Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মেলেনি ঠিকাদার, থিম্পুতে পেছাচ্ছে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ নভেম্বর ২০২২ ১০:৫২

ফাইল ছবি

ঢাকা: ঠিকাদার না মেলাসহ নানা জটিলতায় সময়ের মধ্যে শেষ হয়নি ভুটানে চ্যান্সারি কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ। ফলে বাড়ছে ব্যয় ও মেয়াদ। এজন্য ‘ভুটানের থিম্পুতে বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স এবং রাষ্ট্রদূতের বাসভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়তি হচ্ছে প্রকল্পটি। এটির মূল ব্যয় ছিল ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সেখান থেকে ২১ কোটি ১১ লাখ টাকা বেড়ে মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭০ কোটি ৫৭ লাখ  টাকা। একইসঙ্গে আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ছে।

বিজ্ঞাপন

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২৮ সেপ্টম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এছাড়া গত ১৩ অক্টোবর জারি করা হয় ওই সভার কার্যবিবরণী। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিৎ কর্মকার। সভা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পিইসি সভায় অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানায়, পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান (পরিবহন সমন্বয়) ইয়াসমিন পারভীন সভায় বলেন, প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নে মোট ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়। ২০১৮ সালের এপ্রিল হতে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৩ মে পরিকল্পনামন্ত্রী অনুমোদন দেন এটির। পরবর্তীতে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া এটির মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকল্প ব্যয় ৭০ কোটি ৫৭ লাখ টাকায় প্রাক্কলন করে অর্থাৎ অনুমোদিত ব্যয় হতে ২১ কোটি ১১ লাখ টাকা (৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ) বৃদ্ধি করে সংশোধনী প্রস্তাব করেছে। একইসঙ্গে বাস্তবায়ন মেয়দি ২০১৮ সালের এপ্রিল হতে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে মোট ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্ত আছে।

সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের তারিখ থেকে ৪ বছরেরও বেশি সময় পার হওয়ার পর বর্তমানে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এর জবাবে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর পর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন প্রক্রিয়ায় প্রায় ১১ মাস পার হয়। এছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের পূর্ত কাজের জন্য দুইবার দরপত্র আহবান করা সত্ত্বেও কোনো দরপত্র দাখিল না হওয়ায় অনেক সময় অপচয় হয়েছে। উভয় দরপত্রের ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবিত ব্যয় অনুমোদিত ডিপিপির প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে অত্যধিক থাকায় পুনরায় দরপত্র আহবান করা হয় এবং বিষয়টি চলতি বছরের ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত স্টিয়ারিং কমিটির সভায় উপস্থাপিত হলে প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য বর্তমানে বাজারদরের ভিত্তিতে নির্মাণ ব্যয় পুনরায় প্রাক্কলন করে ডিপিপি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে ‘

পিইসি সভায় সংশোধিত প্রকল্পে ইলেক্ট্রিফিকেশন এবং ভৌত নির্মাণ বাবদ ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধির বিষয়ে সভায় জানতে চাওয়া হয়। এর জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিদ্যমান ডিপিপিতে ইলেক্ট্রিফিকেশন খাতে মাত্র ৪ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল এবং এ প্রাক্কলনে হিটিং সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা ভুটানের মতো শীত প্রধান দেশের জন্য অপরিহার্য। বর্তমান বাজার দরের ভিত্তিতে এ খাতে পুনরায় প্রাক্কলিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা অনুমোদিত ব্যয় থেকে ১৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বেশি ‘

ভৌত নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভৌত কাঠামোর পরিমাণ বৃদ্ধি, ভুটানের হালনাগাদ রেট শিডিউল অনুসারে ব্যয় পুনরায় প্রাক্কলন এবং ভৌত খাতে কিছু নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করায় সংশোধিত প্রস্তাবে এ খাতে ৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।’

এ পর্যায়ে সভায় অংশ নেওয়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বলেন, ইলেক্ট্রিফিকেশন আইটেমগুলোর স্পেসিফিকেশন এবং নতুন পূর্ত ডিজাইনের জন্য গণপূর্ত অধিদফতরের অনাপত্তি নেওয়া আবশ্যক। এছাড়া পূর্ত ডিজাইন পর্যালোচনার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করে এর ব্যয় নির্ধারণ করা উচিত হবে।’

সভার সভাপতি সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, আন্তঃমন্ত্রণালয় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির গণপূর্ত অধিদফতরের এবং স্থাপত্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা সদস্য প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে পূর্ত ডিজাইন চূড়ান্ত অনুযায়ী ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। একইসঙ্গে অপরিহার্য অঙ্গ ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ বাদ দিয়ে ইলেক্ট্রিফিকেশন খাতের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।’

ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্ম প্রধান বলেন, ‘সম্মানী (পিইসি, পিআইসি ইত্যাদি) খাতে এ যাবৎ যে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে তার অতিরিক্ত কোনো অর্থ ব্যয় করা সমীচীন হবে না। যেহেতু অর্থমন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সম্মানী খাতে বরাদ্দ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু মূল প্রকল্পে আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ (আর্থিক) করা হয়েছিল। ফলে সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা অনুযায়ী ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট রেট ধরে আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করে পুনর্গঠিত আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।’

সভায় সুপারিশ দিয়ে বলা হয়, আন্তঃমন্ত্রণালয় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির গণপূর্ত অধিদফতর এবং স্থাপত্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট দু’জন সদস্য প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভৌত নির্মাণের ডিজাইন এবং অঙ্গভিত্তিক ব্যয় পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দেবেন। এই রিপোর্টে ভিত্তিতে পূর্ত কাজ এবং ইলেক্ট্রিফিকেশনের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ এবং ইলেক্ট্রিফিকেশনের ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য অঙ্গ ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ বাদ দিয়ে ডিপিপি পুনর্গঠন করতে হবে।

পরামর্শক সেবার ক্ষেত্রে মূল ডিপিপি অনুযায়ী অনুমোদিত জনমাস এবং প্রাক্কলিত ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে ডিপিপি পুনর্গঠন করতে হবে। পরামর্শক সেবার বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন এবং টিওআর পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে বলেও ওই সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/এনএস

চ্যান্সারি কমপ্লেক্স থিম্পু বাংলাদেশ চ্যান্সারি কমপ্লেক্স ভুটান

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর