আপাতত লোডশেডিং থেকে মুক্তি মিলছে না, আরও ২ মাসের অপেক্ষা
১০ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৪২
ঢাকা: গত কয়েকদিনে রাজধানীসহ সারাদেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং প্রকট হয়ে উঠেছে। সকাল-দুপুর তো বটেই মধ্য, শেষ রাতেও চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। দুই ঘণ্টার জায়গায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টাও লোডশেডিং হচ্ছে। আর এই লোডশেডিং আপাতত কমছেনা। কবে নাগাদ কমবে, তাও নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না।
এ নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘রফতানিমুখী শিল্প কারখানায় গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে বিদ্যুতে। যে কারণে বাধ্য হয়ে বাড়াতে হচ্ছে লোডশেডিং।’ তবে আগামী নভেম্বর মাসে এই পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাই মাসে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে লোডশেডিং করে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। কথা ছিলো দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না। আশা করা হয়েছিলো অক্টোবর থেকে এই লোডশেডিং তুলে নিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ আগের মতো করা হবে। কিন্তু পরিস্থিতি দেখা দিলো ভিন্ন। দিন দিন বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা।
এর মধ্যে গত ৪ অক্টোবর জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বিপর্যয় দেখা দিলে ঢাকাসহ দেশের চার বিভাগের একটা বড় অংশ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। ওই ঘটনার পর থেকে রাজধানী ঢাকাতে কয়েক গুণ বেড়ে যায় লোডশেডিং। যদি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এটাকে দায়ী করছেন না। তিনি বলছেন, ‘জ্বালানি সংকটের কারণেই লোডশেডিং বাড়ছে।’
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘লোডের কারণে দিনের বেলায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে, আবার রাতের বেলা চালাতে হচ্ছে। দিনের বেলা যেগুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে সেগুলো রাতে চালানো হচ্ছে। এ কারণে লোডশেডিংয়ের সময়টা বড় হয়ে গেছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাচ্ছিলাম অক্টোবর থেকেই লোডশেডিং তুলে দেবো। সেটা পারলাম না। কারণ আমরা গ্যাস আনতে পারলাম না। গ্যাস যা পাচ্ছি তা শিল্প কারখানাকে দিতে হচ্ছে। সাময়িক বললেও তা হচ্ছে না, কারণ বৈশ্বিক পরিস্থিতি অন্যরকম করে ফেলে।’
আবারও গ্রাহকদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলছি একটু ধৈর্য্য ধরেন, আর একটু কষ্ট করতে হবে। নভেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি আরেকটু ভালো হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রয়োজন ১১০০ থেকে সাড়ে ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে। ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই ঘাটতির প্রভাবেও লোডশেডিং বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ আর কারিগরির কারণে ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া আংশিক বন্ধ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনছে না সরকার। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমারা শিল্প কারখানায় গ্যাসটা দিতে চাচ্ছি। রফতানিমুখী শিল্প কারখানার চাহিদা বেড়ে গেছে। সেখানে গ্যাস দিতে হচ্ছে, সে কারণে বিদ্যুতে গ্যাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। আবার সার কারখানাগুলো সচল রাখতে হচ্ছে। সেজন্য তেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ৮ ঘণ্টার বেশি চালাতে পারি না। এসব বিষয়গুলো সব একসঙ্গে যোগ হয়েছে।’
সারাবাংলা/জেআর/এমও