Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আগাম সতর্কতা দিতে পারলে ভূমিধসে প্রাণহানি কমানো সম্ভব’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৪ অক্টোবর ২০২২ ২২:৫৪

ঢাকা: বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার পূর্বাভাসের সতর্কতার ব্যবস্থা থাকলেও ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্থায়ী ও আইনগতভাবে স্বীকৃত কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে হঠাৎ করে হওয়া ভূমিধসে জানমালের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন দেশের তিন পার্বত্য এলাকার মানুষ। এই ক্ষতি এড়াতে ভূমিধসের আগাম সতর্কতা বিষয়ে একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে। এতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ঝুঁকি এলাকা নিরূপণ করে অধিবাসীদের সতর্ক করা ও সরিয়ে নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মাল্টিপারপাস হলে ভূমিধসের আগাম সতর্কতা উদ্ভাবনী বিষয়ক জাতীয় পর্যায়ের কর্মশালায় বক্তারা এ সব কথা তুলে ধরেন।

এতে দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে, কারিতাস বাংলাদেশ ও সিআরএস বাংলাদেশ পরিচালিত সক্ষমতা প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পরীক্ষামূলকভাবে চলমান ভূমিধসে আগাম সতর্কতা বিষয়ক পদ্ধতির একটি মডেল তুলে ধরা হয়। বান্দরবান সদর ও লামা উপজেলায় ছয় বছরের এই পাইলট প্রকল্প কার্যকরে সহায়তা করেছে স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা তহজিংডং ও বিএনকেএস।

প্রশিক্ষণে পাহাড়ধসের সতর্ক চিহ্ন তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো পাহাড়ের ধারে ঢালুতে ঝুঁকিতে থাকা বাড়ি যা বৃষ্টিতে ধুয়ে চলে যেতে পারে, পাহাড়ের মাটিত ভেতর থেকে শেকড় বেরিয়ে আছে এমন, পাহাড়ের মাটির ভেতর থেকে পাথর বেরিয়ে আছে এমন, খাড়া পাহাড়, পাহাড় কাটা, ও বাগানে পাহাড়ের মাটিতে ফাটল। এসব স্থানে পাহাড় ধস হতে পারে যা সম্পর্কে পাহাড়ের অধিবাসীদের সতর্ক করা হচ্ছে বলে জানানো হয়।

একইসঙ্গে পাহাড়ের ঢালের বাড়িগুলোকে নিরাপদ করতে বাড়ির চারপাশে গাছ লাগাতে হবে এবং বস্তা, বেড়া ও শক্ত খুঁটির সাহায্যে মাটি আটকাতে হবে। বড় গাছের শেকড় মাটি ধরে রাখে। বৃষ্টির পানি আর মাটিকে নরম হয়ে আলগা হতে দেয় না। তাই অকারণ বড় গাছ কাটা যাবে না। পাহাড় থেকে যত দূরে সম্ভব বাড়ি বানাতে হবে।

একটি প্রেজেন্টেশন ও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে ল্যান্ডস্লাইড আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম (লিউস) নামক চার স্তরের পদ্ধতির বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। প্রথম স্তরে বিপর্যয় ঝুঁকি নির্ণয়, দ্বিতীয় স্তরে পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং পুর্বাভাস, তৃতীয় স্তরে সাবধানবানী, প্রচার এবং যোগাযোগ এবং চতুর্থ স্তরে সম্প্রদায়, প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া এবং সক্ষমতা।

বিজ্ঞাপন

এই পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে আগাম সতর্কতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে হওয়া ভূমিধসের সময় কি পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, সেটি পর্যালোচনা করে কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলে ভুমিধস হতে পারে তার একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন তারা। একদিনে একশ মিলিমিটারের বেশি, তিনদিনে আড়াইশ মিলিমিটারের বেশি ও সাতদিনে সাড়ে তিনশ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে সেসব জায়গায় ভূমিধসের আগাম সতর্কতা দেওয়া হচ্ছে।

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাপার জন্য ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ছয়টি রেইন গজ বসানো হয়েছে। এ সব রেইনগজ থেকে স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তকর্মীরা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মেপে নির্ধারিত ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করেন। সেখান থেকে আবার ডাটা নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আরেকটু দল। উল্লেখিত পরিমাণ বৃষ্টিপাৎ হলে তখন পাহাড়ধসের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় সতর্কতা প্রচারের পাশাপাশি তাদেরকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক। অধিদফতরের পরিচালক (এমআইএম) নিতাই চন্দ্র দে সরকারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কারিতাস বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক সেবাস্টিয়ান রোজারিও। বক্তব্য রাখেন ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিস (সিআরএস) বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ম্যানেজার স্নিগ্ধা চক্রবর্তী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ফোরওয়ার্ন বাংলাদেশ-এর কো-অর্ডিনেটর আশরাফুল হক, কারিতাসের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান আলেক্সান্ডার ত্রিপুরাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ। মডেলটি একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। পরে উন্মুক্ত আলোচনা হয়।

বলা হয়, পাহাড়ের প্যাটার্ন না বুঝে বাড়ি বানানো, সতর্কবার্তা না মানা, পাহাড় কাটা, নদী-নালা ভরাট করে আবাসস্থল গড়ে তোলা হচ্ছে যার ফলে এসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। তাই এই প্রকল্প আরও জনবান্ধব, স্থায়ী করার জন্য কি কি উদ্যোগ নেওয়া যায় সেটি ভেবে দেখার আহ্বান জানানো হয়।

স্থানীয় ভাষায়, স্থানীয় আদিবাসীদের নিয়ে ভূমিধস মোকাবিলার মডেল গড়ে তোলা হচ্ছে। স্থানীয় কমিউনিটির সদস্যরা বৃষ্টিপাত হলে সেটি মেপে ফেসবুক গ্রুপে আপলোড করে। এতে পাহাড়ধসের ঝুঁকি থাকলে তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

আগাম সতর্কতা ভূমিধস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর