Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইটভাটা আইন সংশোধনের প্রস্তাব পর্যালোচনায়

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ অক্টোবর ২০২২ ১১:১৮

ঢাকা: দেশের ইটভাটা আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এই আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে। ইট প্রস্তুতারী মালিক সমিতি আবেদেনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আবেদন করা হয়েছে বলে জনা গেছে। এ অবস্থায় গত ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় পর্যালোচনা সভা। পরিবেশ, বন ও জরবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সন্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের অধিকাংশই আইনটি সংশোধনের আগে আরও পর্যালোচনার তাগিদ দিয়েছেন।

সভা সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব শামিমা বেগম ওই সভায় বলেন— স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুণগত মানসম্পন্ন ইট তৈরির জন্য বিদ্যমান আইন বা বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করে। এই পত্রের ওপর মন্ত্রণালয় পরিবেশ অধিদফতরের মতামত চাওয়া হয়। অধিদফতর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ (সংশোধিত-২০১৯) এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু ধারার সংশোধনের প্রয়োজন অনুভব করায় বিদ্যমান আইনের ২৬টি ধারার মধ্যে ১৯টি ধারা-উপধারা সংশোধনের জন্য প্রস্তাব পাঠায়।

আরও জানা গেছে, পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি বিদ্যমান আইনের ৮(৩) (খ) ও ৮ (৩) (ঙ) ধারা পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন দাখিল করে। এর উপধারাগুলো হচ্ছে— কোনো ব্যক্তি নিকটবর্তী দূরত্বে বা স্থানে ইটভাটা স্থাপন করতে পারবে না, সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে, বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে করতে হবে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, সারাদেশে মোট ৭ হাজার ৮৮১টি ইটভাটা রয়েছে। ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির আবেদনের বর্ণনা করে বলেন— ইট ভাটার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এর মধ্যে জিগজ্যাক পদ্ধতির ইটভাটা হল প্রায় ৮১ শতাংশ। লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ইট ভাটাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। এছাড়া আইনের অন্যান্য শর্ত বিবেচনা করা হয়। ৮১ শতাংশ জিগজ্যাগ পদ্ধতির ইট ভাটাগুলোকে ছাড়পত্র নবায়নের ক্ষেত্রে মালিক সমিতির আইনের শর্ত শিথিলের আবেদন জানিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পরিবেশ অধিদফতর থেকে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর বিদ্যমান আইনের যে সংশোধনী মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করা হয়, তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুনরায় পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। অধিদফতর পর্যালোচনা করে আইনের সংশোধনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

সভার সভাপতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু ২০১৯ সালে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ (সংশোধিত-২০১৯) আইন সংশোধন করা হয়েছে। আইন সংশোধন যথেষ্ঠ সময় সাপেক্ষ বিষয়, তাই এত অল্প সময়ের ব্যবধানে আইনটির সংশোধন আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, তা সতর্কভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।’

আইনের ধারা ১ (৩) (খ) এর বিষয়টি বন বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি বন্যপ্রাণী আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মতামত দেওয়া প্রয়োজন ‘

পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ‘ধারা ৮ (৩) (খ) এর বিষয়ে আইনের বিদ্যমান শর্ত বহাল রাখার পক্ষে পরিবেশ অধিদফতর মতামত দিয়েছে। হাইকোর্টেও একটি নির্দেশনা থাকায় জিগজ্যাগ পদ্ধতির অবৈধ ইট ভাটাগুলোকে নবায়ন করা হচ্ছে না।’

অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, বিষয়টিতে হাইকোর্টের নির্দেশ থাকায় আদালতের আদেশ অমান্য করার উপায় নেই। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে যাতে কনটেমন্ট অব কোর্টের সুযোগ সৃষ্টি না হয়।

প্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন বলেন, ‘ভাটায় ইট পোড়ানো এবং সেখান থেকে ইট পরিবহন উভয় সময়েই পরিবেশ দূষণ হয়। তাই বায়োডাইভারসিটি রক্ষার স্বার্থে ৮(৩) (খ) ধারা শিথিল করার উদ্দেশ্যে আইন সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করার কোনো অবকাশ নেই।’

পরিবশে অধিদফতরের যুগ্ম সচিব বলেন, ‘এই আইন প্রবর্তনের আগে দ্যিমান ইটভাটার বায়ু দূষণের মাত্রা বিধি অনুসারে এলাকা ভিত্তিক নির্ধারিত মান মাত্রায় থাকলে এবং এর কর্ম পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত হলে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, এই ইটভাটাকে ধারা (১) (ঙ) এবং ৮ (৩) (খ), (গ) ও (ঘ) ছাড়া অন্যান্য শর্তাবলী হইলে শিথিল করতে পারবে। এ সময় সকলে মতামত করেন ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতির আবেদনের বিষয়ে আইন পরিবর্তনের আবশ্যকতা নেই। আইনের এ শর্ত শিথিলের বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনে সরকারি প্রজ্ঞাপন দ্বারা বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব।’

বন বিভাগের উপসচিব দেবময় দেওয়ান বলেন, ‘২০১৩ সালের আইনের ৮ (৪) ধারায় আইনে নির্ধারিত সীমারেখা বহির্ভূত অবৈধ ভাটাগুলো যথাস্থানে স্থানান্তর করার জন্য দুই বছর সময় দেওয়া হয়। অন্যথায় তার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। সেই অবৈধ ভাটাগুলো এখনো চালু আছে কি না, তা দেখা প্রয়োজন। মালিক সমিতির প্রস্তাব অনুযায়ী আইন সংশোধন করা হলে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।‘

বিআরআই’র প্রতিনিধি প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার নাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী নতুন ইটভাটা স্থাপনের কোনো অবকাশ নেই। বরং, প্রচলিত ইটভাটাগুলো আধুনিক দূষণমুক্ত ইটভাটায় রূপান্তর করার বিষয়ে ইটভাটা মালিকরাও একমত।’ অবৈধ ইটভাটাগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য সময় দেওয়ার বিষয়ে মত প্রকাশ করেন তিনি।

স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব নাজমূল আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগ ইটের গুণগত মান নিশ্চিত করা ও ইটের নির্ধারিত সাইজের উপর বিশেষ জোর দিচ্ছে।’ তবে সভায় কোনো মতামত দেননি তিনি।

সভার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বলা হয়, পরিবেশ অধিদফতর বিদ্যমান ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইন-২০১৩ (সংশোধিত-২০১৯) এর সংশোধনের বিষয়ে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাব পুনরায় পর্যালোচনা করে সংশোধনের প্রয়োজন আছে কি না— সে বিষয়ে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে মতামত পাঠাতে হবে। ২০১৩ সালের আইনের আগে কম দূরত্বে স্থাপিত ইটভাটাগুলোকে ২০১৩ সালের আইনের ৮ (৪) ধারা অনুযায়ী যথাস্থানে সরিয়ে নেওয়ার বিধান রাখা হলে কতগুলো ইটভাটা সরিয়ে নেওয়া হয় এবং যারা সরিয়ে নেয়নি তাদের তালিকা পরিবেশ অধিদফতর এক সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে সরবরাহ করবে।

সারাবাংলা/জেজে/এনএস

ইটভাটা আইন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর