Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশি পণ্যে জমজমাট যুব মেলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ নভেম্বর ২০২২ ২০:৫৮

ঢাকা: শতরঞ্জি, নকশিকাঁথা, মনিপুরী পোশাক, এবং হস্তশিল্পের হরেক পণ্যে জমজমাট বাংলাদেশ জাতীয় শিল্পকলা অ্যাকাডেমি প্রাঙ্গণ। সারাদেশ থেকে আসা যুব উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে চলমান যুব মেলা-২০২২ এ দেখা গেল এমন চিত্র।

পহেলা নভেম্বর জাতীয় ‍যুব দিবস উপলক্ষে যুব উন্নয়ন অধিদফতর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এই মেলার আয়োজন করেছে। ২ নভেম্বর শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হবে ৮ নভেম্বর। মেলায় ১০২ টি স্টল রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রঙ-বেরঙের নকশিকাঁথা, নকশি চাদর নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যুবমেলায় অংশ নিতে এসেছেন রাজশাহী নকশিঘরের স্বত্বাধিকারী পারভীন আক্তার। নিজস্ব ডিজাইনে নকশিকাঁথা ও চাদর সেলাই করিয়ে নেন তিনি। তার কারখানার নিয়মিত কর্মী ১০০ জন। কর্মীদের অধিকাংশই দুস্থ নারী। তার দোকানের বিশেষত্ব হিসেবে জানালেন কাঁথা এবং চাদরের জন্য টাঙ্গাইল থেকে বিশেষভাবে কাপড় তৈরি করিয়ে আনেন। তারপর নিজস্ব ডিজাইনে হাতে সেলাই করানো হয় এগুলো। মূলত পাইকারি বিক্রি বেশি হলেও খুচরা বিক্রিও করেন পারভীন। মেলাতেও বেশ বিক্রিবাট্টা হচ্ছে বলে জানালেন সারাবাংলাকে। নকশিকাঁথা ও চাদরের শুরু এক হাজার টাকা থেকে আর সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা। তবে কিছু কিছু এক্সক্লুসিভ কাঁথাও রয়েছে তার দোকানে যেগুলোর দাম আট হাজার টাকা থেকে বারো হাজার টাকার মধ্যে।

কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের মাটি, পানি, আবহাওয়া এবং ওই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাহলে সেটিকে ওই অঞ্চলের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য জিআই হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এমনই একটি জিআই পন্য রংপুরের শতরঞ্জি।

বিজ্ঞাপন

যুব মেলায় শতরঞ্জির পসরা নিয়ে এসেছেন লোকজ চন্দ্র সরকার। ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান রংপুর ক্র্যাফটস নিয়ে প্রচারের জন্য ঢাকায় এসেছেন তিনি। বিদেশের বাজারে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা থাকলে দেশের সব জায়গায় মানুষ এখনও তেমন একটা জানে না এটি সম্পর্কে। দোকানে আসা কয়েকজনের সঙ্গে লোকজ চন্দ্রের কথোপকথনেও সেটি দেখা গেল। ক্রেতারা এসে জিজ্ঞাসা করছেন শতরঞ্জি কি, কীভাবে ব্যবহার করে ইত্যাদি। লোকজ চন্দ্রও তাদেরকে বুঝিয়ে বলছিলেন। জানালেন, নানা রং, ডিজাইন ও মানের বৈচিত্র্যে ভরপুর এই শতরঞ্জিগুলো দেখতে যেমন অভিজাত, তেমনি ব্যাবহার করেও আরাম। এখানে ১৫ বাই ২৩ ইঞ্চি ও ৬ বাই ৯ ফুটের শতরঞ্জি পাওয়া যায়। এগুলোর দাম সর্বনিম্ন ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।

মোহাম্মদপুর থেকে এসেছেন মুনিয়া খানম ববি। পেশায় তিনি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। তার শো-রুমে দেখা গেল আয়ুর্বেদিক প্রসাধনীসহ হাতের কাজের থ্রি-পিস, বিছানার চাদর ইত্যাদি পণ্য। আয়ুর্বেদে ডিগ্রিধারী ববি নিজেই তৈরি করেন এসব প্রাকৃতিক পণ্য। জানালেন, তিনি দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে যুব উন্নয়নে কাজ করেন। ২০১৪ সালে জাতীয় যুব পুরস্কারও পেয়েছিলেন। যুব উন্নয়ন থেকে ৩৮ টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া ববি বর্তমানে যুব উন্নয়নে একজন খন্ডকালীন প্রশিক্ষক হিসেবে ঢাকা জেলা কার্যালয়ে কাজ করেন।

মিলি বুটিকবাড়ির স্বত্বাধিকারী আবিদা সুলতানা মিলি রংপুর থেকে শতরঞ্জি, হাতের কাজের পণ্য, পরিবেশ-বান্ধব পণ্য ইত্যাদি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য তার বুটিকের পণ্য পাটের ব্যাগে দেন। এছাড়াও হোগলাপাতা, নারকেলের ছোবড়া, সুপারির খোলার বাসনপত্র ইত্যাদি। সুপারির খোলা দিয়ে বানানো প্লেটগুলো ছয়মাস থেকে একবছর পর্যন্ত একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে। দেশীয় কাঁচামালের পাশাপাশি তিনি একেকটি পণ্যের পুনব্যবহারে গুরুত্ব দেন। কৃত্রিমভাবে তৈরি বাবুইপাখির বাসা, নারকেলের ছোবড়া দিয়ে গাছের টব ঢেকে রাখার মত পণ্যও রয়েছে তার কাছে। ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে শতরঞ্জি।

মৌলভীবাজার থেকে মনিপুরী শাড়ি, মাফলার, ওড়না নিয়ে এসেছেন রাজু সিংহ। মনিপুরী শাড়িগুলোর দাম শুরু দুই হাজার টাকা থেকে। আর সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। এছাড়াও এখানে ওড়না পাওয়া যাবে ৫০০ টাকায় আর মাফলার ১৫০ করে। রাজু জানালেন মেলায় এসেছেন মূলত পণ্যের প্রচারের জন্য। বিক্রিবাট্টাও ভালো হচ্ছে।

সারাদেশে এসব তাঁতপণ্যের চাহিদা কেমন জানতে চাইলে রাজু জানালেন, ঢাকায় তুলনামূলক চাহিদা বেশি। বরং কর্মীসংকটে চাহিদা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

কর্মীসংকট কেন জানতে চাইলে রাজু বলেন, যারা তাঁত বুনতে পারে এমন ব্যক্তি কমে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম লেখাপড়া শিখে অন্যান্য পেশায় চলে যাওয়ায় তাঁত বোনা শিখছেন না। তবে বর্তমানে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে। যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক তরুণই তাঁতের কাজ করছেন। দশ-বারো বছর আগে মনিপুরী শাড়ি প্রায় বিলুপ্তির পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে তার মতো অনেকেই এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন।

মেলায় আগত দর্শনার্থীদেরও দেখা গেল দোকানে দোকানে ঘুরে দেশি পণ্য দেখছেন। দরদাম করে কিনেও নিচ্ছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এরকম মেলার আয়োজন করলে সবার জন্যই ভালো। তারা যেমন নানা বৈচিত্র্যের দেশি পণ্য কিনতে পারছেন, তেমনি উদ্যোক্তারাও লাভবান হচ্ছেন।

সারাবাংলা/আরএফ/একে

যুবমেলা শিল্পকলা একাডেমি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর