Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার নিয়ে জাপায় দ্বন্দ্ব

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ অক্টোবর ২০২২ ২৩:২২

ঢাকা: বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, আর গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) হলেন দলের চেয়ারম্যান। নিয়ম অনুযায়ী সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতার গাড়িতে থাকবে জাতীয় পতাকা। কিন্তু দলীয় কোন্দল এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রওশনের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা নিয়ে এবার মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন দেবর-ভাবি। রওশনের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা উচিত নয়— দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছেন রওশনপন্থি নেতাকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘নৈতিকতার প্রশ্নে রওশন এরশাদ তার গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারে না। কারণ, তাকে প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় বিরোধী দলীয় নেতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সংসদীয় সভা থেকেও বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের চিঠি স্পিকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে নৈতিকভাবে তার পতাকা ব্যবহারকরা উচিত নয়।’

মুজিবুল হকের এমন বক্তব্যের কারণে জাপার রওশনপন্থি ও জিএম কাদেরপন্থিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় উভয় পক্ষের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলটির অনেক নেতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ পরিস্থিতিতে দলটির জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গঠিত জেলা পর্যায়ে রওশনপন্থি আহ্বায়ক কমিটিগুলো এবং ঢাকা মহানগর কমিটি জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করবে। শনিবার (৮ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টায় জেলা কমিটির নেতারা রওশনপন্থি জাপার কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সূত্রটি বলেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নড়াইল, খুলনা জেলা ও মহানগর, সিলেট, নোয়াখালী, নাটোর, কুমিল্লাসহ প্রায় ৩৬টি জেলায় জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক কমিটি আগামীকাল রোববার (৯ অক্টোবর) বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। একইসঙ্গে জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুর কুশপুত্তলিকা দাহ করবে। এছাড়া জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু এসব জেলায় গেলে তাদের গায়ে পচা ডিম নিক্ষেপ করার মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

এসব কর্মসূচির বিষয়ে রওশনপন্থি জাপা নেতা এস এম এম আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুজিবুল হক চুন্নুর ধৃষ্টতা দেখে অবাক হয়েছি। রওশন এরশাদ না হলে মুজিবুল হক চুন্নুর অস্তিত্ব থাকত না। বেগম রওশনের বদৌলতে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে মন্ত্রী হয়েছেন। আজ বলছেন— বেগম রওশন এরশাদ কে?’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশ জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিলের জন্য আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটির নেতাকর্মীরা জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। দেশের ৩৬টি জেলাতেই জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে। আর আমরা আগামীকাল বৈঠক করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’

এরশাদ কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুন অর রশিদ বলেন, ‘আগামী সোমবার (১০ অক্টোবর) সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। একইসঙ্গে জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হবে। জিএম কাদের ও চুন্নুর কুশপুত্তলিকায় গণথুতু দেওয়া হবে।’

এর আগে, গত সেপ্টেম্বরে রওশন এরশাদ দলের কাউন্সিল ডাকার পর একদিনের মধ্যে রওশন এরশাদকে বিরোধীদলের নেতার পদ থেকে সরিয়ে গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় পার্টি। এ বিষয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে চিঠি পাঠান তারা। যা নিয়ে ওই সময় দলটির ভিতর তুমুল বিতর্ক দেখা দেয়।

ওই ঘটনার একদিন পর জি এম কাদেরের চিঠি আমলে না নিতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পাল্টা চিঠি পাঠিয়েছিলেন দলটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে দলে মতবিরোধ চলছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার মৃত্যুর আগে জানিয়েছিলেন, তার অবর্তমানে ছোট ভাই দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদেরই হবেন দলের চেয়ারম্যান।

গত ১৪ জুলাই এরশাদ মারা গেলে ওই ঘোষণা অনুযায়ীই জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যদিও রওশন এরশাদের অনুসারীরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি।

এদিকে এরশাদ নিজেও তার অবর্তমানে বিরোধী দলীয় নেতার পদে কারও নাম বলে যাননি। ফলে এরশাদের মৃত্যুর পর কেবল দলের চেয়ারম্যান পদই নয়, বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়েও রওশন ও কাদেরের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস

গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টি জি এম কাদের বেগম রওশন এরশাদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর