‘রাজাকারদের সঙ্গে সরকার গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি খেলছে’
২৯ অক্টোবর ২০২২ ২২:৪৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকার রাজাকার-আলবদরদের সঙ্গে ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ পলিসি খেলছে বলে মন্তব্য করেছেন বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবসার।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর চেরাগি চত্বরে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ৫৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন। উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে কাজী নুরুল আবসার বলেন, ‘বর্তমান সরকার রাজাকার-আলবদর ও তাদের দোসরদের আবার রাস্তায় নামার সুযোগ করে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের চাপে এই সরকার রাজাকার-আলবদরদের সঙ্গে গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি খেলছে। সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, যদি আপনারা আপনাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের চাপে যদি রাজাকার-আলবদরদের রাস্তায় নামার সুযোগ দেয়া অব্যাহত রাখেন, যদি গিভ অ্যান্ড টেক পলিসিতে থাকেন, তাহলে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বসে থাকব না। আমরা মাঠে নামবো। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা মাঠে নামবে।’
উদীচীকে প্রগতির ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্ন কতটুকু অর্জিত হয়েছে, সেটা আজ আমাদের ভেবে দেখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফসল। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলেও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক আন্দোলনেরও প্রয়োজন আছে, কিন্তু যে আন্দোলনের সঙ্গে সংস্কৃতির যোগ থাকে না, সেটা রাজনৈতিক আন্দোলন হয় না, সেটা লুটপাটের আন্দোলনে পরিণত হয়। উদীচী সারা বাংলাদেশে নেতৃস্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন। উদীচীকে প্রগতির ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে।’
সমাবেশে চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা বলেন, ‘আমাদের এই বাংলাদেশ আজ নানা সংকটে জর্জরিত। কিছু দুর্বৃত্ত, লুটেরা-হার্মাদ বাংলাদেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে। তার সাথে আছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, আছে পাকিস্তানপন্থী শক্তি। সংকটের বেড়াজালে আজ বাংলাদেশ নিমজ্জিত। এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই-সংগ্রাম করতে হবে।’
‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে প্রগতির ধারা সেই ধারাটাকে আজ শক্তিশালী লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনে-লড়াইয়ে যারা আছে তাদের যেমন কর্তব্য, তেমনি রাজনৈতিক শক্তি যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আছে, যারা মুক্তিযুদ্ধকে প্রগতির ধারা মনে করে, তাদের এই কঠিন সংগ্রামকে বিবেচনায় নিতে হবে। বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রে যে অন্ধকার বিরাজ করছে, এর বিরুদ্ধে একটি কঠিন লড়াই করতে হবে। এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে প্রগতিবাদী সাংস্কৃতিক শক্তিকে।’
উদীচীর নিরন্তর সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অশোক সাহা বলেন, ‘উদীচী সারা বাংলাদেশে আছে, সারা পৃথিবীতে আছে। জাতীয় এবং জাতীয় সীমানার চৌহদ্দি অতিক্রম করা এমন প্রগতিবাদী সংগঠন বাংলাদেশে আর দ্বিতীয়টি আছে বলে আমার জানা নেই। উদীচী লড়াই করছে সমাজের অচলায়তন ভাঙার জন্য। তিমির হননের নিরন্তর সংগ্রাম করছে উদীচী। আমাদের সমাজের যে রক্ষণশীলতা, পশ্চাদপদতা, তার বিরুদ্ধে উদীচী নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে যে গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছিল ঘাতকদের বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের দালালদের বিরুদ্ধে, সেই গণজাগরণ মঞ্চের লড়াই-সংগ্রামকেও গানের মধ্য দিয়ে উদ্দীপ্ত করে রেখেছিল উদীচীর শিল্পীসংগ্রামীরা।’
শিল্পীদের গণসঙ্গীত ও সংগঠন সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদীচীর ৫৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও জেলা সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়।
উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. চন্দন দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি আব্দুল হালিম দোভাষ, শিক্ষক নেতা সঞ্জীব বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল, চট্টগ্রাম চলচ্চিত্র কেন্দ্রের পরিচালক শৈবাল চৌধুরী, জেলা সিপিবির সদস্য রেখা চৌধুরী, জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সিতারা শামীম, শহীদজায়া মুশতারী শফীর সন্তান মেহরাজ তাহসান শফী, আবৃত্তিশিল্পী প্রণব চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সদস্য গৌরচাঁদ ঠাকুর এবং জেলা শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক শুভ দেবনাথ।
সমাবেশ শেষে নগরীর চেরাগি চত্বর থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
সারাবাংলা/আরডি/একে