দুই পুলিশ লাইনের নির্মাণ কাজে ধীরগতি, ফের বাড়ছে মেয়াদ
২৪ অক্টোবর ২০২২ ১০:০৪
ঢাকা: নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না বরিশাল মেট্রোপলিটন ও খুলনা জেলা পুলিশ লাইনের নির্মাণ কাজ। এ প্রেক্ষাপটে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। চতুর্থবারের মতো মেয়াদ বৃদ্ধির এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। তবে এ পর্যায়ে ব্যয় কমছে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ আড়াই বছর। এর মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথমবার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এতেও শেষ হয়নি কাজ। দ্বিতীয়বার ফের এক বছর বাড়িয়ে গত বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর তৃতীয়বার আরও এক বছর বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মেয়াদ করা হয়। গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের ব্যয় হয় মোট ১১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৮০ শতাংশ।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বরিশাল মেট্রোপলিটন এবং খুলনা জেলা পুলিশ লাইনের অফিস ভবন, আবাসিক ভবন ও ব্যারাকসহ বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধার সৃষ্টির মাধ্যমে দাফতরিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘সকল প্যাকেজের কাজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিনা কারণে কোনো ঠিকাদার কাজ সমাপ্ত করতে ব্যর্থ হলে পিপিআর অনুযায়ী লিকুইডিটি ড্যামেজ বা অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
প্রকল্পের মেয়াদ চতুর্থ দফায় আরও এক বছর বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি হতে শুরু করার কতা থাকলেও বাস্তবে প্রকল্প কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। অর্থাৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরুর আগেই ৮ মাস পার হয়। প্রকল্পের কাজের শুরুতে মাটি ভরাট কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। ফলে অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করার আগেই দুই বৎসর সময় লেগে যায়। এ জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদে প্রকল্পের কার্যক্রম সমাপ্ত করা সম্ভব হবে না। তাই আইএমইডির সুপারিশ করে জননিরাপত্তা বিভাগ প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি হতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারিতে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণার কারণে নির্মাণসামগ্রী ও শ্রমিক না থাকায় প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। যে কারণে একনেকে প্রকল্পটির মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় গত বছরের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এটির কার্যক্রম গত বছরের জুন পর্যন্ত করা সম্ভব না হওয়ায় জননিরাপত্তা বিভাগের প্রস্তাবের জন্য ভৌত অবকাঠামো বিভাগ ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পটির মেয়াদ তৃতীয় দফায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায় বরিশাল কেন্দ্রে এক হাজার বর্গফুট ও ৮০০ বর্গফুট কোয়ার্টার ভবন দু’টির স্থান পরিবর্তনের প্রয়োজন হওয়ায় এ কাজ দু’টি শেষ করতে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের প্রয়োজন হবে। খুলনা জেলা পুলিশ লাইন্সে এমটি গ্যারেজ ভবন নির্মাণ কাজটির দরপত্র পর পর ৩ বার আহবান করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন দরদাতা পাওয়া যায়নি। ফলে এ কাজটি এ বছরে শেষ করা সম্ভব হবে না। প্রকল্পে খুলনা ও বরিশাল কেন্দ্রে ৪টি করে মোট ৮টি লিফট ক্রয় ও স্থাপন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিদেশ থেকে লিফট সংগ্রহ একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া যা চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে না। তাই মেয়াদ চতুর্থ দফায় আরও এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষা এবং নাগরিকদের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ পুলিশের। দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের পরিবার থেকে দূরে ব্যারাকে থাকতে হয়। কিন্তু কর্মপরিবেশ ও আবাসনের সুযোগ সুবিধা না থাকলে পুলিশের কাছ থেকে সেবা পাওয়া কঠিন। পুলিশ লাইনসহ অন্যান্য স্থানে পুলিশের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। এ ঘাটতি পূরণের জন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন এবং খুলনা জেলা পুলিশ লাইনে অফিস ভবন, আবাসিক ভবন, ব্যারাকসহ অন্যান্য ভৌত সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির জন্য মূল প্রকল্পটি ১৫২ কোটি ১০ লাখ ৩৯ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে রেট সিডিউল পরিবর্তন এবং নির্মাণ কাজের পরিধি পরিবর্তনের কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল আন্তঃখাত সমন্বয় করে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ১৫১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়।
ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আইএমইডির সুপারিশ, কর্মপরিকল্পনা মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক, নির্বাহী প্রকৌশলী ও জননিরাপত্তা বিভাগকে কঠোর মনিটরিং করতে হবে। ভবিষ্যতে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানোর ক্ষেত্রে পরিপত্র মোতাবেক প্রকল্প সমাপ্তির তিন মাস আগে মেযাদ বৃদ্ধির প্রস্তাব আইএমইডিতে পাঠানোর নির্দেশনা বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভাগ সচেষ্ট থাকবে।
সারাবাংলা/জেজে/এমও