দেশ ফিরছেন রওশন, সংবর্ধনা দিতে প্রস্তুত নেতাকর্মীরা
২৫ অক্টোবর ২০২২ ২২:২৩
ঢাকা: চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে আগামী ২৯ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীর নেতা রওশন এরশাদের। আর ওইদিনই তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে জাতীয় পার্টির রওশনপন্থি নেতারা। বিমানবন্দর থেকে গাড়ি শোভযাত্রা করে তাকে গুলশান-২ নম্বর বাসভবন পর্যন্ত নিয়ে যাবেন তারা।
জানা গেছে, রওশন এরশাদ ওই দিন দুপুর ১২টায় দেশে ফিরবেন। এ সময় কাকলী থেকে গুলশান-২ নম্বর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানাবে। দলীয় সংসদ সদস্যরাও তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু জিএম কাদের বিমানবন্দরে যাবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। তবে রওশনের মান ভাঙাতে জিএম কাদের একটি পদক্ষেপ নিতে পারেন বলে নেতাদের কাছ থেকে আভাস পাওয়া গেছে। যদিও এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলছেন না।
এ প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সারাবাংলাকে বলেন, ‘রওশন এরশাদকে সংবর্ধনা জানাতে যাওয়ার সুযোগ নেই। দলের এমপিরা পারসন টু পারসন লিখিত দিয়েছেন জিএম কাদের আমাদের সংসদীয় দলের নেতা। আর উনাকে (রওশন এরশাদকে) সংবর্ধনা জানাতে জিএম কাদেরসহ আমরা যাব কেন? সেতো (রওশন) আরেকটি দল করছেন।’
রওশনের রাগ ভাঙাতে জিএম কাদেরসহ আপনি বিমানবন্দরে যেতে পারেন- নেতাকর্মীদের মাঝে এমন গুঞ্জন আছে। এর উত্তরে চুন্নু বলেন, ‘সুযোগ নেই। সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।’ তবে এ প্রসঙ্গে জাপার এক এমপি নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, রওশন এরশাদের সঙ্গে জিএম কাদেরের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে দলীয় এমপি আদেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বরফ গলেনি। ফলে এই কৌশলটি নিতে পারেন জিএম কদের। রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই।
এদিকে, রওশনপন্থি নেতা, ১০ম জাতীয় পার্টির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব গোলাম মসিহ সারাবাংলাকে জানান, সংবর্ধনা দেওয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলটির দশম জাতীয় কাউন্সিলের যুগ্ম আহবায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বলেন, ‘ম্যাডাম রওশন এরশাদকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবারের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।’
জানা গেছে, রওশন এরশাদকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ঢাকা মহানগরসহ আশ-পাশের জেলাগুলোকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। জাতীয় পার্টি, যুবসংহতি, ছাত্রসমাজ ও স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, জাতীয় মহিলা পার্টির ব্যানারে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গুলশান-২ নম্বর অবস্থান নেবেন নেতাকর্মীরা। এ সময় ফুলেল শুভেচ্ছায় রওশন এরশাদকে বরণ করে নেবেন তারা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ নভেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য রওশন এরশাদকে থাইল্যান্ডে নেওয়া হয়। এ বছরের ২৭ জুন দেশে আসেন তিনি। কয়েকদিন দেশে অবস্থান করে আবার ফিরে যান। রওশন এরশাদ গতবার দেশে এলে তার সঙ্গে হাসপাতালের একজন নার্সও আসেন। তখন তিনি রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ছিলেন। এবার দেশে ফিরে গুলশানে নিজ বাসভবন থাকবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ৩০ অক্টোবর তিনি সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবেন। এমনকি তার সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকারও কথা রয়েছে। তবে এখনও বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক হয়নি।
জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর রওশন এরশাদকে বাদ দিয়ে জিএম কাদেরকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা করতে স্পিকার বরাবর চিঠি দিয়েছে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল। এর আগের দিন রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টিতে সংস্কার আনার জন্য দলের কাউন্সিল ডাকেন। ঠিক তার পরের দিনি জিএম কাদের সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে বাদ দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠান।
দলের নেতাকর্মীরা জানায়, দলটির প্রেসিডিয়াসম সদস্য ও বিরোধীদলয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ ও রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়মতান্ত্রিক হয়নি। জানা গেছে, মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সই করে যে চিঠিটি স্পিকারের কাছে দিয়েছিলেন তা তিনি প্রত্যাহার করে নেন। এরপরই জিএম কাদের তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। পরবর্তী সময়ে জিএম কাদের সংসদীয় দলের বৈঠক ডেকে নিজকে বিরোধীদলীয় নেতা মনোনীত করে স্পিকারের কাছে আরেকটি চিঠি পাঠান। তবে চিঠির বিষয়ে এখন পর্যন্ত স্পিকারের কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বিষয়টি যাছাই-বাছেইয়ের পর্যায়ে রয়েছে। আসন্ন অধিবেশনে বিষয়টি সুরাহ হতে পারে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রওশন এরশাদ সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকলে সেখানে দলীয় এমপিরা অংশ নেবেন। কারণ তিনি এখনও বিরোধীদলীয় নেতা। এমনকি রওশন এরশাদের ডাকা ওই বৈঠকে নতুন করে সংসদীয় উপনেতা মনোনীত হতে পারে। এই পদে কাজী ফিরোজর রশিদের নাম শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ম্যাডাম রওশন এরশাদ দেশে ফেরার পর সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হবে। ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে আমিই বৈঠক আহ্বান করব। সেটি ৩০ অক্টোবরও হতে পারে। ওই বৈঠকে সংসদীয় দলে পরিবর্তন আসবে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম