আইন মেনে চললে সড়ক দুর্ঘটনা হবে না: বিআরটিএ চেয়ারম্যান
২১ অক্টোবর ২০২২ ১৮:৪৬
ঢাকা: জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের প্রতিপাদ্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, আইন মেনে আমরা যদি সবাই সড়কে চলতে পারি তাহলে কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা হবে না। এখানে প্রত্যেকের রোল যদি পজিটিভ না হয় তাহলে কিন্ত গণপরিবহনে বা পরিবহন সেক্টরে সফলতা আনা অনেক কঠিন একটা কাজ।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকালে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি বিআরটিএ কার্যালয়ে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিআরটিএ’র জনবল সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের দিবসের যে মূল প্রতিপাদ্য সেটাই কিন্তু মূল ম্যাসেজ। আমরা আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি। তার মানে আইন মেনে যদি আমরা সবাই সড়কে চলতে পারি তাহলে কিন্তু কোনো দুর্ঘটনা হবে না। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো ঘটবে না। এক্ষেত্রে এনফোর্সমেন্ট তারপরও আমাদের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ যারা আইন মানে না তাদেরকে আইনের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘বিআরটিএ’তে যে ম্যাজিস্ট্রেট আছে তারা সপ্তাহে ছয়দিন মোবাইল কোর্ট করে তার পাশাপাশি প্রশাসনের যারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছে তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। হাইওয়ে পুলিশ মেট্রোপলিট্টন পুলিশ প্রত্যেকেই রাস্তায় রয়েছে। তারাও কিন্তু আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তারপরও সবাই সচেতন হলে আরও বেশি বেশি কার্যকর করা সম্ভব হবে।’
ঢাকা সিটিতে যত্রতত্র উঠানামা, ফুটপাত দখলসহ গণপরিবহনের সার্বিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারের যে বিভিন্ন উদ্যোগে আজকে আমাদের দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র ২০ বছর আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। সড়কের অনেক উন্নয়ন হয়েছে।’
এ বিষয়ে যাত্রী সাধারণের চরিত্র বিশ্লেষণ করার আহ্বান জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের দেখা যাচ্ছে যে, আমার ঘরের সামনে নামতে হবে। আমার ঘরের সামনে উঠতে হবে। তাই আমাদেরকে সবাইকে আইন মানতে হবে এবং আমাদের যে চরিত্র, চরিত্রও পাল্টাতে হবে। কারণ আমি যদি বিদেশের কথা বলি, যদি উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে ওরাই তো আমাদের মডেল। উন্নত দেশকে ফলো করে আমরাও উন্নতি করব। কিন্তু দেখা গেল, ওরা ব্যাগ নিয়ে দেড় দুই কিলোমিটার হাঁটে যে কোনো এমআরটি হোক বিআরটিএ হোক যে কোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য। তারা ওদের কাঁধে, পিঠে ব্যাগ নিয়ে অনেক দূর হাঁটে। কিন্তু আমরা আমাদের একদম দশ মিটার হাঁটতেও ইচ্ছা হয় না। সামনেই একেবারে উঠতে হবে। তার জন্য অনেক যাত্রী নিজেদের পছন্দমতো জায়গায়….বাস স্টপেজ দেওয়ার জন্য মারপিট শুরু করে। সুতরাং অবকাঠামো আমাদের যাই আছে কিন্তু এটি ব্যবহার করতে পারছি না। একদিকে ব্যাপক জনসচেতনতা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সীমিত জনবল দিয়ে চেষ্টা করছি। যত্রতত্র যাত্রী উঠছে কেন? এটি তো স্টপেজ না। দুই নম্বর হল যে যদি আমার এনফোর্সমেন্টের কথা বলেন, যতগুলো স্টপেজ আছে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট রাখতে হবে। ঢাকাতে ম্যাজিস্টেট আছেন পাঁচজন। তাহলে ঢাকা সিটিতে কতজন ম্যাজিস্ট্রেট দরকার? সুতরাং আমি আবারও বলছি জনসচেতনাটাই এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আমি আমার নিজের নিরাপত্তাটা নিজে আগে দেখব।’
বিআরটিএ’র দায়িত্ব গ্রহণ করে সংস্থাটির কতজন অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাইলে সংস্থা প্রধান জানান, আমি প্রত্যেককেই এই ম্যাসেজটা দিয়েছি এবং অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য কিছু বিষয় আছে। আমি বিশ্লেষণ করি, আপনি যদি সিস্টেম পাল্টান তাহলে অভ্যাসও পরিবর্তন হবে। আমরা চাচ্ছি বিআরটিএ’কে শতভাগ ডিজিটালাইজড করতে। অলরেডি ৭০ শতাংশের বেশি আমরা ডিজিটালাইজড করে ফেলছি। এতে করে পাবলিক কন্ট্রাক্ট কমে যাবে। সেবার মান বাড়বে। সেইভাবে আমরা কাজ করছি। প্লাস তাদেরও অভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আমি অলরেডি চারজনকে স্যাক করেছি।তারা সার্ভিস বেনিফিট কিছুই পাবে না। আরও ১২ থেকে ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছি। এখনও আমাদের কাছে ১৫টির বেশি মামলা চলমান আছে। অভ্যাস পরিবর্তনেই করতে হবে। আমরা চাই ভালো কিছু করতে।’
এ বছর ৬ষ্ঠ বারের মতো জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ উদযাপন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি। সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, অধিকাংশ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয় আইন না মানা আইন প্রতিপালনে অবহেলার জন্য। এ কারণে এবারের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘আইন মেনে সড়কে চলি, নিরাপদে ঘরে ফিরি’ নির্ধারণ সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে করি।
এবারে জাতীয় পর্যায় থেকে জেলা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০১২” উদযাপিত হচ্ছে। আশা করি এবারের আয়োজন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এছাড়াও বিআরটি চেয়ারম্যান জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের গৃহীত কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হলো, ২২ অক্টোবর সকাল ৯টায় দোয়েল চত্বর হতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। শোভাযাত্রায় দুই হাজারের অধিক মানুষ অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা হয়। এরপর সকাল ১০টায় টায় জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ দিবস উপলক্ষে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ বিশেষ অতিথি হিসাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান উপস্থিত থাকবেন। সভায় সভাপতিত্ব করবেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
এ ছাড়াও জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সাজসজ্জা করা হবে বলেও জানানা তিনি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ পুলিশ, এআরআই (বুয়েট), সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, ডিটিসিএ, বিআরটিসি, হাইওয়ে পুলিশ বা অন্য যে কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংস্থা নিজস্ব উদ্যোগে সহায়ক কর্মসূচি পালন করবে বলেও তিনি জানান।
সারাবাংলা/এনআর/একে