জ্বালানি সংকটেই বাড়ছে লোডশেডিং
১১ অক্টোবর ২০২২ ১৬:৩১
ঢাকা: বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক গ্যাস দরকার ১১০০ মিলিয়ন ঘনফু্ট, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সে হিসাবে প্রতিদিন গ্যাসের সংকট থাকছে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম না কমলে এই সংকট ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জ্বালানি সংকটের কারণে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তবে এই সংকট নভেম্বরের মধ্যে কিছুটা কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) সচিবালয়ে সারাবাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলছিলেন নসরুল হামিদ।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল অক্টোবরে শীত শুরু হবে, তখন হয়তো বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে ফলে বিষয়টা ম্যানেজ করতে পারব। কারণ, আমরা তো নতুন করে জ্বালানি আনতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যা আছে তা থেকে সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। গ্যাসভিত্তিক ১১ হাজার মেগাওয়াট। বাকি তিন থেকে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সোলার ও বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এর বাইরে ক্যাপটিভ পাওয়ার আছে চার হাজার, সেখানেও গ্যাস ব্যবহার হয়। জ্বালানি সংকটের কারণে এখন গ্যাসে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। তেলভিত্তিক কেন্দ্র আট ঘণ্টার বেশি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাও দিনে চালানো কেন্দ্র রাতে বন্ধ রাখা হয়। আর রাতে চালানো কেন্দ্র দিনে বন্ধ থাকে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ধারণা ছিল এই সময়ে চাহিদা কমে আসবে। কিন্তু আবহাওয়ার যে অবস্থা তাতে চাহিদা একটুও কমেনি। আগের মতোই রয়ে গেছে। আমি আশা করেছিলাম, বিশ্ববাজারে গ্যাসের দাম মনে কমে আসবে। যদিও খোলাবাজারে কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমাদের জন্য সেটাও অনেক বেশি। যে গ্যাস পাঁচ ডলারে কিনতাম তা এখন ২৮ ডলারে পৌছেছে। এ দামে কিনতে গেলেও ৩৫ ডলার পরে যাচ্ছে প্রতি ইউনিট।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি ইউনিট গ্যাস ১১ টাকা বিক্রি করা হয় কমার্শিয়ালে, ১৬ টাকা শিল্পে, ৫ টাকা বিদ্যুতে। এটা অনেক বড় লোকসান। ভর্তুকি হিসেবে সরকার কত টাকা দেবে? ডলারের দাম বেড়ে গিয়ে সমন্বয়ে বিরাট একটা গ্যাপ হয়ে গেছে। যেখানে ৮৬ টাকা দিয়ে ডলার কেনা হতো সেখানে এখন দাম পৌঁছেছে ১০৬ টাকায়। ভেবেছিলাম তেলের দাম কমফোর্ট হবে। তেলের দাম ব্যরেল প্রতি ৮০ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়াল ১৪০ ডলারে। এখন ১০ ডলার কমলেও লাভ হচ্ছে না। এই যে তেলের দাম সমন্বয় করা হলো, তারপরেও বছরে বিপিসির লোকসান পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সে কারণে একটু ধৈর্য্য ধরার কথা বলছি। আমরা আশা করেছিলাম, অক্টোবর থেকে পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে। কিন্তু বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে ভিন্ন।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের রফতানি টিকিয়ে রাখতে বিদ্যুৎ খাত থেকে গ্যাস নিয়ে রফতানিমুখী শিল্প কারখানার দিকে দিচ্ছি। সব মিলিয়ে এ মাসটা একটু সহ্য করতে হবে। এরমধ্যে তাপমাত্রা যদি একটু কমে আসে তাহলে বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসবে। তাহলে আমরা ম্যানেজ করতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘সবার কষ্ট হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। গতকাল আমার বাসায় দুইটার পর বিদ্যুৎ ছিল না। একটা বিশেষ পরিস্থিতি পার করছি আমরা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সামনে হয়তো পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, যদি যুদ্ধ এভাবে থাকে।’
সারাবাংলা/জেআর/ইআ