Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেকোনো মূল্যে রওশনের সঙ্গে মীমাংসা চান জি এম কাদের

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ অক্টোবর ২০২২ ১৩:৪৩

ঢাকা: জাতীয় পার্টির (জাপা) অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে পদক্ষেপ নিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। যেকোনো মূল্যে বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে মীমাংসায় যেতে যান তিনি। এজন্য আগামী ২৬ নভেম্বর দলটির জাতীয় সম্মেলন বাতিলসহ মীমাংসার প্রস্তাব নিয়ে রওশন এরশাদের কাছে যাবেন সংসদ সদস্য (এমপি) আদিলুর রহমান আদেল। আর তা না হলে রওশনের ছেলে সাদ এরশাদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, জি এম কাদের বুঝতে পেরেছেন নির্বাচনের আগে জাপা বিভক্ত হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে তার নির্বাচনী হিসাবও পাল্টে যাবে। ব্যক্তিগতভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তিনি। এজন্য রওশন এরশাদের কাছে মীমাংসার প্রস্তাব নিয়ে যাবেন এমপি আদেল।

গতকাল শনিবার (৮ অক্টোবর) জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও দলীয় সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় এমপি আদেলকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টির যৌথ সভার বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, মীমাংসা না হলে রওশনের ছেলে সাদ এরশাদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ৭-এর ৪ ধারায় বলা আছে, দলের কোনো সদস্য যদি অন্য দলে যান বা গ্রুপ করেন, তা হলে তার সদস্য পদ খারিজ হবে। এক্ষেত্রে রওশন এরশাদের পদটি যেহেতু দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি ওই ধারায়। তারপরও দেশবাসীকে জানানোর জন্য একটি বহিষ্কার আদেশ পাঠনো হবে। এমন সিদ্ধান্ত  নিয়েছেন জি এম কাদের।

দলটির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর জন্য একটি প্রস্তাব নিয়ে রওশন এরশাদের কাছে যাবেন বা টেলিফোনে কথা বলবেন এমপি আদেলুর রহমান আদেল। এরশাদের আপন বোনের ছেলে হলেন আদেল। সে হিসাবে তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর রওশন এরশাদ মীমাংসায় রাজি না হলে গঠনতন্ত্রের ৭-এর ৪ ধারা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

জাপা সূত্রগুলো বলেছে, জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অবৈধভাবে অর্থসম্পদ উপার্জন এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ৫২ জনকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত এবং নির্বাচনী জোট বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি কূটনৈতিক মহলেও জাপার দ্বিধাবিভক্ত নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি। সব কিছু মিলিয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে চান তিনি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্টরা বলেছে, গত শনিবার জাপা ও জাপা দলীয় সংসদ সদস্যদের যৌথ বৈঠকের আগে দলীয় এমপি ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুর রহমান, রওশন এরশাদের সঙ্গে জাতীয় কাউন্সিল বাতিল এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ফেলার জন্য টেলিফোনে কথা বলেছেন। জবাবে রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘বিষয়টি আমি ভেবে দেখব।’ গত শনিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরসহ অন্যান্য নেতারা রওশন এরশাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো জবাব পাননি। ফলে রওশন এরশাদের মতামত জানতে এমপি আদেলুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য আজ ব্যাংকক যেতে পারেন তিনি।

গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার নিয়ে জাপায় দ্বন্দ্ব

এদিকে আগামী ১৭ অক্টোবর দেশে ফিরতে পারেন রওশন এরশাদ। ঘনিষ্ঠজনরা জানান, আগামী ১৭ অক্টোবর রওশন এরশাদের দেশে ফেরার বিমান টিকেট কনফার্ম করা হয়েছে। দেশে ফিরেই সংসদীয় দলের সভা ডাকবেন তিনি। ওই সভায় জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের উপনেতা পদসহ অন্যান্য পদে পরির্বতন আনা হবে।

এক্ষেত্রে কাজী ফিরোজ রশিদকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের উপনেতা করা হতে পারে। তবে এর আগে কাজী ফিরোজ রশিদকে উপনেতার পদে মনোনয়ন দেওয়ার চিঠিটি প্রকাশ করতে পারেন রওশন।

এ বিষয়ে রওশন এরশাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। রওশনপন্থী এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অনেক এমপি প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। রওশন এরশাদ দেশে ফেরার পর অবস্থা বুঝে তাদের মতামত জানাবেন।’

একজন দলীয় এমপি বলেন, ‘রওশন এরশাদের সঙ্গে দলীয় অনেক নেতারই কথা হচ্ছে। তারা আবার জি এম কাদেরের পক্ষেও কথা বলছেন। এক কথায়, তারা শ্যাম এবং কূল দুটোই রাখছেন। এছাড়া তাদের উপায় নেই।’

ওই এমপি আরও বলেন, ‘রওশন এরশাদের পক্ষে এমপি সালমা ইসলাম এবং রওশন আরা মান্নান কথা বলেন। সালমা ইসলাম এমপি সম্প্রতি যৌথ সভায় বলেছেন, ম্যাডাম আমাদের বট গাছ। তিনি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী। তার প্রতি সম্মান রাখা উচিৎ। সালমা ইসলামের ওই বক্তব্যের সম্মতি জানান উপস্থিত সব এমপি।’

জাপার এক সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মূলত আমরা সবাই ম্যাডামের পক্ষে। ম্যাডাম যে কাউন্সিল ডেকেছেন তারও পক্ষে। তবে রওশন এরশাদ সঠিকভাবে যোগ্য লোক দিয়ে বিষয়টি পরিচালনা করতে পারছেন না।’

অপর আরেকজন সংসদ সদস্য বলেন, ‘জি এম কাদেরের কথা না শুনলে দল থেকে বহিষ্কার করে দেবেন। তাই তার কথা মতো চলতে হয়, কথা বলতে হয়। বর্তমানে তিনি মিটিং ডাকলে সেখানে যেতে বাধ্য হন সবাই। জি এম কাদের নিজেই সবাইকে ফোন করেন। তাই সবাই ভয়ে তার ডাকা মিটিংয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘রওশন এরশাদের সঙ্গে দলীয় কোন্দল মীমাংসার জন্য সচেষ্ট হয়েছেন জি এম কাদের। গতকালের বৈঠকে তিনি মীমাংসার প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার জন্য এমপি আদেলকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সব এমপি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মীমাংসার বিষয়ে একমত।’

একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ’সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে জি এম কাদের সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি আগামী ২৬ নভেম্বর জাতীয় কাউন্সিল সফল করার জন্য দলের জেলা ও উপজেলা নেতাদের সঙ্গে তার মতবিনিময় করার কথা রয়েছে।

আরও পড়ুন:

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনএস

গোলাম মোহাম্মদ কাদের জাতীয় পার্টি রওশন এরশাদ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর