Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উগ্রবাদ প্রচার : চাকরিচ্যুত মেজর জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৬ অক্টোবর ২০২২ ২১:৫৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো : অভ্যুত্থানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ২০১২ সালে সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়ার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন আইনের একটি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে, যে জিয়া বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অভিজিৎ রায়সহ ছয়জন মুক্তমনা লেখক, প্রকাশক ও ব্লগার খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।

একই অভিযোগপত্রে জিয়ার সঙ্গে আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ‘আইটি বিশেষজ্ঞ’ ও সিরিয়াফেরত যোদ্ধা সাখাওয়াত আলী লালু, মোহাম্মদ শামীমুর রহমান প্রকাশ শামীম হুজুর, আবদুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিকী মারুফ এবং আমজাদ হোসেন আরিফ।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পরের যোগসাজশে বাংলাদেশের অখণ্ডতা, জননিরাপত্তা ও বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল, অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার উদ্দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচারের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ষড়যন্ত্র এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্র, প্রচেষ্টা ও সহায়তা করার অভিযোগ তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়েছে।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) মামলার তদন্ত সংস্থা নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন অভিযোগপত্রটি প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেন। সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৬ (২) (ঈ), ৮, ৯, ১০, ১২ ও ১৩ ধারায় এতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘খুলশী থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। মামলায় পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আমরা অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছি। এখনও শুনানি হয়নি।’

২০২১ সালের ১১ জুন নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে আহলে হাদিসপন্থীদের একটি মসজিদের সামনে থেকে সাখাওয়াত আলী লালুকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরনের জিহাদি বইসহ গ্রেফতার করেন। গ্রেফতার সাখাওয়াত নগরীর লালখান বাজার এলাকার অভিজাত লন্ড্রি ‘ওয়াশো ড্রাই ক্লিনার্সের’ মালিক শমসের আলীর ছেলে।

তার দেওয়া তথ্যে ১৫ জুন গ্রেফতার করা হয় মোহাম্মদ শামীমুর রহমান প্রকাশ শামীম হুজুরকে। তিনি নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব এবং স্থানীয় একটি কওমি মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন।

এই দু’জনকে গ্রেফতারের পর নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলামের জঙ্গি তৎপরতার তথ্য পান কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা। সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলায় হয় খুলশী থানায়। দু’জনকে কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে পাওয়া তথ্য উদ্ধৃত করে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সাইয়েন্সে উচ্চতর ডিগ্রি সম্পন্ন করা সাখাওয়াত পীস টিভিতে জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে এবং জিহাদী বই পড়ে উদ্বুদ্ধ হন। লালখান বাজারে সাতকানিয়া মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে পরিচয় হয় ওমর ফারুক নামে একজনের সঙ্গে। দু’জনে জিহাদের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করত। ওমর ফারুকের মাধ্যমে সাখাওয়াতের সঙ্গে পরিচয় হয় ঢাকার আবদুল্লাহ আল মামুন সিদ্দিকী মারুফ এবং আমজাদ হোসেন আরিফসহ কয়েকজনের সঙ্গে। এভাবে তারা ২০১২ সালের দিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।

নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনিতে শামীমুর রহমানের বাসায় আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াসহ কয়েকজনের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয় তাদের। এরপর ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল সাখাওয়াত সিরিয়ায় গিয়ে জিহাদে অংশ নেয়ার উদ্দেশে তুরস্কে চলে যান। একমাস পর সিরিয়ায় ঢুকে ‘হায়াত তাহরীত আস-শাম’ নামে একটি সংগঠনে যোগ দেয়, যারা সিরিয়ার ইদলিব শহর নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের কাছ থেকে একে-৪৭ চালানো এবং গ্রেনেড হামলার প্রশিক্ষণ নেয়। সিরিয়ায় জিহাদে অংশ নেয়ার পর আবার ফিরে যায় তুরস্কে। সেখান থেকে ইন্দোনেশিয়া ঘুরে সাখাওয়াত ২০২১ সালের ২২ মার্চ দেশে ফিরে আসে।

এরপর থেকে জিয়ার নেতৃত্বে সাখাওয়াত, শামীম, আবদুল্লাহ আল মামুন, আমজাদ এবং ওমর ফারুকসহ কয়েকজন মিলে দেশে জিহাদি কার্যক্রম প্রচার করে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে আসছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে। তবে পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায় ওমর ফারুককে অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়নি।

উল্লেখ্য, সাখাওয়াত ও শামীমুরকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আলোচিত চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হকের চট্টগ্রামের তৎপরতার বিষয়ে জানতে পেরেছিল কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা।

মেজর জিয়া নামে আলোচিত সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হকের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায়। ১৯৯৭ সালে সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে।

২০১২ সালে অভ্যুত্থানের চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ তিন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে সেনাবাহিনী। দুই কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হলেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন জিয়া।

পুলিশের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হন জিয়া। ওই বছর থেকে একে একে হত্যার শিকার হন ব্লগার ও ‍মুক্তমনা লেখক রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত দাস বিজয়, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিম উদ্দিন, সমকামীদের অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান এবং তার বন্ধু মাহবুব তনয়।

এর মধ্যে ছয়টি হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার দায়ে চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হককে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।

২০১৬ সালের ২ আগস্ট জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। তবে এক দশক ধরে নিজেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন জিয়া।

সারাবাংলা/আরডি/একে

উগ্রবাদ টপ নিউজ মেজর জিয়া


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর