Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হত্যার অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক, সারাবাংলাকে মিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ অক্টোবর ২০২২ ১৬:৩৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো : পাঁচবছর আগে চট্টগ্রামে এক ছাত্রদল নেতাকে হত্যার যে ‘নালিশ’ পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে করা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেছেন তৎকালীন পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, যিনি এখন রংপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে আছেন। এই ‘নালিশ’ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি পরিকল্পিতভাবে ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা নুরুল আলম নুরুকে হত্যার অভিযোগ এনে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁইয়ার আদালতে একটি নালিশি মামলার আবেদন করেন। তবে আদালত এখনও আবেদনটি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।

ওই আবেদনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা হলেন- চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমানে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নুরে আলম মিনা, রাউজান থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেফায়েত উল্লাহ ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ মো. জাভেদ।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে টেলিফোনে সারাবাংলা’র সঙ্গে কথা বলেন ডিআইজি পদমর্যাদায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বরত নুরে আলম মিনা।

তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে মিনা বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকায় একটি লাশ পড়ে আছে বলে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে রাউজান থানা পুলিশ সেটা উদ্ধার করেছিল। পরে পরিবারের সদস্যরা গিয়ে লাশটি শনাক্ত করেন। এরপর পুলিশ সুরতহাল, ময়নাতদন্তসহ আইনগত যত প্রক্রিয়া  সম্পন্ন করে। পাঁচবছর পর এসে পুলিশের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ তোলা হচ্ছে, এটি বোধগম্য নয়।’

‘পুলিশের দায়িত্ব ছিল লাশ উদ্ধার এবং পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। পুলিশ সেটিই করেছে। এর বাইরে কোনোকিছুর সঙ্গে তৎকালীন পুলিশ সুপার হিসেবে আমার কিংবা লোকাল থানা পুলিশ সদস্যদের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। চট্টগ্রাম শহরের বাসা থেকে তাকে তুলে আনার যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি সবৈব মিথ্যা। রাউজান থানা পুলিশ সেদিন এ ধরনের কোনো অভিযান শহরে পরিচালনা করেনি। তাকে হেফাজতে রেখে নির্যাতন ও হত্যার যে অভিযোগ করা হয়েছে, এটা অসত্য, কাল্পনিক, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।’

বিজ্ঞাপন

নুরে আলম মিনা আরও বলেন, ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পরিকল্পিত অপচেষ্টা কি না, সেটিই এখন প্রশ্ন। তবে এতটুকু বলতে পারি, এই ঘটনার সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ জুলাই নূরে আলম মিনা চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম থেকে বদলি হন।

পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালনকালে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গিবিরোধী ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) পেয়েছিলেন। সেই অভিযানে সীতাকুণ্ডের সেই জঙ্গি আস্তানায় জিম্মি অবস্থা থেকে নারী-শিশু ও বৃদ্ধসহ ২১ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। সুইসাইডাল ভেস্ট শরীরে বেঁধে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে পাঁচ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছিল। পরে ওই আস্তানায় তল্লাশি করে ১০টি গ্রেনেড, ৩টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৩২টি গ্রেনেড তৈরীর ডাইস, ৮টি গ্রেনেড তৈরী ডাইসের ঢাকনাসহ বিপুল বিস্ফোরক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছিল।

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম ওরফে নুরুর লাশ রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ জানিয়েছিল, নুরুর মাথায় গুলি এবং সারাশরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। হাত-পা রশি দিয়ে ও শার্ট দিয়ে চোখ বাধা অবস্থায় লাশ পাওয়া যায়। মুখের ভেতর ওড়না ঢোকানো পাওয়া যায়।

ওইদিন দুপুরে বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া ঠেলারঘাটে কর্ণফুলী নদীর তীরে গিয়ে নুরুর লাশ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী, বোন ও ভগ্নিপতি। তখন পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছিলেন, ২৯ মার্চ রাত ১২টার দিকে সাদা পোশাকের কয়েকজন নুরুকে নগরীর চন্দনপুরা এলাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়।

রাউজানের স্থানীয় রাজনীতিতে নুরু একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ছিলেন। সাকা চৌধুরীর ভাই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী অভিযোগ করেছিলেন, রাউজান থানার নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জাভেদ (শেখ জাভেদ) ছাত্রদল নেতা নুরুকে চন্দনপুরা এলাকার বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে লাশ বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া ঠেলারঘাটে কর্ণফুলী নদীর তীরের পাশে ফেলে দেন।

তবে রাউজান থানা পুলিশ সেসময় চট্টগ্রাম নগরীতে তাদের কোনো অভিযান ছিল না এবং নুরুকে তারা আটক বা গ্রেফতার করেনি বলে জানিয়েছিল।

এ ঘটনায় পাঁচবছর পর দাখিল করা নালিশী মামলার আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা পরিকল্পিতভাবে নুরুল আলম নুরুকে বাসা থেকে তুলে রাউজানের নোয়াপাড়া কলেজ মাঠে নিয়ে রাত ৩টা পর্যন্ত অমানুষিক নির্যাতন করে এবং পরে মাথায় ‍গুলি করে হত্যা করে লাশ বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া ঠেলারঘাটে কর্ণফুলী নদীর তীরে ফেলে দেন।

মামলার আবেদনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৩ (১), ৫ (২), ৪ (১) (ক) ও ১৫ (২) ধারায় অপরাধ আমলে নেয়ার আরজি জানিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়েছেন বাদী।

বৃহস্পতিবার সকালে মামলার শুনানিতে অংশ নেন প্রায় অর্ধশত আইনজীবী, যাদের প্রায় সকলেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

বাদীর আইনজীবী আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় সেলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দলের যেসব নেতাকর্মী পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর শিকার হয়েছে, প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা দায়ের হবে। কেন্দ্রীয় সেলের নির্দেশে নুরুকে হত্যার ঘটনায় কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতা মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলার আবেদন করেছেন। আদালত আবেদনটি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।’

সারাবাংলা/আরডি/একে

ছাত্রদল নেতা হত্যা পুলিশ

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর