তলিয়ে গেছে ২ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি, কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল
২২ আগস্ট ২০২৪ ২১:২৭ | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৪ ২২:৫৬
ঢাকা: প্রবল বর্ষণের সঙ্গে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় দেশের ১২ জেলায় আউশ ও আমন ধান এবং শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসলের দুই লাখ ৩০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। এসব ফসলি জমির অধিকাংশই তলিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইং থেকে পাওয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এসব জমির ফসল আংশিক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের ১২টি জেলা। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করতে থাকায় একের পর এক জনপদ প্লাবিত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ১৬ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে সবচেয়ে বেশি ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে কুমিল্লায়— ৬৫ হাজার ১৩৫ হেক্টর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ হাজার ২৭১ হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে মৌলভীবাজারে, তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে নোয়াখালীতে। সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেওয়া ফেনীতে ৩১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১২ হাজার ৮৯ হেক্টর, চাঁদপুরে ১০ হাজার ৯২২ হেক্টর, লক্ষ্মীপুরে ৯ হাজার ৪৭৮ হেক্টর, হবিগঞ্জে ছয় হাজার ৮৯৪ হেক্টর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছয় হাজার ৪১৪ হেক্টর, কক্সবাজারে চার হাজার ২৮৯ হেক্টর, সিলেটে তিন হাজার ৩৮৯ হেক্টর ও মুন্সীগঞ্জে ২৩০ হেক্টর জমির ফসল এখন বন্যার পানির নিচে।
এদিকে ১২ জেলায় যেসব ফসলের ক্ষতি হয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আমনের। প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার ৬১৯ হেক্টর জমির আমন ধান বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আউশের আবাদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৮ হাজার ২০৯ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া বোনা আমন ৫৭০ হেক্টর, রোপা আমন বীজতলা ১২ হাজার ৯১০ হেক্টর, শাকসবজি ৯ হাজার ৫১৯ হেক্টর, আখ ৩৮৪ হেক্টর ও পানের ১৯১ হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, বন্যা পরবর্তী সময়ে উঁচু এলাকায় আপৎকালীন নাবী জাতের রোপা আমন বীজতলা তৈরি, ভাসমান বীজতলা তৈরি, স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উফশী জাত আবাদ, স্বল্প মেয়াদি রোপা আমন ধান (ব্রিধান-৫৬, ৫৭, ৭৫, ৮৭) ও বন্যা সহনশীল জাতের (ব্রিধান-৫১, ৫২, ৭৯) ধানের আবাদ বাড়াতে পারলে বন্যার ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যাবে।
এ ছাড়া ভাসমান বেডে শাকসবজি আবাদের ব্যবস্থা করা, বস্তায় লতা জাতীয় ও মশলা (মরিচ, আদা) আবাদ, নাবী জাতের রোপা আমন, বিআর-২২, ২৩ ও স্থানীয় গাইঞ্জা, আবছায়া চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে অধিদফতর। ডাবল ট্রান্সপ্লান্টিং পদ্ধতিতে রোপা আমন চাষ বাড়ানো ও ধানের অঙ্কুরিত বীজ সরাসরি বপন করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কৃষি মন্ত্রাণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান ছুটি বাতিল করে বন্যা কবলিত এলাকার সব সরকারি কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে অবস্থান করার ও সেবা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি প্রয়োজনে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে কৃষিবিষয়ক পরামর্শ নিতে বলেছেন সবাইকে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
কৃষি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর টপ নিউজ ফসলি জমি বন্যা বন্যার ক্ষতি