লাইটারেজ জাহাজ শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে পণ্য পরিবহন বন্ধ
১১ নভেম্বর ২০২২ ১৪:১৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান ও পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছে লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন। এর ফলে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ভোর থেকে লাইটারেজ জাহাজের শ্রমিকরা কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট এবং বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য তোলা-নামানো বন্ধ রেখেছেন।
চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙর থেকে সারাদেশের নৌরুটে অন্তত হাজার লাইটারেজ জাহাজ পণ্য আনা-নেওয়া করে। এসব জাহাজে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। আমদানি করা ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন খোলা পণ্য নিয়ে বর্হিনোঙ্গরে আসা মাদার ভ্যাসেল (বড় জাহাজে) থেকে পণ্য খালাস হয় লাইটারেজ জাহাজে। এরপর নৌরুটে বিভিন্ন গন্তব্যে সেসব পণ্য নিয়ে যায় লাইটারেজ জাহাজগুলো।
আকস্মিক লাগাতার কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শেখ মোহাম্মদ ঈছা মিয়া সারাবাংলাকে জানান, গতবছর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন চরপাড়া এলাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি ঘাট নির্মাণ করে। শ্রমিকরা সেই ঘাট ব্যবহার করতো। কিন্তু হঠাৎ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ সেটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়। তারা ঘাট ব্যবহারে দশ টাকা মাশুল নির্ধারণ করে।
এ নিয়ে ইজারাদারের লোকজনের সঙ্গে শ্রমিকদের প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। গত ৩ নভেম্বর শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পতেঙ্গা থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেয়। এ অবস্থায় শ্রমিকরা চরপাড়া ঘাট ত্যাগ করে আনোয়ারায় পারকি সমুদ্র সৈকতসংলগ্ন এলাকা থেকে লাইটারেজ জাহাজে ওঠানামা শুরু করেন।
কিন্তু সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে পারকি থেকে জাহাজে ওঠানামা বন্ধ করে দেন। এরপর শ্রমিকরা চাইনিজ ঘাট এলাকা থেকেও জাহাজে ওঠানামার চেষ্টা করলে বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানেও অভিযান পরিচালনা করে।
ঈছা মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষ-পুলিশ শ্রমিকদের মানুষ মনে করছে না। ইজারাদারদের মাধ্যমে শ্রমিকদের জিম্মি করে ফেলেছে। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এজন্য আমরা বন্দরের চেয়ারম্যান ও পতেঙ্গা থানার ওসি প্রত্যাহার, চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছি। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বিষয়টি অনভিপ্রেত উল্লেখ করে বলেন, ‘শ্রমিকদের সুবিধার জন্যই বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘাট তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু ঘাটটি তো কাউকে না কাউকে পরিচালনা করতে হবে। সবদিক বিবেচনা করে শ্রমিকদের থেকে শুধুমাত্র দশ টাকা মাশুল নেওয়ার শর্তে বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘাটটি ইজারা দিয়েছে। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি বা অনভিপ্রেত ঘটনার কোনো অবকাশ নেই। শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমরা বিষয়টি সমাধান করব।’
সারাবাংলা/আরডি/এমও