থাকিনি। স্কুলপর্যায়ে খেলার সময় স্যারেরা অনেক সাপোর্ট করেছে। এখন সবাই উৎসাহ দিচ্ছে। ’
নারী ফুটবলার সোহাগী কিসকু বলেন, ‘সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর গোটা দেশের মানুষ আমাদের চিনেছে। আমরা চাই গ্রামের নারী ফুটবলাররা যেন গ্রামে খেলার সুযোগ পায়।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘স্বপ্না সাফ ফুটবলে যে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি।’ নারী ফুটবলারদের যেকোনো সহায়তায় সিটি করপোরেশন পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা রংপুরের নাম উজ্জ্বল করেছে। তাদের পথ ধরে আগামীতে আরও নতুন খেলোয়াড় জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে বলে আশা করি।’ জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে ফুটবলারদের জন্য সবধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের আশ্বাস দেন তিনি।
এ সময় বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মঞ্জুর আহম্মেদ আজাদ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি, ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদার রহমান মিলন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজলী বেগম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি, স্বপ্নার প্রথম ফুটবল প্রশিক্ষক হারুন অর রশিদসহ রংপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তা এবং ক্রীড়ানুরাগী সংগঠকরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/পিটিএম