বাড়ছে আম বাগান, ‘আশঙ্কাজনক’ হারে কমছে ফসলি জমি
১৩ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৪৭
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাড়ছে আম বাগানের পরিমাণ। এতে কমছে বিভিন্ন ফসলি জমির পরিমাণ। আমের ফলন ও লাভ এত বেশি যে ব্যাপক হারে কমছে বিভিন্ন ফসলের জমি।
সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের মহিপুর গ্রামের আমচাষি আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সার, বীজ এবং কীটনাশকে খরচ করে ধান, গম, ভুট্টা চাষে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে পরিমাণ লাভ হয় না। কিন্তু আম চাষ করে সহজে বেশি লাভ পাওয়া যায়। যার কারণে ফসলের জমিতে দিন দিন আমবাগান বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফসল চাষে পরিশ্রম বেশি কিন্তু সেই তুলনায় আম চাষে পরিশ্রম কম। বেশি পরিশ্রম করে যেখানে ফসল চাষ করে উৎপাদন খরচই উঠে না, সেখানে কম পরিশ্রমে আম চাষে লাভবান হওয়া যাচ্ছে। এ কারণে দিন দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফসলি জমিতে আম বাগান বাড়ছে।’
কয়েকজন আমচাষি জানান, যেকোনো ফসলের চেয়ে তুলনামূলক বেশি লাভের কারণে ফসলের জমিতে আমের বাগান তৈরি হচ্ছে। আমের বাগান তৈরি করায় কৃষকরা প্রতিবছর অল্প শ্রমেই পাচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
তবে ফসলি জমিতে এভাবে আমবাগান করার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি দেখছেন সচেতন মহল। তাদের আশঙ্কা, জমি কমে গেলে ধান উৎপাদন কমে যাবে। এতে ভবিষ্যতে দেশ খাদ্য সংকটে পড়তে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় সব এলাকায় ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে বিভিন্ন জাতের আমবাগান। ফসলি জমিকে আমবাগান বানানোর যেন প্রতিযোগিতা চলছে রীতিমত।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব আম গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘অনেক এলাকার কৃষক ধান কিংবা সবজির ফসলের চেয়ে আম চাষ করে বেশি লাভবান হন। যে কারণে এখন কৃষি জমির ওপর আমবাগান হচ্ছে। কম পরিশ্রমে অধিক লাভজনক হওয়ায় যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘চাষিরা আমগাছের নিয়মিত পরিচর্যা করেন এবং যত্ন নেন। যার কারণে প্রতি বছরই ভালো ফলন হচ্ছে। আমকে দেশের বাইরে রফতানি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে পারলে আম বাগান বৃদ্ধির হার আরও বাড়বে ও কৃষকরা আম চাষে আরও উদ্বুদ্ধ হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে তাদের আয়।’
উল্লেখ্য, এবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। প্রায় ৫৫-৬০ লাখ গাছে চলতি মৌসুমে কৃষি বিভাগ জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। গতবছর জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে।
সারাবাংলা/এমও